কত মোণ বাজি পোড়ে কালীপুজো বা দিওয়ালির রাতে? কতটা ধোঁয়া বিষিয়ে তোলে বাতাসকে? এই সব হিসেব কষার সময় এখন নয়। বিপদঘণ্টি বেজে গেছে অনেকদিন আগেই। ধোঁয়াশায় মোড়া রাজধানীকে দেখে বাকি রাজ্যগুলো অবাক হলেও, পরিবেশবিদদের সমীক্ষার রিপোর্ট স্পষ্ট করে দিয়েছে, গোটা দেশই ঢেকে গেছে দূষণের মোড়কে। শ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করছে বিষবাস্প। শ্বাসজনিত জটিল রোগ নয়, বরং দূষণের এই বাড়বাড়ন্ত মৃত্যুকেই আহ্বান করে আনছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের ১৫টা দূষিত শহরের মধ্যে ১৪ নম্বরে জ্বলজ্বল করছে ভারতের বিভিন্ন শহরের নাম। ইয়েল এবং কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিদদের মতে, দূষণের মাত্রায় বিশ্বের মধ্যে ভারত এগিয়ে এসেছে অনেকটাই।
সাম্প্রতিক কালে দূষণে জেরবার দিল্লি মহানগরীর ছবি বার বার উঠে এসেছে শিরোনামে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বহু জায়গায় বায়ুদূষণের মাত্রা বিপদসীমা ছাড়িয়েছে। এ নিয়ে সতর্কবার্তাও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যানবাহন, বিশেষত পুরনো গাড়ির ধোঁয়া থেকে দূষণ তো ছড়াচ্ছেই। কিন্তু শহরের নির্মাণস্থলগুলি যে ভাবে ক্রমশ দূষণের উৎস হয়ে উঠছে, তা নিয়েও উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ। কয়েক মাস আগেই ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’-এর এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ২০১৬ সালে রাজধানীতে বায়ুদূষণের ফলে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৫ হাজার মানুষের৷
শুধু রাজধানী শহর নয়, দূষণে দিল্লিকে রীতিমতো পাল্লা দিচ্ছে কলকাতাও৷ নির্দিষ্ট এলাকায় বাতাসের গুণমানের সূচক (এয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স) নির্ভর করে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা (পিএম ১০) ও ভাসমান অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম ২.৫) উপরে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কলকাতার বাতাসে দূষণের মাত্রা ন্যূনতম ৩৩৪। দীপাবলির সময় সেটা সর্বাধিক পৌঁছয় ৪২৫-এ। পিএম ১০-এর পরিমাণ ছিল ওই সময়ের মধ্যে সর্বাধিক ৪১৯ এবং গড়ে ২৭৮। পরিবেশবিদরা জানাচ্ছেন, কলকাতায় এই দূষণের পরিমাণ বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে। মার্কিন পরিবেশ রক্ষা সংস্থা (ইপিএ)-এর বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাতাসে এই দূষণের মাত্রা ১০০ টপকানো মানেই তা অস্বাস্থ্যকর। সেখানে ২০১-৩০০ পর্যন্ত পরিমাপকে বলা হচ্ছে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। সুস্থ মানুষেরও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা তৈরি হতে পারে এই পরিবেশে। শ্বাসের সঙ্গে দূষিত ধূলিকণা প্রবেশ করে নানা জটিল রোগও হতে পারে। দূষণের ফলে শিশু এবং বয়স্করা মারাত্মকভাবে শারীরিক সমস্যায় ভুগতে পারেন। হতে পারে শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি এবং ত্বকের সমস্যা।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানাচ্ছেন শুধু বায়ু দূষণ নয়, জলের স্বল্পতা ও দূষিত জলের কারণে গত দশ বছরে দেশের নানা জায়গায় প্রায় দু’লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ২০০০-২০১৬ সালের মধ্যে বাতাসে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়েছে ৬%। আশঙ্কা, ২০২০ সালের মধ্যে সেটা বর্তমানের দ্বিগুণ হবে। লাগামছাড়া বায়ুদূষণের জন্য ইতিমধ্যেই দিল্লি সরকারকে জরিমানা ২৫ কোটি টাকা জরিমানা করে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল (এনজিটি) বা জাতীয় পরিবেশ আদালত। পশ্চিমবঙ্গকেও ঠিক একই কারণে জরিমানা করে এনজিটি।
Be the first to comment