টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হারের বদলা এশিয়া কাপে নিল ভারত। গতবছর সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হেরে গিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু এশিয়া কাপে ভারত শুরু করল পাকিস্তানকে হারিয়ে। পাকিস্তানের রান তাড়া করতে নেমে শেষের দিকে চাপ অনুভব করতে শুরু করে দেয় ভারত। শেষ ওভারে রবীন্দ্র জাদেজা ফিরে যাওয়ায় রক্তের গতি বাড়তে থাকে ভারত সমর্থকদের।কিন্তু হার্দিক পান্ডিয়া মাথা ঠান্ডা রেখে ছক্কা হাঁকিয়ে ভারতকে জিতিয়ে দেন। বল হাতে জাদু দেখান তিনি। ব্যাট হাতেও আসল সময়ে জ্বলে ওঠেন। হার্দিক পান্ডিয়া এখন অনেক পরিণত। ৫ উইকেটে প্রথম ম্যাচ জিতে শুরুটা ভালই করল ভারত।
রবিবার টস জিতে পাকিস্তানকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠায় ভারত। বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, পাকিস্তানের ব্যাটিং নির্ভর করে রয়েছে মূলত তিন জনের উপরে। দুই ওপেনার বাবর আজম, রিজওয়ান এবং তিন নম্বরে নামা ফকর জামান পাকিস্তানের নির্ভরশীল ব্যাটার। এদিন অবশ্য বাবর আজম (১০) ও ফকর জামান (১০) ব্যর্থ হলেও রিজওয়ান ৪৩ রান করেন। পাক উইকেট কিপারই সর্বোচ্চ রান করেন দলের মধ্যে। রিজওয়ানের পরে ইফতিকার আহমেদ (২৮) উল্লেখযোগ্য রান করেন। তাঁর পরে মিডল অর্ডারে কেউই সেভাবে রান পাননি। শেষের দিকে হ্যারিস রউফ (১৩*) ও শাহনাওয়াজ দাহানি (১৬) মারমুখী হয়ে ওঠায় পাকিস্তান করে ১৪৭ রান। যদিও পুরো ২০ ওভার খেলতে পারেনি পাকিস্তান। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই প্রথম বার ১০ উইকেট নিল ভারত। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে ভুবনেশ্বর কুমার ৪টি, হার্দিক পান্ডিয়া ৩টি, অর্শদীপ সিং ২টি এবং আবেশ খান ১টি উইকেট নেন।
শাহিন শাহ আফ্রিদি চোটের জন্য ছিটকে গিয়েছেন। অনেকেই বলেছিলেন, আফ্রিদি না থাকায় চাপ অনেকটাই কমে গিয়েছে ভারতের উপর থেকে। কিন্তু নাসিম শাহ ইনিংসের শুরুতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিলেন। তরুণ পাক পেসার শুরুতেই তুলে নেন লোকেশ রাহুলকে (০)। ক্রিজে সদ্য আসা বিরাট কোহলিকে দ্বিতীয় বলে প্রায় আউটই করে ফেলছিলেন নাসিম। অফ স্টাম্পের বাইরে বল করেছিলেন নাসিম। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে সমস্যা রয়েছে বিরাট কোহলির। খোঁচা দিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। স্লিপে দাঁড়ানো ফকর জামান ক্যাচ ফস্কান। জীবন ফিরে পান কোহলি। তখনও খাতাই খোলেননি তিনি। ইনিংসের শুরুর দিকে ঠিকঠাক টাইমিং করতে পারছিলেন না বিরাট। ব্যাটের বাইরের অংশে লেগে ভিতরের দিকে ঢুকে আসছিল বল। আউট হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছিল। লোকেশ রাহুলও ঠিক একইভাবে বাইরের বল টেনে এনে বোল্ড হন। কোহলির ক্ষেত্রেও তেমনই হতে পারত। কিন্তু শুরুর দিকের সমস্যা ধীরে ধীরে কাটিয়ে ওঠেন বিরাট।
তবে রোহিত ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রায় একই ভাবে আউট হন কোহলিও। ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন বিরাট। কিন্তু মহম্মদ নওয়াজকে তুলে মারতে গিয়ে নিজের উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে এলেন। মারার সময়ে টাইমিংও ঠিকঠাক হয়নি। লং অফে দাঁড়িয়ে থাকা ইফতিকার আহমেদকে বিন্দুমাত্র পরিশ্রম করতে হয়নি ক্যাচ ধরার জন্য। ৩৪ বলে ৩৫ রান করে ডাগ আউটে ফেরেন কোহলি। হঠাতই চাপ অনুভব করতে শুরু করে ভারত। তবে সূর্যকুমার যাদব ও রবীন্দ্র জাদেজা ৩৬ রান জুড়ে ইনিংস মেরামতির কাজ করেন। কিন্তু নাসিম শাহ এসে ফের জুটি ভাঙেন। সূর্যকুমার যাদবকে বোল্ড করেন নাসিম।
প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার আকিব জাভেদ বলেছিলেন, নাসিম শাহ উইকেটের দুই প্রান্তে সুইং করাতে পারেন। বিরাট কোহলিকে শুরুর দিকে সমস্যায় ফেলে দেন নাসিম। পরে বাবর তাঁকে দ্বিতীয় স্পেলের জন্য ফিরিয়ে আনলে ভারতের ইনিংসে ধাক্কা দেন তিনি। শেষ ৪ ওভারে জেতার জন্য ভারতের দরকার ছিল ৪১ রান।ভারতই হঠাত করে ম্যাচটা কঠিন করে ফেলে। নাসিম শাহ নিজের শেষ ওভারে নজর কাড়েন। পায়ে চোট নিয়েও ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় ফেলছিলেন নাসিম। রবীন্দ্র জাদেজা ও হার্দিক পান্ডিয়া ৫২ রানের পার্টনারিশপ গড়ে চাপ কমালেও জেতার সমীকরণ কঠিন হয়ে উঠছিল। শেষ ওভারে জাদেজা (৩৫) আউট হওয়ায় চাপ আরও বাড়ে। জেতার জন্য ৫ বলে ৭ রান দরকার, এই অবস্থায় হার্দিক পান্ডিয়া ত্রাতা হয়ে ওঠেন। ছক্কা হাঁকিয়ে ভারতকে জিতিয়ে দেন। ১৯.৪ ওভারে জেতার জন্য প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয় ভারত।
Be the first to comment