কোকিল কণ্ঠি লতার প্রয়াণ দিবসে রোজদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য

Spread the love

রোজদিন ডেস্ক, কলকাতা:- আট দশকের বেশি সময় ধরে গানের জগতে ছড়িয়েছেন মণিমুক্তো। কেউ তাঁকে ডাকেন ‘কুইন অফ মেলোডি’ নামে আবার কেউ বলেন ‘নাইটেঙ্গেল অফ ইন্ডিয়া’। কেউ আবার বলেন ‘ভয়েস অফ মিলেনিয়াম’। তিনি লতা মঙ্গেশকর। ২০২২ সালে ৯২ বছর বয়সে আজকের দিনেই অর্থাৎ ৬ ফেব্রুয়ারি শান্তিলোকে পাড়ি দেন এই ‘কোকিল কণ্ঠী’ গায়িকা ৷

৩৬টি ভাষায় গান গেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর। সম্মানিত হয়েছেন ভারতরত্ন ও দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে। ঝুলিতে রয়েছে তিনটি জাতীয় পুরস্কারও। এহেন শিল্পী যেন গানে গানেই বলে গিয়েছেন ‘মেরি আওয়াজ হি পহেচান হ্যায়…’। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না, গান গাওয়ার পাশাপাশি সঙ্গীত পরিচালনাও করেছেন এই স্বনামধন্য গায়িকা।
১৯৫৫ সালে লতা মঙ্গেশকর প্রথমবার মিউজিক কম্পোজ করেন। মারাঠি ছবি ‘রাম রাম পাভহানে’-তে সঙ্গীত পরিচালনা করেন লতা। তালিকায় রয়েছে আরও বেশ কিছু সিনেমা। ১৯৬৩ সালে মুক্তি পায় ‘মারাঠা তিতুকা মেলভাভা’। গানে সুর দেন লতা। সেই বছরই মুক্তি পায় ভাজি পেনধরকর পরিচালিত ‘মোহিত্যাঞ্চি মঞ্জুলা’। মারাঠি এই ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেন লতা মঙ্গেশকর।
১৯৬৫ সালে মুক্তি পায় ‘সাধি মানসে’ ও ১৯৬৯ সালে মুক্তি পায় ‘তামবাড়ি মাটি’, দু’টি ছবিতেই সঙ্গীত পরিচালনা করেন গায়িকা লতা। ‘সাধি মানসে’ ছবির জন্য মহারাষ্ট্র স্টেট গভর্মেন্ট বেস্ট মিউজিক ডিরেক্টর অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত হন লতা। ‘ঐরানিচ্য দেব তুলা’-র ঝুলিতে আসে সেরা গানের পুরস্কার।
অন্যদিকে, প্রতিভাবান লতার আরও একটি গুণ ছিল। তা হল তিনি ছবি প্রযোজনাও করেছেন। মোট চারটে সিনেমার প্রযোজক ছিলেন এই গায়িকা। তারমধ্যে রয়েছে একটি মারাঠি ও তিনটে হিন্দি সিনেমা। ১৯৫৩ সালে মুক্তি পায় ‘ভাদাল’। এটি মারাঠি সিনেমা। প্রথমবার প্রযোজক হিসাবে হাতেখড়ি লতার। একই বছরে সি রামাচন্দ্রার সঙ্গে মিলিত হয়ে আরও একটি ছবি প্রযোজনা করেন লতা, নাম ‘ঝাঞ্ঝর’। এর দু’বছর পর ১৯৫৫ সালে মুক্তি পায় ‘কাঞ্চন গঙ্গা’। এই ছবির প্রযোজক ছিলেন গায়িকা। এরপর দীর্ঘ বিরতি।
১৯৯০ সালে তাঁর প্রযোজিত শেষ ছবি ‘লেকিন’। লতার সঙ্গে সহ-প্রযোজক হিসাবে ছিলেন লতার ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর। গুলজার পরিচালিত এই ছবি ছিল ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ বাংলা সিনেমার হিন্দি রিমেক। ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ গল্পটি লিখেছেন রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর। মুখ্যচরিত্রে দেখা যায় বিনোদ খান্না, ডিম্পল কাপাডিয়া, আমজাদ খান, অলোকনাথ ও বীনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। অতিথি শিল্পী হিসাবে অভিনয় করেন হেমা মালিনী।
প্রসঙ্গত, ছবির তৈরির প্রায় চারবছর পর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘লেকিন’ সিনেমাটি। দর্শক ও সমালোচকদের নজর কাড়ে অভিনয় ও গল্প বলার ধরন। প্রশংসিত হয় ডিম্পলের অভিনয়। ছবিতে হৃদয়নাথের মিউজিক কম্পোজিশনে ও লতার স্বরে ‘ইয়ারা সিলি সিলি’ গান ছুঁয়ে যায় দর্শকদের মন। ৩৮তম জাতীয় পুরস্কার অনুষ্ঠানে ‘লেকিন’ ছবির ঝুলিতে আসে ৫টা অ্যাওয়ার্ড। সেরা মিউজিক পরিচালক হিসাবে জাতীয় পুরস্কার পান হৃদয়নাথ। সেরা মহিলা প্লেব্যাক গায়িকার পুরস্কার যায় লতার ঝুলিতে। সেরা গীতিকারের পুরস্কার পান গুলজার।
এরপর আর কোনও ছবি প্রযোজনা করেননি লতা মঙ্গেশকর। ব্যস্ত ছিলেন নিজের গান নিয়েই।
এতো ছিলো তাঁর গান গাওয়ার বাইরের প্রতিভা। কিন্তু লতা মঙ্গেশকরকে শ্রদ্ধা জানাতে গেলে তাঁর কিছু গানের কথা উল্লেখ না করলেই নয়।
যেমন, নাম গুম জায়েগা…এর মত একাধিক গানে ছড়িয়ে গেছেন মুক্তা-মানিক্য। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরী, নওশাদ, শঙ্কর-জয়কিষাণ, এস.ডি বর্মনের মতো একাধিক শিল্পীর সঙ্গে জুটি বেঁধে উপহার দিয়েছেন না-ভোলার মতো গান। তেমনই তিনি সুরকার মদন মোহনের জুটি বেঁধে যে সকল গান উপহার দিয়েছেন তা আজও গুনগুন করে সকলেই। তেমনই 1985 সালে গিরীশ কারনাড পরিচালিত ‘উৎসব’ ছবিতে দুই বোনের কন্ঠে ‘মন কিঁউ বহেকা রে বহেকা’ আজও মাতিয়ে দেয় শ্রোতাদের। সুরেলা সফরে একাধিকবার শঙ্কর-জয়কিষাণ লতা মঙ্গেশকর-আশা ভোঁসলে গান করিয়েছেন একসঙ্গে। ‘চোরিচোরি’ ছবির ‘মন ভাবন কে ঘর’ থেকে শুরু করে ‘জনবার’ ছবিতে ‘আঁখো আঁখো মে’ গানে শ্রোতারা পেয়েছেন লতা-আশা ডুয়েটকে।
২০২২ সালের ৮ জানুয়ারি তিনি কোভিড ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তাঁকে ভর্তি করা হয় বিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হলে রাখা হয় ভেন্টিলেশনে। এরপর ৬ ফেব্রুয়ারী মাল্টিপল অর্গান ডিসফাংশন সিনড্রোমে প্রয়াত হন ভারত তথা বিশ্বের সেরা গায়িকা লতা মঙ্গেশকর। রোজদিন পরিবারের তরফ আপনাকে জানাই প্রণাম ও শ্রদ্ধা। আপনি যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন ‘লতাজী’…

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*