অভাব? নাকি মানসিক টানাপোড়েন? নাকি খুন? গড়িয়ায় বাবা-ছেলের আত্মহত্যার ঘটনায় এই তিনটে দিকই ভাবাচ্ছে পুলিশকে।
শনিবার গড়িয়ার নবশ্রী বাজার শিবমন্দির এলাকায় বন্ধ ঘরের জানলা দিয়ে ভিতরে তাকিয়ে আঁতকে উঠেছিলেন সুব্রত বাবুর প্রতিবেশীরা। খাটের উপর গলা কাটা অবস্থায় পড়ে আছে বছর এগারোর কিশোর গোপাল। রক্তে ভেসে যাচ্ছে বিছানা। পাখার সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছেন বাবা সুব্রত দাস।
পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে মৃতদেহ দুটি উদ্ধার করেন। পাওয়া যায় একটা সুইসাইড নোটও। তা থেকেই জানা গিয়েছে, আর্থিক অনটনের কারণ ছেলেকে খুন করে আত্মঘাতী হয়েছেন বাবা। এই ঘটনার জন্যে কেউ দায়ী নয় বলেও তাতে উল্লেখ রয়েছে।
সোনারপুর থানার পুলিশ সূত্রে খবর, এগারো বছরের ওই কিশোরের নাম গোপাল দাস। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত সে। তার বাবার নাম সুব্রত দাস। তিনি কাজকর্ম বিশেষ কিছু করতেন না। কয়েক বছর আগে পারিবারিক অশান্তির জেরে স্ত্রী ঘর ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তার পর থেকেই মানসিক অবসাদেও ভুগছিলেন সুব্রত। সম্প্রতি বাড়ি বাড়ি রান্নার গ্যাস পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছিলেন। ছেলের পড়াশোনার খরচ, সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছিল গড়িয়ার ওই বাসিন্দাকে। সে কারণেই কি এ ভাবে ছেলেকে খুন করে নিজে আত্মঘাতী হয়েছেন গোপাল?
স্থানীয় বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, বছর পাঁচেক আগে সুব্রতবাবুর স্ত্রী অন্য এক জনকে বিয়ে করে বাড়ি থেকে চলে যান। এই ঘটনায় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন সুব্রতবাবু। পড়শিরা জানান, স্ত্রীকে খুবই ভালবাসতেন তিনি। সুব্রতবাবু মাঝেমাঝে গোপালকে নিয়ে প্রাক্তন স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যেতেন। কিন্তু পড়শিদের অভিযোগ, ওই মহিলার সঙ্গে প্রাক্তন স্বামী ও ছেলের বিশেষ বনিবনা ছিল না। সেই কারণে গোপালও সারাদিন মনমরা হয়ে থাকত।
এরই পাশাপাশি পড়শিরা জানিয়েছেন, সুব্রতবাবুর কিছু টাকা ধার ছিল। তাঁর বাড়িতে মাঝেমধ্যেই পাওনাদারেরা আসতেন। এ নিয়েও তিনি কিছুটা মানসিক চাপে ছিলেন। তবে কি খুন? বারুইপুর জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, সুইসাইড নোটের সত্যতা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। এটা নিছক আত্মহত্যা না খুন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
শুধুই কী অভাব, নাকি অন্য কোনও কারণ আছে এই জোড়া আত্মহত্যার পেছনে তা ভাবাচ্ছে পুলিশকে। প্রতিবেশীরা বলেছেন, কোনও রকমের শব্দ তাঁরা পাননি। পুলিশের বক্তব্য, তাহলে কি গোপালকে গলা কেটে খুন করার সময় জ্ঞান ছিল না তার? নইলে ওইটুকু ছেলে ভয় পেয়ে একটু চিৎকার তো করবেই। দেহ দুটি ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলে তবেই কিছুটা পরিষ্কার হবে বলে আশা পুলিশের। সুব্রত বাবুর স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে পুলিশ। সম্প্রতি এমন কিছু হয়েছিল কিনা, যাতে ছেলেকে মেরে বাবা আত্মঘাতী হলেন, সেই বিষয়েও জেরা করতে চায় সোনারপুর থানার পুলিশ।
Be the first to comment