ধর্ষণে অভিযুক্ত বিশপের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন তিনি। তার পরেই মিলল তাঁর দেহ। এই দু’টি ঘটনায় যোগসূত্র থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউই।
জলন্ধরের একটি গির্জার বিশপ ফ্র্যাঙ্কো মুলাক্কলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছিলেন কেরালার এক সন্ন্যাসিনী। অভিযোগ গড়ায় ভ্যাটিক্যান পর্যন্ত। পদ থেকে বরখাস্তও করা হয় অভিযুক্ত ফ্র্যাঙ্কোকে। সেই মামলারই বিচার চলাকালীন সম্প্রতি ফ্র্যাঙ্কোর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন জলন্ধরের ওই গির্জারই এক ফাদার, কুরিয়াকোস কট্টুথারা। সোমবার সকালে বছর ষাটের এই ফাদারের দেহ উদ্ধার হয়েছে ওই সেন্ট পলস গির্জার ভিতরেই, তাঁর নিজের ঘর থেকে।
জলন্ধর এলাকায় ধর্মযাজক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন মৃত ফাদার কুরিয়াকোস কাট্টুথারা। অভিযুক্ত বিশপের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে বয়ান দিয়েছিলেন তিনি। মিশনারিজ অফ জেসাসের অন্তর্গত একটি মঠে ভোকেশনাল ট্রেনার হিসেবেও কাজ করতেন তিনি। তাছাড়া বিশপের বিরুদ্ধে সন্ন্যাসিনীদের ক্ষোভের বিষয়টিও তিনি দেখাশোনা করছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ফাদারের মৃত্যুর কারণ এখনও বোঝা যাচ্ছে না। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, তাঁর দেহে বাইরে থেকে কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। তবে মৃত্যুর কিছু আগেই তিনি বমি করেছিলেন বলে বোঝা যাচ্ছে। দেহের পাশ থেকে মিলেছে রক্তচাপের ওষুধ।
কয়েক মাস আগে ভ্যাটিক্যানের হস্তক্ষেপ চেয়ে তাঁর সঙ্গে হওয়া অপরাধের বিচার পাওয়ার আবেদন করেছিলেন কেরলের এক সন্ন্যাসিনী। তাঁর অভিযোগ, জলন্ধরের বিশপ ফ্র্যাঙ্কো তাঁকে ২০১৪ থেকে ২০১৬-র মধ্যে একাধিক বার ধর্ষণ করেছেন। ওই সন্ন্যাসিনী আরও দাবি করেন, বিশপ তাঁর রাজনৈতিক যোগাযোগ ও আর্থিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চাইছেন।
অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে গ্রেফতার হলেও, তার তিন সপ্তাহের মধ্যে কেরল হাইকোর্ট ফ্র্যাঙ্কোর জামিন মঞ্জুর করে। জামিন পেয়ে তিনি জলন্ধরে ফেরার পরে, অনুগামীরা গলায় মালা পরিয়ে, গোলাপ ফুলের পাপড়ি ছুড়ে স্বাগত জানান ধর্ষণে অভিযুক্ত ওই বিশপকে।
মৃত ফাদার কুরিয়াকোসের পরিবারের তরফে অভিযোগ, এই মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। সূত্রের খবর, ফ্র্যাঙ্কো মুলাক্কলের বিরুদ্ধে যে ধর্ষণের মামলা দায়ের হয়েছে, সেই ঘটনায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন না ফাদার কুরিয়াকোস। কিন্তু পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে তাঁর সঙ্গেও কথা বলা হয়। সেখানেই তিনি এমন কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা জানান, যা ফ্র্যাঙ্কোর বিরুদ্ধে যায়। একটি মালয়ালাম টিভি চ্যানেলে মৃত ফাদারের পরিজনেরা অভিযোগ করেন, বিশপের বিরুদ্ধে কথা বলায় তাঁকে লাগাতার খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। মৃতের ভাই জোস কাট্টুথারা বলেন, “আমরা একশো শতাংশ নিশ্চিত যে ওঁরাই খুন করেছেন আমার দাদাকে।” এমনকী কয়েক দিন আগে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে ফাদার কুরিয়াকোস জানান, ফ্র্যাঙ্কোর বিরুদ্ধে মুখ খুললে যে তার ফল খুব ভাল হবে না, তা তিনি জানেন। নিজের ভয়ের কথাও গোপন রাখেননি তিনি।
তা হলে কি সেই ভয়ই সত্যি হল? ‘প্রভাবশালী’ ফ্র্যাঙ্কোর রোষের শিকার হলেন তিনি? নাকি এই মৃত্যু নিছকই কাকতালীয়? ময়না-তদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে পুলিশ।
Be the first to comment