নেট দিতে আসা মুসলিম পরীক্ষার্থীকে আটকে দেওয়া হল এক্সাম হলের মুখেই। বলা হল তাঁর মাথার হিজাব খুলতে। রাজি না হওয়ায় সরাসরি নির্দেশ, হিজাব না খুললে পরীক্ষায় তিনি বসতে পারবেন না। বৃহস্পতিবার গোয়ার পানজিমে নেট পরীক্ষা দিতে আসেন সফিনা খান সৌদাগার। অভিযোগ, হিজাব পড়েছেন বলে পরীক্ষা হলে তাঁকে ঢুকতেই দেননি পরীক্ষকরা। অনেকক্ষণ তর্ক চলার পর বাধ্য হয়ে ফিরে যেতে হয় সফিনাকে।
এই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে ইউজিসি বা ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ড কমিশন। কারণ, নেট পরীক্ষা ইউজিসি-র আওতাভুক্ত। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, নেট পরীক্ষায় কোনওরকম ড্রেস কোডের যখন উল্লেখ নেই, তাহলে কেন মহিলাকে হিজাব খুলতে বলা হল। সফিনা জানাচ্ছেন, নেট পরীক্ষার ফর্মেও কোনওরকম ড্রেস কোডের উল্লেখ থাকে না। কোখাও লেখা ছিল না হিজাব পড়া মহিলা পরীক্ষা দিতে পারবেন না। পরীক্ষকদেরও সেদিন এই কথাগুলো বলেছিলেন সফিনা। কিন্তু তাঁদের রাজি করানো যায়নি বলে অভিযোগ।
সফিনার ঘটনায় নেট কর্তৃপক্ষের যুক্তি, সুরক্ষার উপর নজর দিতেই হিজাব বা মাথায় কোনও স্কার্ফ পড়ে পরীক্ষা দেওয়া নিষেধ। শুধুই হিজাব নয়, কোনওরকম গয়না পড়েও পরীক্ষা হলে ঢোকা যাবে না বলে জানিয়েছেন তাঁরা। সেক্ষেত্রে বহু বিবাহিত মহিলা পরীক্ষার্থীর গলা থেকে মঙ্গলসূত্রও খোলা হয়েছে বলে তাঁদের দাবি। পরীক্ষা হলে টুগলি রুখতেই উচ্চতর কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ ইউজিসি এই নিয়ম জারি করেছে। যা শুধুই মেনে চলছেন পরীক্ষকরা।
ইউজিসি-র তরফেও ড্রেস কোড সংক্রান্ত লিখিত কোনও নিয়ম নেই বলে জানানো হয়েছে। তবে তাঁরা জানান, নেট পরীক্ষাকে স্বচ্ছ রাখতে অলিখিত কিছু নিয়ম মেনে চলা হয়। সেখানে মোবাইল ফোন,গয়না, স্কার্ফ, ওড়না সহ বেশ কয়েকটি জিনিস পরীক্ষা হলে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় ইউজিসি। অবশ্য সফিনার দাবি, নিরাপত্তার নামে তাঁকে রীতিমত হেনস্থা করা হয়েছে। আইডি কার্ডের ছবির সঙ্গে তাঁর মুখের মিল আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে সফিনাকে তাঁর কান দেখাতে বলা হয়। এতেও রাজিও হন তিনি। কিন্ত, ইসলাম ধর্মবলম্বী হওয়ায় সবার সামনে হিজাব খুলে কান দেখাতে চাননি। ওয়াশ রুমে গিয়ে হিজাব খুলতে চান সফিনা। তাতেও পরীক্ষকরা রাজি হননি বলে অভিযোগ। তখনই তাঁরা জানান, হিজাব পড়ে পরীক্ষা দিতে পারবেন না তিনি।
অনেক্ষণ তর্ক চলার পর এক মহিলা পরীক্ষকও সফিনাকে একই কথা বলেন। বাধ্য হয়েই নিজের ধর্মকেই মেনে চলেন সফিনা। বেরিয়ে আসেন পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে।
এই বছরের মতো নেট পরীক্ষা আর দেওয়া হবে না সফিনার। ইউজিসি কর্তৃপক্ষ যদিও খতিয়ে দেখছে গোটা বিষয়। তবে নেট পরীক্ষার সুরক্ষায় কোনও ধার্মিক নিয়মই গুরুত্ব পাবে না বলে জানিয়েছে ইউজিসি।
Be the first to comment