আন্তর্জাতিক সোনা পাচার কাণ্ডে বড়সড় সাফল্য পেল সিআইডি, রাজস্থান থেকে ধরা পড়লো ২ পাচারকারী

Spread the love
রাঘব বোয়ালরা ধরা পড়েছিল আগেই। এ বার জালে জড়াল চুনোপুঁটিরা।  আন্তর্জাতিক সোনা পাচার কাণ্ডে বড়সড় সাফল্য পেল সিআইডি। দেড় কেজি সোনা ও সুইফ্ট ডিজায়ার গাড়ি-সহ রাজস্থান থেকে ধরা পড়ল আরও দুই পাচারকারী।
ধৃতদের নাম হরিশকুমার শর্মা ও ইন্দ্রজিৎ সিংহ। বাড়ি রাজস্থানের শ্রীগঙ্গানর জেলার জাওয়ার নগর। দু’জনের কাছ থেকে একটি এক কেজির ও একটি ৫০০ গ্রামের সোনার বার উদ্ধার হয়েছে।
গত কয়েক মাস ধরেই ভুটান সীমান্ত দিয়ে প্রচুর পরিমাণে বেআইনি সোনা ঢুকছিল এই রাজ্যে। কেন্দ্রীয় শুল্ক দফতর (ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স) উত্তরবঙ্গের একাধিক জায়গায় হানা দেয়। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের থেকে পাওয়া সূ্ত্র ধরেই তদন্তে নামে রাজ্য সিআইডি। সোনা আত্মসাৎ করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় আলিপুরদুয়ার জেলার জয়গাঁ-এর এসডিপিও-সহ তিন পুলিশ অফিসার এবং সেনার  লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও তাঁর সহযোগী জওয়ানকে।
ধরপাকড়ের পরেও সোনা পাচার অভিযানে লাগাম পরানো যায়নি। গোয়েন্দারা জানতে পারেন ভুটান থেকে গোপনে সীমান্ত পার করে সোনা ঢুকছে ভারতে। পাচারকারীদের ধরতে বেশ নাটকীয় ভাবেই জাল বিছায় সিআইডি অফিসাররা। সীমান্তের সব সিসিটিভি ফুটেজে নজর রাখা শুরু হয়। তদন্তকারীরা দেখেন, রাজস্থানের নম্বর প্লেট লাগানো একটি সুইফ্ট ডিজায়ার গাড়ি প্রায়ই সীমান্ত পারাপার করে। গাড়িটিকে চিহ্নিত করে তার মালিকের নাম ও ঠিকানা বার হয়। সেখান থেকেই হরিশকুমার ও ইন্দ্রজিতের সন্ধান পায় পুলিশ। 
পাচারকারীদের গতিবিধির উপর নজর রাখতে গিয়েই সিআইডি জানতে পারে ভুটান থেকে ২৫ কিলোগ্রামের সোনার বাট নিয়ে ভারতে ঢুকেছে দু’জন। তার মধ্যে ১৫ কিলোগ্রাম সোনা তারা নিজেদের হেফাজতে রেখেছে। এর পরের ঘটনা পুরোপুরি সিনেমার মতোই। দুই পাচারকারীর গোপন ডেরায় ক্রেতা সেজে হানা দেন দুঁদে পুলিশ কর্তারা। নানা কথার পর সোনা নিয়ে দরদামও হয়। শেষে পুলিশের কাছে সবকিছু স্বীকার করে দু’জন। স্থানীয় আদালতে তোলার পর ট্রানজিট রিম্যান্ডে ধৃতদের জলপাইগুড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। আগামিকাল তাদের জলপাইগুড়ি আদালতে তোলা হবে।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর সোনা পাচার কাণ্ডের তদন্তে নামে সিআইডির পাঁচ সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল। জানা যায়,  প্রায় ২৮ কোটি টাকার সোনা ভুটান থেকে এ দেশে ঢুকেছে। পাচারকারীদের উপর নজর রাখতে গিয়েই সিআইডির আধিকারিকরা জানতে পারেন, পাচার করার জন্য আনা সোনা বাজেয়াপ্ত করেছে রাজ্য পুলিশের এক আধিকারিক। সরকারি ভাবে সেই সোনা বাজেয়াপ্ত দেখানো হয়নি। সেখানেই সন্দেহ হয় সিআইডি আধিকারিকদের। তদন্ত শুরু হওয়ার পর ধরা পড়েন  জয়গাঁ-এর এসডিপিও অনিরুদ্ধ ঠাকুর। অভিযোগ, গোটা প্রক্রিয়াতেই তাঁর সঙ্গী ছিলেন বারোবিষা থানার ওসি কমলেন্দ্র নারায়ণ। তাঁদের গতিবিধির উপর নজর রাখতে গিয়েই সিআইডি জানতে পারে ওই ২৮ কোটি টাকা মূল্যের সোনা পাচারকারীদের থেকে বাজেয়াপ্ত করে আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছিলেন এই দু’জন।
অনিরুদ্ধ এবং কমলেন্দ্রকে জেরা করে জানা যায় গোটা চক্রে জড়িত আরও অনেকে। উঠে আসে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদ মর্যাদার সেনা আধিকারিক পবন ব্রহ্ম এবং সেনা জওয়ান দশরথ সিংহের নাম।  দু’জনেই সেনার গোয়েন্দা বিভাগের কর্মী এবং  হাসিমারা সেনা ছাউনিতে কর্মরত। হাসিমারা থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সত্যেন্দ্র নাথ রায়কেও গ্রেফতার করা হয় সোনা পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে। সিআইডি আধিকারিকদের সন্দেহ, আরও বেশ কিছু সেনা ও পুলিশ আধিকারিক এই সোনা পাচার চক্রে যুক্ত। ধৃতদের জেরা করে তাঁদেরই হদিশ চালানো হচ্ছে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*