
রোজদিন ডেস্ক, কলকাতা:- ঘড়ির কাঁটা সন্ধে আটটা পেরিয়েছে। চাকরিহারাদের ডেডলাইন পার। তবু প্রকাশিত হল না এসএসসির যোগ্য-অযোগ্যদের নামের তালিকা। চাকরিহারাদের প্রতিনিধিদের স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি নাকি জানিয়েছে, আজ মাত্র তিনটি কাউন্সিলিংয়ের তালিকা প্রকাশ করা হবে। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই এসএসসি ভবনের সামনে ধুন্ধুমার। তাঁদের দাবি, সমস্ত তালিকা প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলবে অবস্থান। পরিস্থিতি সামাল দিতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়। চাকরিহারাদের সঙ্গে পুলিশ কর্মীদের ধ্বস্তাধ্বস্তি বেঁধে যায়। মোকাবিলায় অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনীও আনা হয়েছে। চাকরিহারাদের স্পষ্ট বক্তব্য, ‘আজ ললিপপ নিয়ে বাড়ি ফিরব না। আজ তালিকা দেখতে চাই। তালিকা দেখেই ফিরব।’ যত রাত বাড়ছে ততই সল্টলেকের এসএসসি ভবনের সামনে বাড়ছে উত্তেজনা।
চাকরিহারাদের বিক্ষোভে তুলকালাম পরিস্থিতি। সোমবার দুপুর ১২ টা থেকে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন চাকরিহারারা। তাঁদের দাবি ছিল, যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। অথচ সন্ধ্যে ৬টা পেরিয়ে গেলেও এখনও যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি স্কুল সার্ভিস কমিশন। যা নিয়ে কার্যত রণক্ষেত্রের ছবি এসএসসি ভবনের সামনে।
নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও তালিকা প্রকাশিত না হওয়ায় দফায় দফায় উত্তেজিত হয়ে পড়েন শিক্ষকেরা। পুলিশের সঙ্গে বেধে যায় বচসা, শুরু হয় হাতাহাতি। পুলিশ তাদের সংযত আচরণ করতে বললেও কানেই তোলেনি বিক্ষোভকারীরা। যদিও এসএসসি ভবনের ভেতরে বৈঠকে বসেছেন চাকরিহারাদের ১৩ জন প্রতিনিধি।
প্রসঙ্গত, গত ১১ এপ্রিল বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারের সঙ্গে বৈঠকের পর জানা গিয়েছিল, আইনি পরামর্শ নিয়ে দেড় সপ্তাহের মধ্যে যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ্যে আনতে পারে এসএসসি। সেই হিসেব মোতাবেক ২১ এপ্রিল সোমবার পৃথক তালিকা প্রকাশ করার কথা ছিল স্কুল সার্ভিস কমিশনের। যদিও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঝাড়াই-বাছাই করে কোনও তালিকা পেশ করেনি এসএসসি। বরং আচার্য সদনের ভিতর থেকে খবর এসেছে, থার্ড কাউন্সেলিং পর্যন্ত যাঁরা রয়েছেন তাঁদের বৈধ বলে ধরা হচ্ছে। যা নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে এসএসসি ভবনের বাইরে।
সূত্রের দাবি, এসএসসির তরফে তাঁদের জানানো হয় প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় কাউন্সিলিংয়ের তালিকা প্রকাশ করা হবে। এই খবর এসএমএস করে বাইরে থাকা চাকরিহারাদের জানিয়ে দেন ভিতরে থাকা প্রতিনিধিরা। এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন চাকরিচ্যুতরা। বাইরে বিক্ষোভে ঘি পড়ার পাশাপাশি এসএসসি চেয়ারম্যানেরর ঘরের বাইরে অবস্থানে বসে পড়েন ১৩ জন। বাইরে থাকা বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে ঠেলে এসএসসি ভবনের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। তখনই পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে ব্যাপক ধস্তাধস্তি বেঁধে যায়।
চাকরিহারাদের সাফ দাবি, “প্রয়োজনে সারা রাত এসএসসি ভবনে সামনে বসে থাকব। কোনও কাউন্সিলিংয়ের অজুহাত চলবে না। যোগ্যদের লিস্ট লাগবে। তা না-হলে এক্ষুনি ২২ লক্ষ ওএমআর প্রকাশ করতে হবে। চেয়ারম্যানকেও বাড়ি যেত দেব না। বুঝতে পারছি প্রত্যেকটা প্রতিশ্রুতি ললিপপের মতো। কিন্তু আজ ললিপপ নিয়ে বাড়ি ফিরব না। আজ তালিকা দেখতে চাই। তালিকা দেখেই ফিরব।’ পাশাপাশি, শিক্ষামন্ত্রী এবং এসএসসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
অন্যদিকে, যোগ্য-অযোগ্যের তালিকা প্রকাশ নিয়ে করুণাময়ীতে এসএসসি অফিসের সামনে বিক্ষোভের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন এক শিক্ষিকা। অসুস্থ শিক্ষিকাকে মাথায় জল দিতে, সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন সেখানে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী। অবস্থানে বসা শিক্ষকদের অভিযোগ, যোগ্য হয়েও তাঁরা রাস্তায় পড়ে আছেন আর অযোগ্যরা ঠান্ডা ঘরে বসে আছে।
Be the first to comment