দিদি স্কুটারে, পায়ে হেঁটে ঘুরছেন, নির্বাচনে তো হেরে যাবেন, পায়ে হেঁটেই ঘুরতে হবে : জে পি নাড্ডা

Spread the love

লক্ষ্য সোনার বাংলা। এই লক্ষ্যে বিজেপি সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা এবার মিলিত হলেন বাংলার বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে। মঞ্চে দেখা গেল প্রাক্তন স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা ড. প্রদীপ মিত্রকে। ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। আর বিজেপি নেতাদের মধ্যে জগৎপ্রকাশের পাশে ছিলেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা বাংলার পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। ছিলেন বিজেপি নেতা অরবিন্দ মেনন, অমিত মালব্য, স্বপন দাশগুপ্ত, অনির্বাণ গাঙ্গুলি, রন্তিদেব সেনগুপ্ত প্রমুখ। এদিনের সায়েন্স সিটির দর্শকাসন ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। কি বললেন জগৎপ্রকাশ নাড্ডা? বললেন, দিদি, আপনার এত রাগ কেন? মমতা দিদি যে ভাষা প্রয়োগ করেন তা বাংলার সংস্কৃতি নয়, বলেন জে পি নাড্ডা। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে বিশেষণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডানলপ ময়দানে করেছিলেন, তাকেই কটাক্ষ করেন তিনি। পাশাপাশি এও বলেন, আমার নামের পাশে যে অলংকার বসান তা তো বলাই বাহুল্য।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জে পি নাড্ডার ছিল ঠাসা কর্মসূচি। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সওয়ার ইলেকট্রিক স্কুটারে। কথা ছিল, স্কুটার চালাবেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি চালিয়েও ছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং ড্রাইভারের সিটে বসে আবারও বার্তা দিতে চান যে, রাজ্যে চালকের ভূমিকায় এখনও তিনি অদ্বিতীয়া। তবে তাঁর এই স্কুটার চালানো বা স্কুটারে সওয়ার হওয়াকে ব্যঙ্গ করতে ছাড়েননি জে পি নাড্ডা। তিনি বলেন, দিদি এখন স্কুটারে ঘুরছেন। পায়ে হেঁটে ঘুরছেন। আসলে এবারের নির্বাচনে দিদি তো হেরে যাবেন, তাই পায়ে হেঁটেই ঘুরতে হবে। বিনামূল্যে টিকা দেওয়া নিয়েও যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, সে সম্পর্কে আলোকপাত করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। বলেন, টিকা হবে, লাগবে। তার পাশাপাশি তোলাবাজির বিরুদ্ধে টিকা লাগবে, চাল চোরের বিরুদ্ধে টিকা লাগবে, ত্রিপল চোরের বিরুদ্ধে টিকা লাগবে, কাটমানির বিরুদ্ধে টিকা লাগবে। একটা টিকা নয়, পাঁচ পাঁচটি টিকা লাগবে। মে মাস আসুক, সব টিকা পেয়ে যাবেন।
আমফানের টাকা নিয়ে দুর্নীতির কথা আবারও বলেন নাড্ডা। বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমফানের জন্য প্রথমে ১ হাজার কোটি, পরে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা দিয়েছেন। অথচ দিদি বলেন, টাকা কই, টাকা কই। এই আমফানের টাকা সঠিক জনগণের কাছে যায়নি। তাই টিকা তো লাগবেই। মমতা দিদির এত ভয় কেন? আসলে দুর্নীতি করতে করতে, কাটমানি নিতে নিতে, ভ্রষ্টাচার করতে করতে, চাল চুরি করতে করতে তৃণমূল কার্যকর্তারা এমন পর্যায়ে চলে গেছেন যে, তাদের ঘরে বসিয়ে দেওয়া আবশ্যিক হয়ে গেছে। তাই বিজেপিকে সুযোগ দিন। পদ্ম ফুটতে দিন। কাজ করতে দিন। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের আরাম করতে দিন। সোনার বাংলা তৈরি হলে সব নেতৃত্ব, স্বচ্ছ সরকার, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। বাংলার মনীষীদের কথা উল্লেখ করেন জে পি নাড্ডা বলেন, একসময় বাংলা ছিল মেধা, সংস্কৃতি, বিপ্লবের কেন্দ্রভূমি। মহামতি গোখেলের বক্তব্যকে তুলে ধরে তিনি বলেন, হোয়াট বেঙ্গল থিঙ্কস টুডে, ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুমরো। কিন্তু এখন বাংলা থেকে আইএএস, আইপিএস বেরোয়। কোথায় বাংলার সেই মেধা? আজ দুর্নীতি, কাটমানি, সিন্ডিকেট কালচার করে বিনিয়োগও স্তব্ধ হয়ে গেছে বাংলায়। তাই দিদিকে কারখানা উদ্বোধন করতে কখনও দেখা যায় না।
বাংলা নিজেকে মেয়েকেই চায়, এই স্লোগান দিয়েছে তৃণমূল। বললেন, মমতা বাংলার মেয়ে, সে তো সকলেই আমরা জানি। কিন্তু ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স সবচেয়ে বেশি বাংলায় হয়। মানবপাচার, অ্যাসিড অ্যাটাক এগুলিও বাংলাতেই সবচেয়ে বেশি। ধর্ষণে বাংলা দ্বিতীয় স্থানে। আর অনথিভুক্ত ধর্ষণে বাংলা প্রথম স্থানে। তাহলে বাংলার সমস্ত মেয়েদের কথা, সমস্ত দিদিদের কথা কি বাংলার দিদির ভাবা উচিত ছিল না? আমরা চাই ডবল ইঞ্জিন সরকার। উপরে কেন্দ্রে থাকবেন মোদিজি, আর বাংলায় পদ্ম আপনারা পদ্ম ফোটাবেন। আবারও তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোষণের রাজনীতির কথা উল্লেখ করে মহরম ও রাম মন্দিরের শিলান্যাসের সময় রাজ্য সরকারের দ্বিচারিতাকে কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, বাংলার মানুষদের একসময় রয়েল বেঙ্গল টাইগার বলা হত। এখানেই বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগার, বঙ্কিমচন্দ্র, শ্যামাপ্রসাদ দেশ ও দুনিয়াকে দিশা দেখিয়েছে। সেই মাটিকে প্রণাম করে নাড্ডাজি বলেন, আমি সোনার বাংলার ছবি আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। যেখানে দুর্নীতি থাকবে না, যেখানে থাকবে বিকাশ বা উন্নয়ন। আয়ুষ্মান ভারত, কিষান সম্মাননিধি, জল জীবন মিশন, উজ্জলা যোজনা, জনধন যোজনা ইত্যাদি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রভূত উন্নয়ন করেন তার কথা বারবার উল্লেখ করেন জে পি নাড্ডা। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, তোলাবাজির টাকা কার কাছে যায়? দর্শকাসন থেকে উত্তর আসে ভাইপোর কাছে। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শোভন চ্যাটার্জি, বৈশাখী ব্যানার্জি। কিন্তু খানিকক্ষণ থেকে তাঁরা চলে যান।
সোনার বাংলা নির্মাণ করার জন্য আপনার পরামর্শ দিন। মিস কলড দিন ৯৭২৭২৯৪২৯৪। অভিনব এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জে পি নাড্ডা। সকাল ১০টাতে হেস্টিংস-এর নির্বাচনি কার্যালয় থেকে নিজেই ড্রপ বক্সের মধ্যে আপনার পরামর্শ শীর্ষক কার্ডটি ফেলে উদ্বোধন করেন এই অনুষ্ঠানের। পাশাপাশি সুদৃশ্য এলইডি ট্যাবলোরও পতাকা তুলে সূচনা করেন। বলেন, ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে এই ট্যাবলোগুলি যাবে। এবং সেখানে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া হবে। এইভাবেই মানুষের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনি ইস্তেহার তৈরি হবে। সোনার বাংলা তৈরিতে সব মানুষের পরামর্শ, সব মানুষের উপদেশ, সব মানুষের চিন্তা, মনন, মনীষাকে কাজে লাগানো হবে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*