পিয়ালি আচার্য,
দেশ বিদেশ থেকে বহু বিশিষ্ট শিল্পপতি উপস্থিত হয়েছেন নিউ টাউনের কনভেনশন সেন্টারে। বিশ্ববঙ্গ শিল্প সম্মেলনে বক্তব্যও রাখেন তাঁরা। প্রত্যেক শিল্পপতিই মমতা বন্দ্যোপাধ্যের নেতৃত্বে বাংলা যে এগিয়ে যাচ্ছে সেকথা বলেন।
সঞ্জীব গোয়েঙ্কা-
প্রথমে বক্তব্য রাখেন সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। তাঁর ৫৫টি বিভিন্ন ধরনের শিল্প রয়েছে, মোট ৪৫ হাজার মানুষ তাঁর বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কাজ করে। তিনি বলেন, নতুন বাংলা গড়ে উঠছে। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করে তিনি তাঁর প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে ভূমিকা উল্লেখযোগ্য বলেন। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিশেষ করে সড়ক পরিবহণে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে বাংলার। একটিও শ্রম দিবস নষ্ট হয় না বাংলায়। বনধ, হরতাল এখন অতীত। গত ৩ বছরে তিনি ২৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব ও ভিশনের প্রশংসা করে বলেন, ইন্ডিয়া টুডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেশের মধ্যে সেরা মুখ্যমন্ত্রীর শিরোপা দিয়েছে। দেশ বিদেশের শিল্পপতিদের সামনে বাংলার শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েঙ্কা বলেন, বাংলা মানেই বানিজ্য। শিল্পস্থাপনে বাংলা বিশেষভাবে আছে। তিনি আহ্বান জানান, আসুন বিনিয়োগ করুন, শিল্প গড়ে তুলুন বাংলায়।
মুকেশ আম্বানি-
বক্তৃতার শুরুতেই জয় বিশ্ববাংলা বলে উপস্থিত মানুষের মন জয় করে নেন মুকেশ আম্বানি। কলকাতাকে সিটি অব জয়, সিটি অব হোপ বলেন তিনি। বর্তমান সময়ে কলকাতার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন তথা উন্নয়ন হয়েছে বলে জানান তিনি। বলেন বাংলা তথা কলকাতাতেই হয়েছিলো রেনেসাঁস। গত বছরের শিল্প সম্মেলনে ওয়েস্ট বেঙ্গলকে বেস্ট বেঙ্গল বলেছিলেন তিনি। সেই বক্তব্যের পুনারাবৃত্তি করেন তিনি। বলেন, জিডিপি ১০ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। আবারও তিনি মমতাকে বলেন, আপনার সুযোগ্য নেতৃত্বে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৯.১%, যা জাতীয় গড়ের থেকে বেশী। কৃষি ও কৃষকদের জন্য আপনি অভূতপূর্ব কাজ করেছেন। এমএসএমই সেক্টরে বাংলা ভারতে নম্বর ওয়ান। ২০১৯-এ হয়তো ভারত পঞ্চম স্থানে কিন্তু ২০৪৭ এ অর্থনীতিতে চীনকে ছাড়িয়ে ভারত প্রথম স্থান অধিকার করবে। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর ডিটারমিনেশনের প্রশংসা করে তাঁর টিমের ডেডিকেশনের কথাও বলেন। তিনি বলেন ডিজিটাল টেকনোলজিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। বাংলার ১০ কোটি মানুষের কাছে রিল্যায়েন্স অত্যন্ত বিশ্বস্ত সঙ্গী। রিলায়েন্স জিও-র জনপ্রিয়তার কথা উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ২০১৬ সালে বাংলায় আমাদের বিনিয়োগ ছিল সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। সেই জায়গায় এখন সেই বিনিয়োগ ২৮ হাজার কোটিতে পৌঁছেছে। আমরা আগামী দিনে আরও ১০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করবো। আমরা বাংলায় বিনিয়োগ করতেই থাকবো, এই কথা দেন মুকেশ আম্বানি।
সজ্জন জিন্দাল-
জেএসডব্লু গ্রুপের কর্ণধার সজ্জন জিন্দাল বলেন, কলকাতা শুধু আমার কাছে স্পেশ্যাল এই জন্যই নয় যে, আমি এখানে জন্মেছি বা বিয়ে করেছি। যখনই আমি এখানে আসি অনেক অনেক ভালোবাসা পাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন তিনি বাংলায় বড়ো বড়ো শিল্প টানার চেষ্টা করছেন। এছাড়া পূর্ব ভারত মানেই যে ভবিষ্যৎ ভারত সেকথাও বলেন তিনি। এখানে শিল্প স্থাপনের প্রচুর সুযোগ আছে। সজ্জন বলেন, জেএসডব্লু বাংলায় বিনিয়োগ করতে চেয়েছিলো কিন্তু কাঁচামাল না পাওয়ায় আমরা এগোতে পারছি না। আমরা সিমেন্ট প্ল্যান্ট করছি। আর সিমেন্ট প্ল্যান্টের যা বিনিয়োগ ছিলো (২.৪ মিলিয়ন টন থেকে হবে ৪.৮ মিলিয়ন টন) এখানে বিনিয়োগ হবে ৭৫০০ কোটি টাকা। সজ্জন বলেন তাঁর স্ত্রী সঙ্গীতা মুখ্যমন্ত্রীর কন্যাশ্রী প্রকল্পে বিশেষ উদ্যোগী। তাঁরা স্কুল ও হসপিটালে বিনিয়োগ করতে চান। পশ্চিম মেদিনীপুরে পিপিপি মডেলে তাঁরা গড়ে তুলছেন অত্যাধুনিক হসপিটাল। যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ডাক্তাররা আসবেন। এছাড়া সজ্জনের স্ত্রী সঙ্গীতা দেশভাগ নিয়ে একটি মিউজিয়াম তৈরি করতে আগ্রহী এবং সেটির সবুজ সংকেত মিলিছে বলে সূত্রের খবর।
রাজন ভারতী মিত্তাল-
এয়ারটেলের অন্যতম কর্ণধার রাজন বলেন, বিজিবিএস-এ এই আমার প্রথম আসা। দীর্ঘসময় পরে কলকাতায় এসে আমার রীতিমতো তাক লেগে গেছিলো। এত পরিবর্তন হতে পারে? শহরের বহিরঙ্গে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে। এছাড়া কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বাংলা খুব উন্নতি করেছে। এখানকার জিডিপি জাতীয় জিডিপি গড়ের থেকে অনেক ভালো। তিনি মনে করিয়ে দেন ১৯৯৫ সালে প্রথম মোবাইল কলকাতা শহর থেকেই শুরু হয়েছিলো। এয়ারটেলের ৪জি পরিষেবাও আমাদের এই কলকাতা থেকেই শুরু হয়। এই জিজিটাল নেটওয়ার্কে আমরা ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছি। এতে ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তিনি সজ্জন জিন্দালের স্ত্রী সঙ্গীতার মিউজিয়াম করার পরিকল্পনার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক উন্নয়নে কর্পোরেট জগতের বিশেষ ভূমিকা আছে। মুখ্যমন্ত্রীকে মুক্তমনা বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাই শুধু শিল্পের জন্য রেডি তাই নয় মুখ্যমন্ত্রীও শিল্পের জন্য রেডি।
নিরঞ্জন হীরানন্দানি-
মুম্বইয়ের এই বিশিষ্ট শিল্পপতি প্রথমেই বললেন বাংলার মানুষ অত্যন্ত সৌভাগ্যবান এমন একজন ভিশনারি মুখ্যমন্ত্রী পেয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যকে সবসময় সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন। তিনি সেরা মুখ্যমন্ত্রী, সেরার সেরা মুখ্যমন্ত্রী। হিন্দিতে বলা যায় সুপার সে উপর। পাইপলাইন গ্যাসে তাঁদের ৩ হাজার কোটি টাকা বাংলায় বিনিয়োগ আছে। বিজিবিএসের মঞ্চে দাঁড়িয়ে এই শিল্পে তিনি আরও ২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের কথা বললেন।
ওয়াই.কে.মোদী-
ক্লিন গ্যাস, ক্লিন এনার্জি এই স্লোগান দিয়ে ওয়াই.কে.মোদী বললেন তাঁরা আগামী ৩ বছরে ১৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবেন। তিনিও মুখ্যমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, বাংলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কোনও সমস্যা নেই, খুবই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। কোনও নকশাল সমস্যা নেই। তাই এখানে শিল্পস্থাপন সম্ভব।
সঞ্জীব পুরি-
সঞ্জীব পুরি বললেন বাংলা এগিয়ে আছে এগিয়ে থাকবে। ইতিমধ্যে ১৭ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে আরও ৪ হাজার বিনিয়োগ করবে তারা।
মিঃ কৃষ্ণাণ-
কোকাকোলা গ্রুপের প্রতিনিধি কৃষ্ণাণ বলেন, আমরা ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছি বাংলায়। শিলিগুড়িতে তৈরি হবে কোকাকোলা প্ল্যান্ট।
রুদ্র চ্যাটার্জি-
লক্ষ্মী টি গ্রুপের কর্ণধার তরুণ এই শিল্পপতি হেলথ ও এডুকেশন সেক্টরে ৩৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগের কথা বলেন। এইভাবে বিজিবিএস-এর প্রথম দিনেই ৪০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এলো।
এছাড়া আদানি গ্রুপের করণ আদানি, এইচ পি এলের ডঃ পূর্ণেন্দু চ্যাটারজি, ফিকির প্রেসিডেন্ট সন্দীপ সোমানি তাঁদের বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা ও উন্নয়নের লক্ষে এগিয়ে যাওয়ার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
Be the first to comment