হতেই পারে ভারতীয় দলের প্রথম একাদশের পাঁচ খেলোয়াড় নামেননি এ দিন। হতেই পারে আম্পায়ারের দুটি ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত দিতে হয়েছে ধোনি ও দীনেশ কার্তিককে। তা বলে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না শেষ বল অবদি দাঁত চেপে আফগান লড়াইকে। যে লড়াইয়ের উপর ভর করেই বিশ্বের দু নম্বর দলের বিরুদ্ধে রূপকথা তৈরি করল কাবুলিওয়ালার দেশ।
পাকিস্তানের সঙ্গে দুটো ম্যাচে যা ঘটেনি, বাংলাদেশের সঙ্গে যা ঘটেনি, আফগানিস্তান ম্যাচে সেটাই ঘটল। রক্তচাপ বাড়িয়ে দেওয়া, এশিয়া কাপের সবচেয়ে উত্তেজক ম্যাচটা দেখল দুবাই। যে ভারত বনাম আফগানিস্তান ম্যাচ ছিল নিছকই নিয়মরক্ষার। যে ম্যাচ অবিশ্বাস্য ভাবে শেষ হল টাইয়ে।
শেষ ওভারে ভারতের দরকার ছিল সাত রান। হাতে এক উইকেট। রশিদ খানের করা ৫০তম ওভারের দ্বিতীয় বলেই চার মারেন রবীন্দ্র জাডেজা। যা নিয়েও নাটক। বল ছয় হয়েছে, না চার, তা নিয়ে তৃতীয় আম্পায়ারের সাহায্য নিতে হয়। পরের বলে এক রান। স্ট্রাইকে খলিল আহমেদ। শেষ তিন বলে বাকি দুই। খলিল ইনসাইড এজে লাগিয়ে কোনও মতে একটা রান নিলেন। দু’বলে এক, স্ট্রাইকে জাডেজা। রশিদের পঞ্চম বলে লোপ্পা বল দেখে লোভ সামলাতে পারলেন না জাদেজা। বলটা তিনি উড়িয়ে দিলেন ডিপ মিড উইকেট অঞ্চলে। সেখান থেকে ডান দিকে দৌড়ে এসে জাডেজার শটটা তালুবন্দি করে ফেললেন নাজিবুল্লা জাদরান। দু’দলের রানই তখন ২৫২!
মঙ্গলবারের মরুশহর যেন চমকের ডালি সাজিয়ে বসেছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য। যেমন তারা দেখল, মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নেতৃত্বে প্রত্যাবর্তন। যেমন দেখল, মহম্মদ শাহজাদের দুরন্ত সেঞ্চুরি। ভারতের নতুন ওপেনিং জুটিরও একশো রান তুলে দেওয়া। কিন্তু ম্যাচের ফলের মতো নাটকীয়তা কিছুতেই ছিল না।
ধোনি কি কখনও ভেবেছিলেন, নেতৃত্ব ছাড়ার পরেও তাঁকে আরও একবার ভারত অধিনায়কের মুকুট পরতে হবে? ভাবতে পেরেছিলেন, অধিনায়ক হিসেবে তাঁর দুশোতম ম্যাচে এ রকম একটা মহা উত্তেজক টাই হবে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে?
দুই নিয়মিত ওপেনারের পরিবর্তে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ওপেন করে কে এল রাহুল-অম্বাতি রায়ডুর জুটি। দেখা যাচ্ছে, ইংল্যান্ডের আবহাওয়ায় যে ভারতীয় ওপেনাররা বেশি সময় ড্রেসিংরুমের বাইরে কাটাতে পারছিলেন না, তাঁরা দুবাইয়ে এসে মাঠ ছেড়ে যেতেই চাইছেন না। রাহুল-রায়ডুও একশোর ওপর রান তুলে দিলেন।
কিন্তু ওয়ান ডে-র প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে রান পেলেও এক দিক দিয়ে খলনায়ক হয়ে গেলেন রাহুল। আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দেওয়ার পরে তিনি রিভিউ নিয়েছিলেন। সেই রিভিউ নষ্ট হয়। ফলে ভারতের হাতে আর কোনও রিভিউ ছিল না। ধোনি এবং দীনেশ কার্তিক— দু’জনেই আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের শিকার। কিন্তু হাতে রিভিউ না থাকায় সেই ভুল শুধরানো যায়নি।
ধোনি রান না পেলেও ধোনি-ভক্ত রান পেলেন। তিনি আফগানিস্তানের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান শাহজাদ। নাদুস-নুদুস চেহারার শাহজাদকে নিয়ে ইতিমধ্যেই এখানে সাড়া পড়েছে। দিন কয়েক আগে শাহজাদ আইসিসির দুর্নীতি দমন শাখার কর্তাদের কাছে অভিযোগ করেছেন, তাঁকে নাকি কোন জুয়াড়ি এশিয়া কাপের মধ্যেই আসন্ন আফগান প্রিমিয়ার লিগে ম্যাচ গড়াপেটা করার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে আফগান ক্রিকেট বোর্ডের এক কর্তা এখানে বলে গেলেন, ‘‘মনে হয় না ব্যাপারটা খুব গুরুতর।’’
শাহজাদ এ দিন অদ্ভুত একটা কৃতিত্বের মালিকও হলেন। ভাঙলেন শাহিদ আফ্রিদির রেকর্ড। দলের মোট রান সব চেয়ে কম থাকা অবস্থায় সেঞ্চুরি। আফগানিস্তানের স্কোর যখন ১৩১, শাহজাদ পৌঁছে যান সেঞ্চুরিতে।
তিনি আউট হলে অভিজ্ঞ মহম্মদ নবি ৬০ রান করে দলকে আড়াইশোর গণ্ডি পার করতে সাহায্য করেন। তারপর বল হাতেও লড়াই করলেন রশিদ খানরা। না হারলেও এই টাইয়ে আফগানিস্তান বুঝিয়ে দিল ভারতের দুর্বল দিকগুলো। সেই সঙ্গে দেখিয়ে দিল কীভাবে বুক চিতিয়ে লড়তে হয়। সত্যি এ দিন শাহজাদ, রশিদ খানদের হাত ধরে মরু শহরে তৈরি হলো আফগান রূপকথা।
Be the first to comment