পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালকে সরানোর দাবিতে সংসদে স্বতন্ত্র প্রস্তাব আনল তৃণমূল। ১৭০ ধারায় রাজ্যসভায় এই প্রস্তাব এনেছেন তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। তিনিই রাজ্যসভায় তৃণমূলের মুখ্যসচেতক। গত মাসে কালীঘাটে সাংসদদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সেই বৈঠক থেকে বেরিয়েই সাংসদ তথা তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “রাজ্যপালের ভূমিকা ভয়ঙ্কর জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে। আমাদের প্রতি মুহূর্তে এটাই মনে হচ্ছে, ওনাকে নির্দেশ দিয়ে পাঠানোই হয়েছে রাজ্য সরকারকে বিব্রত করার জন্য। আমাদের এবার আরও বেশি যুক্তি দিয়ে লোকসভা, রাজ্যসভায় কিছু প্রস্তাব আনা যায় কি না তা নিয়ে ভেবে দেখা হবে। সেটা সুখেন্দুশেখর রায় দায়িত্ব নিয়ে করবেন।”
এরপরই সংসদে অধিবেশন শুরুর প্রথম দিনই সেন্ট্রাল হলে রাষ্ট্রপতিকে এ বিষয়ে জানান সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলেন অপর তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। অবশেষে শুক্রবার স্বতন্ত্র প্রস্তাব আনা হল রাজ্যসভায়। আপাতত এই স্বতন্ত্র প্রস্তাব নিয়ে এগোনোর জন্য রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের সম্মতি প্রয়োজন। তিনি যদি এতে সম্মতি দেন তারপরই এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে। এই চিঠির মুখ্য বিষয়ই হল, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে যেন ফিরিয়ে নেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতিই যেহেতু এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তাই চিঠিতে তাঁর কাছেই সে আবেদন জানানো হয়েছে।
তৃণমূল যে সংসদে এরকম একটি বিশেষ প্রস্তাব আনবে তা আগে থেকেই জানিয়েছিল দল। সংসদের বাজেট অধিবেশনেও বিষয়টি উত্থাপ্পনের ইঙ্গিত ছিল। এরইমধ্যে রাজ্যসভার অধিবেশন চলাকালীন তৃণমূল সাংসদদের পেশ করা রাজ্যপাল নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে দেন রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান। এই প্রস্তাব খারিজের কারণে রাজ্যসভা থেকে ওয়াক আউটও করেন তৃণমূল সাংসদরা।
সে সময়ই রাজ্যসভায় তৃণমূলের মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় বলেছিলেন, “রাজ্যসভায় তামিলনাড়ু সরকারের আনা একটি বিলে সেই রাজ্যের রাজ্যপাল সই করেননি। সংসদে সেই প্রসঙ্গ তোলেন ডিএমকে সাংসদ। তখন আমরা বলি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালও অনেকগুলি বিল ও ফাইল সই না করে আটকে রেখেছেন। তাই সংসদে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করতে দিতে হবে। কিন্তু রাজ্যসভার চেয়ারম্যান রাজি না হওয়ার কারণে আমরা দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিবাদ করি। এরপর বিরোধীরা সম্মিলিতভাবে ওয়াক আউট করে।”
গত কয়েকদিনে রাজ্যের সঙ্গে রাজভবনের তরজা চরমে উঠেছে। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় তাঁর কর্তব্য, এক্তিয়ার থেকে সরে গিয়ে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের বশংবদের ভূমিকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করে তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে সরব হন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা থেকে সেই তরজার আঁচ এবার দিল্লিতেও পৌঁছে গেল।
Be the first to comment