হিম্মত সিং চৌহানের রাতারাতি কোটি টাকার মালিক হয়ে ওঠার কাহিনী!

Spread the love
একচালার একটা ভাতের হোটেল দিয়ে ব্যবসায় হাতেখড়ি হয়েছিল। তারপর ধীরে ধীরে হোটেলের আয়তনে বেড়েছে। ফুলেফেঁপে উঠেছে পকেট। হোটেল মালিক হিম্মত সিং হয়েছে দাপুটে তৃণমূল নেতা। আর তারপর জমি মাফিয়া। তবে হিম্মত সিংয়ের ঠাঁই এখন জেল। কখনও CPI(M)-এর ছত্রছায়ায় থেকেছে তো কখনও ওঠাবসা তৃণমূলের নেতামন্ত্রীদের সঙ্গে। রাজনৈতিক মদতেই কি তবে হিম্মত সিং চৌহান ওরফে জয়প্রকাশ সিং চৌহানের এত বাড়বাড়ন্ত?
শিলিগুড়ি পৌরনিগমের ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হিম্মত সিং চৌহান। বাবা শিবপ্রসাদ চৌহান ভালো চাকরি করতেন। ফলে অভাব কোনওদিনই ছিল না। তবে নিজের রোজগারের শুরু বলতে ছোটো একাচালার ভাতের হোটেল। হিম্মত সিংয়ের বাবা ছিলেন এলাকার একজন দাপুটে কংগ্রেস নেতা। আর সেই দাপটই তাঁর প্রাণ নিয়েছিল। আজ থেকে ২০-২২ বছর আগে রাজনৈতিক প্রতিহিসংসার কারণেই মৃত্যু হয়েছিল শিবপ্রসাদ চৌহানের। বাবার মৃত্যুর পর থেকে হিম্মত সিংয়ের জীবন অন্য দিকে মোড় নিতে থাকে। অল্পদিনের মধ্যে নিজের টিম তৈরি করে ফেলে। তারপর মাসল পাওয়ারের জোরে রীতিমতো এলাকার ত্রাস হয়ে ওঠে। শোনা যায়, খাতায় কলমে কোনও দলে হিম্মতের নাম না থাকলেও CPI(M) নেতৃত্ব বেশ তোয়াজ করে চলত তাকে। পরে হিম্মত নাম লেখায় CPI(M)-এ। সেই সময় রাজ্যে CPI(M)-এর সবথেকে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল কংগ্রেস। দলের পরামর্শেই নাকি তখন হিম্মত বিরোধী শিবিরে যোগ দেয়। কংগ্রেসে থেকে CPI(M)-কে মদত দিত। বিরোধী দলের সদস্য হলেও তার মাসল পাওয়ারে ভর করেই নির্বাচনে জয় পায় CPI(M)।
রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে পালাবদল শুরু হয় হিম্মতেরও। তৃণমূল কংগ্রেসের ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করে সে। এখানেও হিম্মতের USP ছিল সেই মাসল পাওয়ার। তা কাজে লাগিয়েই তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা কমিটির দুই শীর্ষনেতার ঘনিষ্ঠ হয়। এতদিন শাসকদলকে মদত দেওয়া চলছিল অলিখিতভাবে। ২০১৩ সালে চম্পাসারির ত্রাস হিম্মত সিং যোগ দেয় তৃণমূল কংগ্রেসে। জেলাস্তর ছাড়িয়ে তার তখন ওঠাবসা রাজ্যস্তরের নেতৃত্বের সঙ্গে। হিম্মত ধীরে ধীরে মন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করে। ভাতের হোটেল ছেড়ে তখন সে বড়সড় ধাবা খুলে বসেছে। পাশাপাশি শুরু করেছে আরও একাধিক ব্যবসা। মার্বেলের দোকান, ওয়াইন শপ, ডেকরেটরের ব্যবসা, হিম্মত তখন দু’হাতে রোজগার করছে। কিছুদিনের মধ্যে শুরু করে গাড়ির ব্যবসা। হিম্মত সিং চৌহান ওরফে জয়প্রকাশ সিং চৌহান রাতারাতি হয়ে ওঠে কোটি টাকার মালিক।
শাসকদলের হাত সবসময় ছিল হিম্মতের ব্যবসার উপর। দলের যেকোনও অনুষ্ঠানে প্যান্ডেল, খাবার থেকে শুরু করে গাড়ির বরাত সব দেওয়া হত হিম্মতকে। চড়চড় করতে বাড়তে থাকে ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স। সেই ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সের জোরেই শিলিগুড়ি পৌরনিগমের গতবারের নির্বাচনে টিকিট আদায় করে। যদিও সেখানে আটকে যায়। জিততে পারেনি। তবে তাতে বিন্দুমাত্র দমেনি হিম্মত। বরং তার এবার নজর যায় অন্যদিকে। হাতাতে শুরু করে সরকারি, বেসরকারি জমি। অভিযোগ ওঠে, রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ভুয়ো নথি বানিয়ে সরকারি জমি বিক্রি করছে হিম্মত। শাসকদল সহায় থাকায় দিনে দিনে বাড়তে থাকে হিম্মতের হিম্মত। আর সেটাই একসময় কাল হয়ে উঠল। চম্পাসারি এলাকায় ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক সংলগ্ন PWD-র তিন একর জমি দখল করে বেআইনি নির্মাণকাজ চালানোর অভিযোগে গতরাতে গ্রেপ্তার করা হয় হিম্মত সিংকে। একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়। আজ তাকে শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতে তোলা হলে আট দিনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*