কলকাতা হাইকোর্টকে বিপথে চালনার অভিযোগ উঠেছিল নরেন্দ্রপুর থানার আইসির বিরুদ্ধে। এবার তাঁর বিরুদ্ধে উপযুক্ত বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিল আদালত। পাশাপাশি পরিচারিকাকে অপহরণের চেষ্টা ও হুমকি মামলার তদন্তভার সিআইডিকে স্থানান্তরের নির্দেশ দিলেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থা। ৭ জুনের মধ্যে সিআইডির ডিজিপিকে রিপোর্ট দিতে হবে।
এদিন বিচারপতি রাজশেখর মান্থার পর্যবেক্ষণ, গত ১৯ শে এপ্রিল বারুইপুর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু যে রিপোর্ট পেশ করেছেন তাতে তিনি একাধিক খামতির কথা উল্লেখ করেছেন। নথি দেখে আদালত মনে করছে যে এই মামলায় আরও অনেক খামতি আছে, যা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উল্লেখ করেননি। যদিও সেই রিপোর্টে পুলিশ সুপার কেন স্বাক্ষর করেননি, তা আদালতের কাছে স্পষ্ট নয়। যদিও রাজ্যের আইনজীবী জানিয়েছেন, ১৯ এপ্রিল এই রিপোর্টকে অনুমোদন দেওয়ার পর সুপার ছুটিতে গিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, নরেন্দ্রপুর থানা এলাকার বাসিন্দা মধু সিং। পেশায় পরিচারিকা। তিনি কাজ করেন ওই এলাকারই শশাঙ্ক রাজ সাহুর বাড়িতে। অভিযোগ, গত ২৭ জানুয়ারি বিকাল চারটে নাগাদ কাজ করে ফিরছিলেন মধুদেবী। সেইসময় তিনজন তাঁর পথ আটকে শশাঙ্কবাবুর সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। জানতে চায়, বাড়িতে ক’টি ঘর রয়েছে? কোন ঘরে কে থাকেন? কে কখন বের হন? এমনকী, ঘুষ দিয়ে মধুদেবীর থেকে তথ্য বের করে আনার চেষ্টা করে তারা। এমনকী, শশাঙ্কবাবুর বাড়ি দখলের হুমকিও দেয়। এরপরই থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। ফের ৩০ জানুয়ারি ওই তিন জন মধুর পথ আটকায়। তখনও থানায় অভিযোগ করা হয়।
এরপর ৩ ফেব্রুয়ারি পাঁচ-ছ’জন গাড়ি নিয়ে এসে মধুকে অপহরণের চেষ্টা করে। স্থানীয় বাসিন্দারা বিনোদ যাদব নামে এক ব্যক্তিকে ধরে ফেলে। ওই ব্যক্তির কাছ থেকে এবং গাড়ি থেকে একাধিক সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয় বলে দাবি মামলাকারীর। যদিও পুলিশের সিজার লিস্টে গাড়ি ছাড়া আর কিছু দেখানো হয়নি বলে দাবি মধু সিংয়ের। পুলিশকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের আবেদন করা হলেও তা তারা করেনি বলে অভিযোগ। এর মাঝে বাড়ি বয়ে এসে খুনের হুমকিও দেওয়া হয়। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ডিজিপিকে চিঠি দিয়ে নিরাপত্তা ও মামলা সিআইডি কে হস্তান্তর করার আবেদন জানান মধু সিং।
অভিযোগ, গত বছর খুনের চেষ্টার মতো একটি গুরুতর অভিযোগে এফআইআর দায়ের হয়েছিল নরেন্দ্রপুর থানায়। মামলার গত দুই শুনানিতে তদন্তের গতি প্রকৃতি নিয়ে আদালত জানতে চাইলে, সরকারি কৌঁসুলি আদালতে জানান চার্জশিট পেশ করা হয়েছে। কিন্তু তা দেখাতে পারেননি সরকারি কৌঁসুলি। এদিন সেই মামলাতেই প্রকাশ্যে আসে বিষয়টি কেস নম্বরে দেখা যায় এখনও চার্জশিট পেশ করা হয় নি। সরকারি কৌঁসুলির সাফাই, “চার্জশিট তো তৈরি হয়েছিল। শুধু জমা দেওয়া হয়নি।” তার প্রেক্ষিতে বিচারপতির মন্তব্য, “৫৪ দিন ‘থানাবন্দি’ চার্জশিট !”
Be the first to comment