
রোজদিন ডেস্ক, কলকাতা:- গত ম্যাচে পাঞ্জাবের কাছে নাস্তানাবুদ হওয়ার পর অজিঙ্ক রাহানেদের আত্মবিশ্বাস তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। সোমসন্ধ্যায় ঘরের মাঠে সেই ছবিটাই আরও স্পষ্ট হয়ে ধরা দিল। প্লে অফের পথ চওড়া করতে এদিন মূল্যবান ২টো পয়েন্ট ঝুলিতে ভরা ছিল অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু সে লক্ষ্যে আর পৌঁছনো হল না। ইডেন গার্ডেন্সে রীতিমতো দাপটের সঙ্গে কেকেআরকে মাটি ধরাল গুজরাট টাইটান্স। আর এই হার বেশ কিছু প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল নাইট শিবিরকে। ব্যর্থ হলো রাহানে-রঘুবংশীর লড়াকু ইনিংস। প্রথমে ব্যাট করে ১৯৮ রান তোলে গুজরাট। জবাবে ৮ উইকেটে ১৫৯ রানে থামল কলকাতার ইনিংস।
টসে জিতে এদিন প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নাইট অধিনায়ক রাহানে জানান, প্রথম একাদশে জোড়া বদলের কথা। ব্যাট হাতে সেভাবে জ্বলে উঠতে না পারায় সাত ম্যাচ পর কুইন্টন ডি’কককে বসিয়ে দলে নেওয়া হয় গুরবাজকে। কিন্তু চলতি আইপিএলে প্রথমবার নেমে গিলের দলের পেসের সামনে টিকতেই পারলেন না তিনি। ফিরলেন মাত্র ১ রান করে। আনরিখ নখিয়ার পরিবর্তে খেলেন মইন আলি। ৩ ওভারে ২৭ রান দিয়ে তাঁর ঝুলিও শূন্য। বরং এদিন ইডেন দর্শকদের মন জয় করলেন প্রাক্তন নাইট শুভমান গিল। অধিনায়কের ৫৫ বলে ৯০ রানের চোখ ধাঁধানো ইনিংস বহুদিন মনে রাখবে ক্রিকেটের নন্দনকানন। তবে শুধু ব্যাট হাতেই নয়, অধিনায়ক হিসেবেও মাস্টারস্ট্রোক গিলের। খেলার ছন্দ ধরে রাখতে স্ট্যাটেজিক টাইম আউট না নিয়ে বল করিয়ে গেলেন তিনি। সেই সঙ্গে সঠিক সময়ে রশিদ খানের হাতে বল তুলে দিয়ে কেকেআরকে কার্যত আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করলেন। অধিনায়কের মর্যাদা রেখে ফর্মে ফিরে জ্বলে উঠলেন আফগান স্পিনারও। তুলে নেন জোড়া উইকেট।
এদিন পাওয়ার প্লে-তে গুজরাট ধরে খেলা শুরু করেছিল। সেই কারণেই প্রথম ৬ ওভারে কোনও ওভার বাউন্ডারি হয় না! প্রথম ১০ ওভারে মাত্র একটি ছক্কা। যেটি আসে গিলের ব্যাট থেকে। তবুও গুজরাটের রানরেট থেমে থাকেনি। ১০ ওভারে কোনও উইকেট না হারিয়ে ৮৯ রান তুলেছিল তারা। ১১তম ওভারে প্রথম ছক্কা আসে সুদর্শনের ব্যাট থেকে। ৩৩ বলে অর্ধশতরান পূরণ করেন সুদর্শন। আর গিল হাফসেঞ্চুরি করেন ৩৪ বলে।
১৩তম ওভারে রাহানে বল তুলে দেন আন্দ্রে রাসেলের হাতে। হতাশ করেননি আন্দ্রে রাসেল। দ্বিতীয় বলেই সুদর্শনকে সাজঘরে ফেরান তিনি। ৩৬ বলে ৫২ রান করে আউট হন সুদর্শন। জস বাটলার অবশ্য ক্রিজে এসেই ঝড় তোলেন। যদিও ২১ রানের মাথায় তাঁর সহজ ক্যাচ ফসকান বৈভব আরোরা। হর্ষিত রানার বলে মারতে গিয়ে বল তুলে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বেঁচে যান সে যাত্রায়। অন্যদিকে, গিল খেলছিলেন নিজস্ব মেজাজে। ৫৫ বলে ৯০ রান করে আউট হন তিনি। আরোরাকে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে রিঙ্কু সিংয়ের হাতে জমা পড়েন শুভমন। রাহুল তেওয়াটিয়া দুই বল খেলে কোনও রান না করেই সাজঘরে ফেরেন। তবে বাটলার দলের রানকে টেনে নিয়ে যান ১৯৮-তে। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেট খুইয়ে এই রান তোলে গুজরাট। বাটলার ২৩ বলে ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন। সঙ্গে অপরাজিত থাকেন শাহরুখ খান (৫ বলে ১১)। কেকেআরের হয়ে একটি করে উইকেট নেন বৈভব, হর্ষিত ও রাসেল।
ঘরের মাঠে রীতিমতো ব্যর্থ কেকেআরের ব্যাটাররা। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৫৯ রান তোলে নাইটরা। প্রথম ওভারেই মাত্র ১ রানে আউট হলেন ডি ককের জায়গায় সুযোগ পাওয়া গুরবাজ। ১৭ রানে ফিরলেন নারিন, ব্যর্থ ভেঙ্কটেশ আইয়ারও ১৪ রান করেন। কঠিন পরিস্থিতিতে লড়াকু ইনিংস খেললেন ক্যাপ্টেন রাহানে। ৩৬ বলে ৫০ করে আউট হন তিনি। রাহানে আউট হওয়ার সময় দলের স্কোর ৯১-৪। তখনও রাসেল এবং রিঙ্কু ক্রিজ়ে থাকায় আশা ছাড়েননি সমর্থকরা।
কিন্তু ম্যাচের মোড় ঘোরান রশিদ খান এবং প্রসিধ কৃষ্ণা। ১৬তম ওভারের পঞ্চম বলে রশিদ ফেরান রাসেলকে। পরের ওভারেই প্রসিধ তুলে নেন রামনদীপ সিং এবং মইন আলির উইকেট। ১৪ বলে ১৭ করে আউট হন রিঙ্কু। তবে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে ৯ নম্বরে অঙ্গকৃষ রঘুবংশীকে নামানোর সিদ্ধান্ত বোধগম্য হয়নি ক্রিকেটপ্রেমীদের। ১৩ বলে ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ২টি করে উইকেট নেন রশিদ খান ও প্রসিধ কৃষ্ণ। ম্যাচ জিতে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে গুজরাট।
Be the first to comment