হাঁসখালি ধর্ষণকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

Spread the love

নদিয়ার হাঁসখালিতে নাবালিকার ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত স্থানীয় তৃণমূল গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের ছেলে ৷ অভিযুক্তকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ ৷ রাজ্যে একের পর এক ধর্ষণের খবরে যখন রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা, তখন হাইকোর্টের এই নির্দেশ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এই নিয়ে বাংলায় এক মাসে মোট ৬টি ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

মঙ্গলবার হাঁসখালির ১৪ বছরের কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে গিয়ে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষী ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, ধর্ষিতা মেয়েটির পরিবারের লোকজন এবং ওই এলাকার সাধারণ মানুষের আত্মবিশ্বাস বজায় রাখতে সিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য পুলিশকে অবিলম্বে এই মামলার সমস্ত নথি সিবিআইকে হস্তান্তর করার নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।

এদিন পুলিশের কেস ডায়েরি দেখে সন্তুষ্ট হয়নি আদালত ৷ প্রত্যক্ষদর্শীর গোপন জবানবন্দি নেওয়া হলেও তার ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়নি, নির্যাতিতার রক্তক্ষরণ হলেও তাঁর জামা কাপড় থেকে ডিএনএ টেস্টের জন্য নমুনা নেওয়া হয়নি, যে বিছানায় এই ঘটনা ঘটেছিল সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করেনি পুলিশ ৷ এই বিষয়গুলি এদিন আদালতের পর্যবেক্ষণে আসে ৷ এই ঘটনায় প্রভাবশালী যোগ, প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা, ধর্ষিতার পরিবারকে ভয় দেখানোর মতো অভিযোগও উঠেছে ৷ তাই সবদিক বিবেচনা করে এদিন বিচারপতিদের মনে হয়েছে এই ঘটনার তদন্তভার সিবিআই এর হাতেই যাওয়া উচিত ৷

এদিন সকালেই সকালেই ঘটনাস্থলে যান কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া বলেন, গ্রামের শ্মশানে অনেকক্ষেত্রেই ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়া মৃতদেহ দাহ করা হয়। তবে এক্ষেত্রে যেহেতু দশজন মৃতদেহ দাহ করতে গিয়েছিল, অবশ্যই পুলিশকে জানানো উচিত ছিল। হাঁসখালির গ্যাড়াপোতা গ্রামে মৃত নাবালিকার বাড়িতে যান তিনি। কথা বলেন নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গেও। ঘটনার নিন্দা করে মহুয়া বলেন, প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গিয়েছে, ধর্ষণের ঘটনাটা যেখানে ঘটেছে সেখানে আমাদের দলের পঞ্চায়েত সদস্য উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু প্রাথমিক অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্যের ছেলেকে পুলিশ ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ তাদের তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিন নির্যাতিতার বাড়িতে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, হাঁসখালির নির্যাতিতাকে নিয়ে করা মন্তব্যের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর অবিলম্বে এই বাড়িতে এসে ক্ষমা চাওয়াউচিত।

মঙ্গলবার অনেকটা রাস্তা মিছিল করে হাঁসখালির নির্যাতিতার বাড়িতে যান বিজেপি নেতারা। মিছিলের সামনে ছিলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু। তিনি দাবি করেন, হাঁসখালির ঘটনার জন্য দায়ী তৃণমূল নেতারাই। অভিযুক্ত সবাই শাসকদলের নেতা বলে অভিযোগ তাঁর। পাশাপাশি, নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সিবিআই তদন্তের দাবিও করেন শুভেন্দু।

শুভেন্দুর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর লজ্জা হওয়া উচিত! মা বলছে আমার মেয়ে গর্ভবতী নয়। মুখ্যমন্ত্রীর উচিত আগামিকাল এখানে এসে গলায় গামছা দিয়ে পরিবারের কাছে ক্ষমা চাওয়া।’’ তিনি এ-ও বলেন, ‘‘যা ঘটেছে তা অত্যন্ত লজ্জার। প্রথমে ধর্ষণ ও অত্যাচার। তার পর প্রমাণ লোপাটের জন্য নির্যাতিতার দেহ পোড়ানো— সবটাই করেছেন তৃণমূল নেতারা।

এদিন গ্যাড়াপোতা গ্রামে যান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও। পরিবারটিকে সমস্তরকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এদিন তৃণমূলের নাম না করে অধীর বলেন, “ওরা একদিকে ভয় দেখাবে, অন্যদিকে লোভ। মেয়ের আত্মা শান্তি জন্য শক্ত হতে হবে মা-বাবাকে। কোনও রাজনৈতিক দল অথবা ব্যক্তি প্রভাবিত কেউ করলে ফোন করে জানাবেন আমাকে।” এদিন মৃত নাবালিকার পরিবার ছাড়াও বেশ কয়েকজন প্রতিবেশীর সঙ্গেও কথা বলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*