রাষ্ট্রপতি সম্মান পাচ্ছেন গোবিন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমিতাভ মিশ্র, কেন জেনে নিন!

Spread the love
এমন স্কুলের কথা গল্প-সিনেমাতেই শোনা যায়। অথবা লাদাখে গেলে ইঞ্জিনিয়ার ও শিক্ষাবিদ সোনম ওয়াংচুকের স্কুলে এমন নজির মেলে। কিন্তু, খাস বাংলার প্রত্যন্ত এলাকায় এমন একটি স্কুলের খোঁজ পেয়ে তাজ্জব হয়ে গিয়েছিল ইউনিসেফও। স্কুলটি নিয়ে তথ্যচিত্রও তৈরি করে তারা।
কী রয়েছে এই স্কুলে? সরকারি প্রাইমারি স্কুল মানেই মানুষের ধারণা শিক্ষকেরা এখানে শুধু হাজিরা দিতে আসেন। আর ছাত্রছাত্রীরা আসে মিড-ডে মিল খেতে। তার একমাত্র কারণ স্কুলগুলির পরিকাঠামোগত ক্রুটি। তবে, ব্যতিক্রমও রয়েছে। তারই উদাহরণ পুরুলিয়া জেলার গোবিন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর যিনি এই ব্যতিক্রমের নেপথ্যে তিনি এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতাভ মিশ্র। তাঁকে রাষ্ট্রপতি সম্মান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
আদিবাসী প্রধান গ্রাম গোবিন্দপুরের স্কুলটিতে আগে ছিল টালির চাল। খাতায় নাম থাকলেও স্কুলে আসত গুটিকয়েক পড়ুয়া। বছর বারো আগে স্কুলের প্রধানশিক্ষক অমিতাভ মিশ্র সেই ছবিটা বদলানো শুরু করেন। স্কুলের চারদিকে বাগান ও পরিবেশ দেখলে মনে হবে কোনও আশ্রমে চলে এসেছেন। চারপাশে মনীষীদের মূর্তি, বাণী লেখা রয়েছে।
বাজারে কেনা সবজিতে নয়, স্কুলের বাগানে উৎপাদিত আনাজেই চলে মিড-ডে মিলের রান্না। মেশিন বসিয়ে পরিশ্রুত পানীয় জল খায় পড়ুয়ারা। আকাশের গ্রহ-তারা চেনাতে রয়েছে দূরবীক্ষণ যন্ত্র। জৈব সারও তৈরি করে পড়ুয়ারা। পড়াশোনার মান যথেষ্টই ভাল। এই স্কুলের পড়ুয়ারা বাড়িতে চাপ দিয়ে শৌচাগারও তৈরি করিয়েছে।
গত বছর ইউনিসেফ এই স্কুলের উপর একটি তথ্যচিত্র তৈরি করে গেছে। গোবিন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ‘শিশু মিত্র’, ‘নির্মল বিদ্যালয়’ ও ‘যামিনী রায়’ প্রভৃতি রাজ্য সরকারের নানা পুরস্কার পেয়েছে ইতিমধ্যেই। সম্প্রতি, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘স্বচ্ছ বিদ্যালয় পুরস্কার’ও দেওয়া হয়েছে স্কুলটিকে।সাধারণত দেখা যায়, পুরস্কার পাওয়ার পরে সেই স্কুল আর ধারাবাহিকতা বজায় রাখে না। তবে, এই স্কুলটি শুধু তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে তাই নয়, পড়ুয়ারা বাড়িতেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে কি না, সেটাও নজরে রাখেন শিক্ষকেরা।
বাংলার গ্রামগুলিতে শিক্ষা ব্যবস্থার মান নিয়ে নানারকম প্রশ্ন ওঠে। দোষ দেওয়া হয় সিস্টেমকে। কিন্তু, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে এসে শিক্ষা তথা পরিকাঠামোর মান উন্নয়নের প্রচেষ্টা খুব কম জনের মধ্যেই দেখা যায়। যে সাহসটা দেখিয়েছেন অমিতাভবাবু। বাংলার আরও অনেক শিক্ষক এ ভাবেই এগিয়ে এলে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাই উন্নতির শিখরে উঠবে। কুসংস্কার কমবে, পরিবর্তন আসবে মানুষের মধ্যেও।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*