আরজি করের প্রভাব! দার্জিলিংয়ে বদলি হতে হল সিনিয়র চিকিৎসককে, রুটিন বদলি বলল স্বাস্থ্যদপ্তর..

Spread the love

চিরন্তন ব্যানার্জি, কলকাতা:- আবারও বদলি হতে হল আরজিকর আন্দোলনের অন্যতম সিনিয়র চিকিৎসকদের মুখ চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীকে। বর্তমানে পূর্ব বর্ধমানের উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (২) পদে ছিলেন তিনি। সেখান থেকে তাঁকে বদলি করা হয়েছে দার্জিলিংয়ের টিবি হাসপাতালের সুপার হিসেবে। পূর্ব বর্ধমানে সুর্বণ গোস্বামীর জায়গায় অস্থায়ী ভাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হলো ওই জেলারই উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (৪) পদে থাকা চিকিৎসক সুনেত্রা মজুমদারকে। এই নির্দেশিকার পরই নানা মহলে জল্পনা তৈরি হয়েছে। যদিও স্বাস্থ্য ভবনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে এই বদলি রুটিন বদলি।

প্রসঙ্গত, আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকে খুন ও ধর্ষণের ন্যায় বিচারের দাবিতে চিকিৎসকরা যে সময় পথে নেমেছিলেন, সেই সময় আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন সুবর্ণ। বহুবার শাসকদলের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। আরজি কর আন্দোলন নিয়ে সোচ্চারও হন তিনি। একটা সময় তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ, ও তৃণমুল যুব নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যের তোপের মুখেও পড়তে হয়েছিল এই চিকিৎসককে। লালবাজারও সমন করেছিল এই সিনিয়র চিকিৎসককে। এবার তাঁকে বদলি হতে হল দার্জিলিংয়ে।
এদিন চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী রোজদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকার জানান, ‘যেহেতু আমাদের চাকরি বদলি যোগ্য তাই পশ্চিমবঙ্গের কোনো জেলাতেই চাকরি করতে আমার সমস্যা নেই। ইতিমধ্যেই আমার ১১টা জেলায় চাকরি করা হয়ে গেছে। এবং বর্তমান সরকারের আমলে এটা আমার অষ্টমবার বদলি। সমপদেই এটা পঞ্চমবার বদলি হল। তাই বদলি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু, যারা শাসকদলের ঘনিষ্ঠ তারা ১৫ -১৬ বছর ধরে পচ্ছন্দের জায়গায় বসে আছে। এবং আমি বর্তমানে পূর্ব বর্ধমান জেলায় যেখানে কাজ করছি, সেখানে যে কর্মসূচিগুলো আমি দেখি তার পারফরম্যান্স এই মুহূর্তে রাজ্যের সবচেয়ে ভালো জেলাগুলির মধ্যে একটি। সেখান থেকে আমাকে দার্জিলিংয়ের একটি কার্যত কম গুরুত্বপূর্ণ পদে পাঠানো হচ্ছে। কার্যত রোগী বিহীন একটি হাসপাতালে আমাকে বদলি করা হলো। এটাকে শুধুমাত্র রুটিন বদলি হিসেবে দেখছি না আমি।’
এই তিনি সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, ‘এই মুহূর্তে অভায়া আন্দোলনে সামনের সারিতে আমরা যারা চিকিৎসকরা রয়েছি তাদের প্রথম থেকেই নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। চিকিৎসক সমাজকে এবং প্রতিবাদী নাগরিককে হয়রানি মূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এটাকে তারই অঙ্গ হিসেবে দেখছি।’। তিনি আরও জানান, ‘আমাকে শাসকদল ব্যক্তিগতভাবে প্রথমে লালবাজার থেকে সমন করায়। তারপর সল্টলেক ইলেকট্রনিক কমপ্লেক্স থানা থেকে মেডিক্যাল কাউন্সিলিংকে দিয়ে একটি মিথ্যে অভিযোগ করায়। তারপরই এই বদলির খাড়া। এইভাবে সরকার যদি ভেবে থাকেন যে আমাদের দমন করবে, তাহলে সেটা খুব ভুল হচ্ছে।’ চিকিৎসক স্পষ্ট জানান, ‘আমি দার্জিলিয়ে থাকি বা বর্ধমানে থাকি, তাতে কোন কিছু যায় আসে না। আমাদের লড়াই জারি থাকবে।’
এদিনের এই বদলিকে সিনিয়র চিকিৎসক সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামার পুরস্কার হিসাবেই দেখছেন।
এদিন সিনিয়র চিকিৎসক উৎপল বন্দোপাধ্যায় রোজদিনকে জানান, ‘এই বদলি পুরোপুরি প্রতিহিংসা মূলক বদলি।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী আরজি করে নির্যাতিতার ন্যায়ের বিচারের দাবিতে, এবং স্বাস্থ্য দফতরের সার্বিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে, থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে নিরলস ধারাবাহিক একজন যোদ্ধা। তার কর্মজীবনে চাকরি নিয়ে যখন কোন অভিযোগ নেই এই অবস্থায় দার্জিলিয়ে তাঁর আবার বদলি আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না এটা প্রতিহিংসা মূলক কি না।’ এদিন চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় জোরালো দাবি করে বলেন, ‘এটা রুটিন বদলি নয়, কারণ এই বদলির নির্দেশিকায় শুধুমাত্র চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর বদলির কথা বলা হয়েছে। যদি রুটিন বদলি হত তাহলে এখানে আরও অনেকগুলি বদলি যুক্ত থাকতো। তাই, আমাদের স্বাস্থ্য দফরের কাছে দাবি অবিলম্বে এই অনৈতিক প্রতিহিংসা মূলক, অমানবিক বদলির নির্দেশ রদ করা হক।’ এদিন সিনিয়র চিকিৎসক জানান, আরজিকরের নির্যাতিতার ন্যায়ের বিচারের আন্দোলন এবং সার্বিক অনাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন জারি থাকবে।
অন্যদিকে, এদিনের এই বদলিকে প্রতিহিংসা মূলক আচরণ হিসাবেই দেখছেন আরজিকর আন্দোলনের অন্যতম মুখ চিকিৎসক আসফাকউল্লা নাইয়া। তিনি রোজদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, “এটি একটি প্রতিহিংসা মূলক আচরণ স্বাস্থ্য ভবনের তরফ থেকে। এতে কোন সন্দেহ নেই। এটা প্রথম নয়, বারবারই আমরা দেখেছি এই ধরনের প্রতিহিংসামূলক আচরণ করে স্বাস্থ্যভবন। এবং এর আগেও এটা হয়ে এসেছে যেটা নিয়ে আমাদের এই আন্দোলনে আমরা বলেছিলাম যে স্বচ্ছ বদলি পলিসি আনা হোক। বদলি হলে সবার বদলি হবে, এবং তা স্বচ্ছ ভাবে হবে। সিনিয়র চিকিৎসকেরা তাদের নিজেদের যোগ্যতায় পদ পাওয়ার ব্যাপারটা তৈরি হোক। যেখানে শাসকঘনিষ্ঠ হলে ভালো জায়গায় পদ পাবে, কেউ শাসকবিরোধী হলে খারাপ জায়গায় বদলি হবে বা কোন অপছন্দের জায়গায় বদলি করা হবে এইগুলো ঠিক নয়।’ এরপর তিনিও দাবি করেন সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করায় এই ধরনের পুরস্কার পাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তারপরও বলছি কোন জায়গায় এই ধরনের অন্যায় হলে তার প্রতিবাদ আমরা করব। সেখানে আলোচনায় যদি কোন রকম সমাধান না হয়, আন্দোলন হবে। তবে নিঃসন্দেহে শুধু চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বলে নয়, এর আগেও অনেক ডাক্তারবাবুদের সাথে এই ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে দীর্ঘদিন ধরে। জুনিয়র ডাক্তার হিসেবে আমরা দেখেছি সিনিয়র ডাক্তারবাবুদের সাথে এই ধরনের দমন পিরন। তাই আমার মনে হয় স্বাস্থ্য ভবনের তরফ থেকে একটা স্বচ্ছ ট্রান্সফার পলিসি করা দরকার যে সিনিয়র ডাক্তারদের কখন কোথায় কিভাবে ট্রান্সফার হবে সেই বিষয়ে একটা পরিষ্কার তথ্য থাকা দরকার।”
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর বদলির প্রতিবাদে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স’-এর তরফ থেকে স্বাস্থ্য ভবন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*