শতাব্দী প্রাচীন পাথর ছোড়া উৎসবের এ বারেও ব্যতিক্রম হয়নি হিমাচল প্রদেশের ধামি গ্রামে; পড়ুন!

Spread the love
একে অপরকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়াই রেওয়াজ। এটাই রীতি। শতাব্দী প্রাচীন পাথর ছোড়া উৎসবের এ বারেও ব্যতিক্রম হয়নি হিমাচল প্রদেশের ধামি গ্রামে। হই হই করে পাথর ছুড়েই জমে উঠেছে হিমাচলের কালী পুজো।
শিমলা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে ধামি গ্রাম। ‘Stone Throwing Festival’ বা ‘পাথর ছোড়া উৎসব’ এই গ্রামের পুরনো প্রথা। বলা বাহুল্য, গ্রামের কালী পুজোর বিশেষ রীতিও এটা। ভক্তেরা দু’দলে ভাগ হয়ে একে অপরকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে থাকবেন। উদ্দেশ্য কেউ একজন এই পাথরের ঘায়ে আহত হবেন ও তাঁর রক্তপাত হবে। সেই রক্ত দিয়েই তিলক এঁকে দেওয়া হবে দেবী মূর্তিতে। প্রায় ১০-২০ মিনিট ধরে চলে এই পাথর ছোড়াছুড়ি। কারওর আহত হওয়ার খবর মিললেই পাথর ছোড়ায় ইতি টানা হয়। ঢাক-ঢোল সমারোহে আহত ব্যক্তিকে মন্দিরে নিয়ে গিয়ে পুজো দেওয়া হয়।
গ্রামবাসীদের কথায়, এই প্রথা শুরু করেছিলেন গ্রামের রাজ পরিবারের সদস্যরা। একনও রাজ পরিবারের বংশধররাই অংশ নেন এই উৎসবে। তাঁদের ঠিক করে দেওয়া দু’টি দল পরস্পরকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে থাকে। তবে দর্শকদের লক্ষ্য করেও পাথর ছোড়াও হয়। স্থানীয়দের কাছে এই উৎসবের নাম ‘পাথর কা মেলা’।
‘গ্রামের মোড়ল বলেছেন ৪০০ বছরের পুরনো উৎসব, এখনও আমরা কোনও বিধি নিষেধ না মেনেই এই রীতি পালন করি’, বললেন এই উৎসবের উদ্যোক্তা গ্রামেরই এক বাসিন্দা। তাঁর কথায়, নরবলির মতো নিষ্ঠুর প্রথার বিকল্প এই পাথর ছোড়া উৎসব। মন্দির প্রাঙ্গনে বেশ জাঁকজমকেই পালিত হয়ে আসছে এই প্রথা। উৎসবকে ঘিরে ভিড়ও হয় দেখার মতো। হিমাচলের ‘পাথর কা মেলা’ দেখতে দর্শকদের ঢল নামে গ্রামে।
বছর আগে হিমাচলের ধামিতে কালী পুজোয় নরবলি দেওয়া হত। কিন্তু, রাজ পরিবারের হস্তক্ষেপে সেটা বন্ধ হয়। রানি মানুষ হত্যার এই প্রথা পছন্দ করতেন না। তাই বন্ধ হয় নরবলি। কিন্তু, গ্রামের পুরোহিতরা বেঁকে বসেন। নরবলি বন্ধ হলেও রক্ত দিয়ে দেবীকে পুজো করার যে রীতি রয়েছে তার কী হবে? বিকল্প হিসেবে চালু হয় ‘Stone Pelting’ বা পরস্পরের দিকে পাথর ছোড়ার রেওয়াজ। পাথরের আঘাতে কেউ না কেউ আহত হবেন, তার রক্তেই হবে পুজো।
আবার অন্য রকম মতও রয়েছে। শোনা যায়, হিমাচলের দু’টি গ্রাম হ্যালগ ও জ্যামগের দুই রাজ পরিবারের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থির হয়। কিন্তু, নানা কারণে সেই বিয়ে ভেঙে যায়। জ্যামগের রাজকুমারকে বিষ খাইয়ে হত্যা করে গ্রামেরই কিছু বাসিন্দা। সেই দুঃখেই গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হন তাঁর বাগদত্তা হ্যালগের রাজকুমারী। তাঁকে ‘সতী’ মনে করেই দুই গ্রামের গ্রামবাসীরা একে অপরকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে প্রায়শ্চিত্ত করা চেষ্টা করেন। সেই থেকেই এই উৎসবের সূচনা।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*