উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে ফের রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ফের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে নিশানা করে টুইট করলেন রাজ্যপাল। শনিবার টুইটারে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় লেখেন, রাজ্যে আইনের শাসন নেই। ২৫ জন উপাচার্য নিয়োগ করা হল অথচ এ নিয়ে রাজ্যপালের কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। যদিও এর আগেই এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, সবরকম বিধি মেনেই নিয়োগ করা হচ্ছে। আইনের বাইরে কোনও সিদ্ধান্তই নেওয়া হচ্ছে না।
এর আগে গত ৩০ ডিসেম্বর টুইটারে ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের তালিকা টুইট করে রাজ্যপাল জানিয়েছিলেন নিয়ম না মেনে এখানে উপাচার্য নিয়োগ করা হয়েছে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত করলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কেও। শনিবার টুইটারে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তীর নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। টুইটারে লেখেন, ‘২৮ অগস্ট নোটিফিকেশন জারি করে দ্বিতীয়বার চার বছরের জন্য সোনালি চক্রবর্তীকে উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে। স্বজনপোষণের নজির এটা। ১৬ সেপ্টেম্বর এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন চান্সেলার। ব্রাত্য বসু এ নিয়ে কোনও জবাব দেননি।’
যদিও গত ২৬ ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এই নিয়োগসংক্রান্ত প্রশ্ন প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন, “আচার্য অর্ধসত্য বলছেন। অর্ধসত্য মিথ্যার থেকেও ভয়ঙ্কর। ওনার কথা অনুযায়ী এ কথা ঠিক যে সমস্ত উপাচার্যকে রাজ্য সরকার নিয়োগ করছে দ্বিতীয়বারের জন্য। নিয়ম কী? নিয়ম হল দ্বিতীয়বারের জন্য অনুমোদন রাজ্য সরকার করতে পারে। এই বিজ্ঞপ্তি যখন আমরা জারি করছি একইসঙ্গে আমরা জানাচ্ছি যতক্ষণ না নতুন কোনও উপাচার্য আসছেন এই উপাচার্য অস্থায়ী পদে কখনও তিন বছর, কখনও চার বছর। কারও ক্ষেত্রে দু’ বছর আবার কারও ক্ষেত্রে ৬ মাস এইভাবে নোটিফিকেশনটা করছি। অর্থাৎ এই প্রতিটি নিয়োগ অস্থায়ী এবং যতক্ষণ না স্থায়ী উপাচার্য আসছেন সেই সময়ের জন্যই।”
কিন্তু কেন স্থায়ী উপাচার্য আনা হচ্ছে না সে প্রসঙ্গেও ব্রাত্য বসুর বক্তব্য ছিল, “বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের বিধি হচ্ছে তিনজনের একটি সার্চ কমিটি গঠন করতে হয় এবং সার্চ কমিটিতে তিনজনের প্রতিনিধিত্ব লাগে। একজন চান্সেলারের প্রতিনিধি, দুই রাজ্য সরকার অর্থাৎ উচ্চ শিক্ষা দফতরের প্রতিনিধি এবং তিন সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হবেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সেনেটের প্রতিনিধি। আমরা যতবার সার্চ কমিটি তৈরি করতে যাচ্ছি দেখছি রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি পাওয়া যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ও তার কোর্টের প্রতিনিধির নাম পাঠিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু চান্সেলারের নমিনি আর আসছে না। তাই আমরা নিয়োগ করছি।”
প্রসঙ্গত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসেরে ক্ষেত্রেও মেয়াদ বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল উচ্চ শিক্ষা দফতর। ২৩.৬.২০২১ তারিখে এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। সেই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা ছিল, চান্সেলারের অনুমোদন এসে না পৌঁছনোয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন মোতাবেক বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হল।
সেই সময়ই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের বিষয়টি নিয়েও ব্রাত্য বসুর প্রতিক্রিয়া ছিল, “কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে বিষয়টা স্বতন্ত্র। বিধি অনুযায়ী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ক্ষেত্রে যদি তিনি প্রথমবার উপাচার্য থাকেন এবং দ্বিতীয়বার তাঁকে উপাচার্য করার কথা ভাবা হয় তা হলে সেখানে চান্সেলারের কোনও সুপারিশ বা অনুমতির দরকার পড়ে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় আইন তাই বলছে।”
Be the first to comment