রিকি পন্টিং, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, শেন ওয়ার্নকে পর পর তিন বলে ফিরিয়ে দেওয়া ইডেনের ক্রিকেট স্মৃতিতে এখনও টাটকা। টেস্ট ক্রিকেটে সেই প্রথম হ্যাটট্রিক ছিল ভারতের। যিনি ওই অনন্য রেকর্ড করেছিলেন, সেই হরভজন সিং অবসর নিলেন সব ধরনের ক্রিকেট থেকে। ৪১ বছরের অফস্পিনার অবসর ঘোষণার দিনও তুলে ধরলেন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কলকাতা টেস্টের প্রসঙ্গ। পুরো সিরিজে ৩২টা উইকেট নিয়েছিলেন। যে রেকর্ড এখনও অক্ষত।
হরভজন এক ভিডিও বার্তায় তাঁর ভক্তদের বলেছেন, ‘জলন্ধরের গলি থেকে ভারতীয় টিমে খেলা। ২৫ বছরের এক অসাধারণ যাত্রা শেষ হল। ভারতের জার্সিতে খেলার থেকে বেশি মোটিভেশন আর কিছু ছিল না। একটা সময় কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সামনে এগিয়ে যেতে হয়। আজ আমি ক্রিকেটের সব ফর্ম্যাট থেকে অবসর নিচ্ছি। অবসর হয়তো অনেক আগেই নিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু ঘোষণা করা হয়নি। গত কয়েক বছর ধরে সে ভাবে ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলাম না। কেকেআরে খেলার সময়ই গত মরসুমে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেই ১৯৯৮ সালে বেঙ্গালুরুতে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ভাজ্জির। ওই টেস্টে ২ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আবির্ভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, অনেক দূর যাবেন বলেই এসেছেন। ১০৩ টেস্ট খেলে ৪১৭টা উইকেট নিয়েছেন। সেরা বোলিং ১৫-২১৭। ৫ উইকেট নিয়েছেন ২৫বার। ১০ উইকেট ৫বার। টেস্টে ব্যাট হাতে ২টো সেঞ্চুরিও করেছেন হরভজন। ওয়ান ডে অভিষেক হয়েছিল পর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে, শারজাতে। ভাজ্জির ঝুলিতে ছিল ম্যাট হর্নের উইকেট। সব মিলিয়ে ২৩৬টা ওয়ান ডে খেলে নিয়েছেন ২৬৯ উইকেট। সেরা বোলিং ৫-৩১। দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়েছিল ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে, জোহানেসবার্গে। ২৮টা টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ২৫টা উইকেট নিয়েছেন তিনি।
হরভজন বলেছেন, ‘যে টিমের হয়ে খেলেছি, সেরাটা দিয়েছি। টিমকে সাফল্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার লম্বা কেরিয়ারে বাবা, মা, দিদিরা, আমার স্ত্রী পাশে থেকেছে। ওরা না থাকলে এত দূর আসাই হত না। কেরিয়ারের সেরা মুহূর্তের কথা যদি বলতে হয়, কলকাতায় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্টে হ্যাটট্রিকটাকে সবচেয়ে আগে রাখব। ওই সিরিজে তিনটে টেস্ট মিলিয়ে ৩২ উইকেট নিয়েছিলাম। ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি আর ২০১১ সালের ওয়ান ডে বিশ্বকাপ জয় আমার সবচেয়ে তৃপ্তির, সাফল্যের সময়। যাদের সঙ্গে খেলেছি, যাদের বিরুদ্ধে খেলেছি, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সচিব জয় শাহকে ধন্যবাদ।
তবে সাফল্য যেমন পেয়েছেন, বিতর্কেও জড়িয়েছেন। অস্ট্রেলিয়া সফরে অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের সঙ্গে বাগযুদ্ধ, মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে আইপিএলের ম্যাচ খেলার সময় শান্তাকুমারন শ্রীসন্থকে চড় মারা, পাকিস্তানের শোয়েব আখতারের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ানো। বিতর্কে যতই জড়ান না কেন, মাঠে সাফল্য পেয়েছেন ঠিক। এত দিনে অবসর ঘোষণা করলেও ভারতীয় টিম থেকে বাদ পড়েছেন অনেক আগেই। বছর তিনেক শুধু আইপিএলটাই খেলতেন। ভাজ্জি যে আইপিএলের কোচিংয়ে আসছেন, সেই খবরও ছড়িয়েছে আগে।
হরভজন বলছেনও, ‘ক্রিকেট আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল, থাকবেও। আগামী দিনে ভারতীয় ক্রিকেটে কোনও প্রয়োজনে লাগতে পারলে ধন্য মনে করব নিজেকে। সেই সঙ্গে এও বলে রাখি, আমার জীবনে একটা নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে। বরাবরের মতো পাশে থাকবেন।’
Be the first to comment