সোমবার বিকেলেই নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ‘দুর্নীতিগ্রস্ত লোক। জৈন হাওয়ালা কেসের চার্জশিটে নাম রয়েছে রাজ্যপাল। আর তার জবাব দিতেই সোমবার সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন রাজ্যপাল। সেখানে পাল্টা তাঁর দাবি, হাওয়ালা চার্জশিটে জগদীপ ধনখড় নয় নাম ছিল যশবন্ত সিনহার। যিনি পরে মুক্ত হন। কিন্তু তাঁর নাম চার্জশিটে ছিল না। এখনও অবধি কেউ এই ঘটনায় দোষীও প্রমাণিত হননি। ধনখড়ের দাবি, নিছক চাঞ্চল্য তৈরি করতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য।
এদিন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন তা মানুষের মধ্যে চাঞ্চল্য তৈরি করতে করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। হাওয়ালা চার্জশিটে আমার নাম নেই। আমার বিরুদ্ধে কোনও তথ্য প্রমাণও নেই। মানুষের সামনে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে। এটা আমি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আশা করিনি।” একইসঙ্গে মিডিয়ার দিকেও আঙুল তোলেন জগদীপ ধনখড়। তাঁর কথায়, ‘আমি কখনও ভাবিনি এ রাজ্যে মিডিয়া এতটা চুপ থাকবে। কেন প্রশ্ন করা হল না কোন চার্জশিটের কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন জানতে চাওয়া হল না ওই কেসে আদালত কী রায় দিয়েছে।’
প্রসঙ্গত, সোমবার নবান্নে আচমকাই রাজ্যপাল প্রসঙ্গ উঠতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিস্ফোরক দাবি করেন। মমতা বলেন, “হি ইজ আ কোরাপ্টেড ম্যান। এই গভর্নরের নাম জৈন হাওয়ালা কেসেও ছিল। এখনও পিআইএল রয়েছে। এখনও এর চূড়ান্ত শুনানি হয়নি। আর কী জানার আছে!”
আর এর কিছুক্ষণের মধ্যেই টুইটারে রাজ্যপাল লেখেন, তিনি রাজভবনে সাড়ে ৬টায় সাংবাদিক সম্মেলন করবেন। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্যপাল বলেন, চার্জশিটে তাঁর নাম থাকার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। খনখড়ের বক্তব্য, “সেখানে অজিত পাঁজা, যশবন্ত সিনহার নাম ছিল। যদিও পরে তাঁরা দু’জনই মুক্ত হন।” বরং তাঁর দাবি, উত্তরবঙ্গ সফর সেরে ফেরার পরই তিনি বিধানসভা অধিবেশনের খসড়া হাতে পান। যা তাঁকে আগামী ২ জুলাই অধিবেশনের শুরুতে পড়তে হবে। তা নিয়ে তিনি দ্বিমত পোষণ করাতেই এই ধরনের কথা উঠছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সাল। কেন্দ্রে তখন নরসিমা রাওয়ের সরকার। তখন হাওয়ালা কারবারের কথা প্রকাশ্যে আসে। দেশজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। দেশের তাবড় নেতা মন্ত্রীর নাম জড়িয়ে যায় এই কেলেঙ্কারিতে। সেই ঘটনায় উঠে এসেছিল তৎকালীন জনতা দলের সাংসদ জগদীপ ধনখড়ের নামও। যদিও এখনও পর্যন্ত অভিযুক্তের তালিকা দীর্ঘ হলেও দোষী প্রমাণিত হননি কেউই।
এদিন রাজ্যপালকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন যদি আপনার দাবি সত্যি হয় এবং মুখ্যমন্ত্রী দাবি মিথ্যে হয়, তাহলে কোনও আইনি পদক্ষেপ করবেন? উত্তরে জগদীপ ধনখড়ের আবেগতাড়িত উত্তর, ‘কোনও আইনি পদক্ষেপ করা হবে না। কারণ আমি তাঁকে ছোট বোন মনে করি। শ্রদ্ধা করি, সম্মান করি। কিন্তু, তিনি যা বলেছেন তা সত্য নয়। চার্জশিটে নাম ছিল রাজনীতিবিদ যশবন্ত সিনহা ও অজিত পাঁজার। পরে তাঁরা অভিযোগ মুক্ত হন। কখনও আশা করিনি এমন ভয়ঙ্কর অভিযোগ এনে উত্তেজনা তৈরি করার চেষ্টা করবেন মমতা। এই ধরণের মন্তব্য করার আগে যশবন্ত সিনহার মতো নেতার সঙ্গে শলা–পরামর্শ করা উচিত ছিল তাঁর। ছোট বোনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া যায় না।’
Be the first to comment