জগাছার বাৎসরিক শীতলা ও মনসা পূজা ৮৯ তম বর্ষে পদার্পণ করলো

Spread the love

অংশুমান চক্রবর্তী,

জগাছা মায়ের ছেলে ক্লাবের তত্ত্বাবধানে জগাছা গ্রামবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বাৎসরিক ঁশ্রীশী শীতলা ও মনসা পূজা পদার্পণ করলো ৮৯তম বর্ষে। এ অঞ্চলের বাসিন্দা রবীন মালিক (রায়), বিল্ব মালিক প্রমুখের উদ‍্যোগে এই পূজার সূচনা। আগে খড়ের ছাউনিতে দেবীর ছোট্টো প্রতিমা পূজিত হতো। বৈশাখ মাসের যে কোনো একটি শনিবার বাছাই করে বাৎসরিক পূজা অনুষ্ঠিত হতো। প্রতি বছর নতুন প্রতিমা আনা হতো। আর সারা বছর থাকা প্রতিমা অদূরবর্তী টস কোম্পানির পুকুর পাড়ে বসিয়ে দিয়ে আসা হত। কারণ শীতলা দেবীর প্রতিমা জলে ফেলতে নেই। এখন ক্লাবের নিজস্ব পুকুর পাড়ে প্রতিমা রাখা হয়। মন্দিরের পাশে স্হায়ী মনসা গাছ দেবীরুপে পূজা পেতেন। এখনো সেই রীতি চলে আসছে।

তবে আস্তে আস্তে এই অঞ্চলের জনবসতি যেমন বেড়েছে , পূজাও প্রচুর শ্রীবৃদ্ধি পেয়েছে। মন্দির ও হয়েছে মার্বেল টাইলস নির্মিত। এলাকাবাসীর বিশ্বাস জাগ্রতা মায়ের কাছে মানত করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়। বর্তমানে এই বাৎসরিক পূজা অনুষ্ঠিত হয় চারদিন ধরে। প্রতিমা আসে কুমার টুলি থেকে। প্রতিমা শিল্পী তপন রুদ্রপাল। কোনো একজন ভক্ত প্রতিমা দান করেন এবং পূজার যাবতীয় খরচ বহন করেন। অন‍্যান‍্য অনুষ্ঠান যেমন সাংস্কৃতিক , বস্ত্রদান , প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার দান , দরিদ্র নারায়ণ সেবা প্রভৃতি গ্রামবাসীর দানে হয়ে থাকে। বাৎসরিক পূজার দিন ভোরবেলায় অনেকেই যান গঙ্গায়। মায়ের স্নানের জল আনতে। বাঁকে জল নিয়ে আসেন হেঁটে হেঁটে। সকাল থেকেই ভক্তবৃন্দ পূজার ডালি সাজিয়ে মায়ের কাছে পূজা দিতে আসেন। পূজা শুরু হয়ে যায় দশটা নাগাদ। দন্ডী কাটেন প্রায় শদুয়েক মানুষ।

পূজা শেষে শুরু হয় শীতলা মায়ের গান। আগে সন্ধ‍্যারতির পরে হতো এখন অনুষ্ঠানে র সংখ‍্যা বাড়ায় বিকালেই এটা করা হয়।
সন্ধ্যায় আরতির পর ফলপ্রসাদ বিতরণ করা হয়। এরপর থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এবার থাকছে মহিলা সদস্যদের অভিনীত নাটক। দ্বিতীয় দিন ছোটো ছোটো ছেলে মেয়েদের বসে আঁকো প্রতিযোগিতা, মায়ের দ্বিপ্রাহরিক পূজা, বিকালে মা মনসার গান। সন্ধ্যায় আরতির পর ভোগপ্রসাদ লুচি হালুয়া বিতরণ। এরপর বস্ত্র বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এবার থাকছে পুরুষ সদস্যদের অভিনীত নাটকও।

তৃতীয় দিন দ্বিপ্রাহরিক পূজা , সন্ধ্যায় আরতির পর ভোগপ্রসাদ পায়েস বিতরণ। এরপর বিচিত্রানুষ্ঠান। চতুর্থ দিন দ্বিপ্রাহরিক পূজা, ও সন্ধ্যায় মাকে খিচুড়ি, আলুর দম ( কখনো বা লাবড়া ) চাটনি পায়েস, মিষ্টি সহযোগে ভোগদানের পর শুরু হয় নর নারায়ণ সেবা। আয়োজন থাকে প্রায় আট – নহাজার মানুষের খাওয়ার। অতিথি দের চেয়ার টেবিলে বসিয়ে খুব যত্নসহকারে খাওয়ানো হয়। চারদিনের বাৎসরিক অনুষ্ঠান শেষে এই প্রতিমা মন্দিরে পূজিত হতে থাকেন সারাবছর দুই বেলা ফল প্রসাদ উপাচারে। প্রতি মঙ্গলবার ভক্তদের দানে বিতরিত হয় খিচুড়ি ভোগ, পায়েস অথবা পোলাও।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*