প্রতীকী ছবি,
গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো ভিডিও ফুটেজে ওদের আর্জি ছিল- “আমেদের বাঁচান”। ২৩ অক্টোবরের সেই ভিডিও ফুটেজই বাঁচিয়ে দিল ১১ নিরীহ শ্রমিককে। যাঁরা প্রায় তিন মাস ধরে ইরানে নরক যন্ত্রণা সহ্য করেছিলেন। বাংলা থেকে রোজগারের আশায় ইরানের চাবাহের পারি দিয়েছিল প্রায় ২২ স্বর্ণ কারিগর। তাদের বেশিরভাগেই রাজ্যে ফিরলেও ১১ জনকে আটকে দেয় ইরানের বেসরকারি সংস্থা। তাদের পাসপোর্ট, ভিসা,ভোটার কার্ড কব্জা করে অসহায় করে দেওয়া হয়। বুধবার সকালে সেই ১১ জনই ফিরলেন। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে ১১ বিধ্বস্ত মুখকে নিয়ে গেল অ্যান্টি হিউম্যান ট্রাফিকিং ইউনিট।
ইরানে ভারতীয় দূতাবাসের হস্তক্ষেপে অক্ষত অবস্থায় দেশে ফিরতে পারলেন ১১ জন। যাদের প্রত্যেকের বয়স ৩০ -এর কাছাকাছি। স্বর্ণ কারিগরদের কদর ইরানে বেশি,এই বুঝিয়েই তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। অনেক টাকা রোজগারের টোপ দিয়ে হুগলীর গিয়াসুদ্দিন মালিক ২২ কারিগরকে নিয়ে যায়। ইরানের “লিপারটালা” নামে একটি বেসরকারি সংস্থার হয়ে কাজ শুরু করে ২২ বাঙালি শ্রমিক। ১ মাসের মধ্যেই কাজ না জানার কারণে কয়েকজন শ্রমিককে দেশে পাঠিয়ে দেয় ওই সংস্থা। কিন্তু, ১১ কারিগরকে রেখে দেওয়া হয়।
ইরানের মুদ্রার দাম কমে যাওয়ায় কারিগরদের দেশে ফেরানো হচ্ছিল বলে খবর। কিন্তু, ১১ শ্রমিক ফিরলেও বাকিদের টাকার অভাবের কারণ দেখিয়ে রেখে দেয় ওই ইরানী সংস্থা। ফেরার আশা ক্রমশ ক্ষীন হতে থাকায় ভিডিও কল, ভয়েস ম্যাসেজে নিজেদেরর দুঃসহ পরিস্থিতির কথা জানাতে থাকেন কারিগররা।
বুধবার কলকাতায় ফিরে এসে তাঁরা জানালেন, শেষ ২০ দিন ১১ জনই কার্যত অভুক্ত ছিলেন। পানীয় জলও দেওয়া হয়নি। একটা ঘরে কোনওরকমে থাকতে হত, তিন মাস ধরে বেতন বন্ধ থাকায় বাইরে গিয়েও কিছু কেনার মত পরিস্থিতি ছিল না। এছাড়া, অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে তাঁদের গ্রেফতার করবে ইরান পুলিশ বলেও ভয় দেখান হয়।
ফেরত আসা ১১ জন কারিগরের মধ্যে রয়েছেন গিয়াসুদ্দিন মালিকও। কেন ট্যুরিস্ট ভিসার মাধ্যমে ২২ জন বাঙালিকে ইরানে নিয়ে যাওয়া হল? না কি এর পিছনে রয়েছে বড় চক্র? আপাতত সেই সব প্রশ্নের মুখে গিয়াসুদ্দিন।
প্রাণ নিয়ে ফিরতে পেরেছেন তাঁরা। ১১ জনের বেশিরভাগই হুগলি, হাওড়া ও বীরভূমের বাসিন্দা। ২৩ অক্টোবর ভিডিও মেসেজ দিয়ে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছিলেন যুবক মইনুদ্দিন শেখ। তিন মাসের নরক যন্ত্রণা ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করতে চান তিনি। জানালেন, আর বিশ্বাস করে রোজগারের আশায় বিদেশ পাড়ি নয়।
Be the first to comment