শেষ হলো গুজরাটের প্রথম দফার ভোট, মোট ভোট পড়ল ৬৮ শতাংশ। শনিবার মোটের শান্তিপূর্ণ ভাবেই শেষ হলো গুজরাট বিধানসভা ভোটের প্রথম পর্ব। আজ প্রথম পর্যায়ে ৮৯টি আসনের জন্য লড়াইয়ে নামেন ৯৭৭ জন প্রার্থী। সৌরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ গুজরাটের ১৯টি জেলায় ভোটাভুটির লড়াই চলে। সকাল থেকেই বুথ গুলির সামনে লম্বা লাইন চোখে পড়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৯ লোকসভা ভোটের আগে এটাই সেমি-ফাইনাল।
প্রথমবার গুজরাটের সব বুথেই ভিভিপ্যাটে ভোট করাল নির্বাচন কমিশন। নিজেদের ভোট যাচাই করার সুবর্ণ সুযোগ পেলেন ভোটাররা। মূলত ভোটে কারচুপি রুখতেই নির্বাচণ কমিশনের এই বিশেষ পদক্ষেপ। একদিকে যেমন ভিভিপ্যাট ব্যবহারে খুশী বিজেপি, তেমনই ভিভিপ্যাটে অসন্তুষ্ট কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ, ভোট শুরুর আগে যথেষ্ট সংখ্যায় ভিভিপ্যাট-এর স্যাম্পল টেস্টিং করা হয়নি। প্রসঙ্গত, গত ১১ মার্চ উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশ হতে ভোটযন্ত্রে কারচুপির অভিযোগে সরব হয় বিরোধীরা। ভরাডুবির পর প্রথম এই দাবিতে সরব হন বসপা নেত্রী মায়াবতী। পরে তার সঙ্গে একে একে একই অভিযোগ শোনা যায় অরবিন্দ কেজরিওয়াল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। বিরোধীদের দাবি ছিল, হ্যাক করা হয়েছে ভোটযন্ত্র। আর তারপরএ এমন সিদ্ধান্ত।
যদিও এদিন ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুরাট ও অনান্য বুথের ভোটাররা। অভিযোগ ওঠে, পোরবন্দর বুথে ভিভিপ্যাটের সঙ্গে ব্লুটুথ কানেক্ট করে রেখেছিলেন বুথেরই প্রিসাইডিং অফিসার। পরে অভিযোগ পেয়ে ওই বুথে যান নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরা। সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পর আধিকারিকরা জানান, কোনও সমস্যা নেই, সবকিছুই ঠিকঠাক আছে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি বুথে ইভিএম বিকল হয়ে গেলে বেশ কিছুক্ষন বন্ধ থাকে ভোটাভুটি। বেশ কিছুক্ষন পর বুথে গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনেন নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরা। উল্লেখ্য এদিন ৫০০ও ১০০০ টাকার বাতিল হওয়া মোট ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার হয় ভারুচ থেকে।
অন্যদিকে ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে গুজরাটের গাজদি অঞ্চলের বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ সাধারন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
পাশাপাশি এদিন ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেখা যায় বয়স্ক-বয়স্কাদেরও। উল্লেখ্য, ২০১২-র ভোটে এই ৮৯টি আসনের মধ্যে ৬৩টিই গিয়েছিল বিজেপির ঝুলিতে। কংগ্রেসের আশা, এবার বদলাতে পারে তাদের ভাগ্য। পতিদার অনামত আন্দোলন সমিতির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে বিজেপির খাসতালুকে বিজেপিকেই প্যাঁচে ফেলতে চাইছে কংগ্রেস। প্রথম দফা নির্বাচনের আগে থেকেই গুজরাটে মাটি আঁকড়ে পড়ে আছেন কংগ্রেস সহ সভাপতি রাহুল গান্ধী। গুজরাটের সাধারন মানুষদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সুখ, দুঃখকে ভাগ করে নিয়েছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাঁকে সুযোগ দিলে নিরাশ করবেন না তিনি।
অন্যদিকে, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানির গলায় আবার অন্য সুর। রাজকোট পশ্চিমের প্রার্থী এদিন সকালে সস্ত্রীক ভোট দিয়ে বেরোনোর সময় সাংবাদিকদের জানান, তিনি জয়রে ব্যাপারে ১০০ শতাংশ আশাবাদী। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, রাজ্যে যা কাজ হয়েছে তার নিরিখেই সাধারন মানুষ নিজের মতামত জানাবেন। তাই এখানে চ্যালেঞ্জ জানানোর কোনও প্রশ্নই নেই। রাজকোট পশ্চিমে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিদ্বন্দ্বি কংগ্রেসের হেভিওয়েট প্রার্থী ইন্দ্রনীল রাজগুরু।
কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে গুজরাটের প্রথম দফার ভোট মিটলো অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ভাবেই। ভোটারদের স্বতস্ফূর্ত ভাবে ভোট দিতে দেখা দেলো। এছাড়াএ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়ার আগে ভোটাদের নির্বিঘ্নে বলতে শোনা গেলো তাদের পছন্দের প্রার্থীর কথা।
এখন একনজরে দেখে নেওয়া যাক ১৯টি জেলায় কত শতাংশ ভোট পড়লো-
· মোরবি – ৭৫ শতাংশ
· ভালসাদ – ৭০ শতাংশ
· নর্মদা – ৭৫ শতাংশ
· দ্বারকা – ৫৫ শতাংশ
· পোরবন্দর – ৬২ শতাংশ
· তাপি – ৭০ শতাংশ
· বোতাদ – ৭৩ শতাংশ
· নাভসারি – ৭৬ শতাংশ
· অমরেলি – ৬৫ শতাংশ
· কাউচ – ৬৬.৩২ শতাংশ
· সুরেন্দ্রনগর – ৬৫ শতাংশ
· দাং – ৭২ শতাংশ
· ভারুচ – ৬৪ শতাংশ
· জামনগর – ৬৫ শতাংশ
· জুণাগড় – ৫৮ শতাংশ
· রাজকোট – ৬২ শতাংশ
· সুরাট – ৭০ শতাংশ
· ভাবনগর – ৬৫ শতাংশ
· কুচ – ৬৬.৩২ শতাংশ
দ্বিতীয় দফার নির্বাচন চলতি মাসের ১৪ তারিখ অর্থাৎ আগামী বৃহষ্পতিবার। ভোটগ্রহণ হবে উত্তর ও মধ্য গুজরাটের ৯৩টি আসনে। ফলাফল ঘোষণা হবে ১৮ ডিসেম্বর সোমবার। একদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গুজরাট মডেল আর অন্যদিকে রাহুল, হার্দিকদের জিএসটি ও নোট বাতিল ইস্যু। কে, কাকে টেক্কা দিয়ে শেষ হাসি হাসবে সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।
Be the first to comment