এক দফা মেরে এ বার আরও তেরোকে হুমকি। চাকরি না ছাড়লে মরতে হবে ওদের মতোই।
হুমকিটা আগের বারের মতো একই রয়েছে। চাকরি ছাড়ো। নয়তো মরো। সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ঘটা করে পোস্ট করা হয়েছে নিশানায় থাকা ১৩ জনের ছবি। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন, দু’জন অফিসার এবং একজন সেনা জওয়ান। সূত্রের খবর, এই ১৩ জনই দক্ষিণ কাশ্মীরের চারটি জেলা অনন্তনাগ, কুপওয়ারা, কুলগাম এবং সোপিয়ানের দায়িত্বে রয়েছেন। সমীক্ষা বলছে, দক্ষিণ কাশ্মীর সন্ত্রাসবাদীদের সবচেয়ে শক্ত ঘাঁটি। হিজবুল মুজাহিদিন, লস্কর-ই-তৈবা, জইশ-ই-মহম্মদ—-এই সব জঙ্গি গোষ্ঠীর রমরমা রয়েছে কাশ্মীরের দক্ষিণাংশে। এলাকা দাপিয়ে বেড়ায় কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী জাকির মুসা এবং তার অনুগামীরা। পুলিশের অনুমান, নিজেদের ভিত আরও শক্ত করতেই এলাকা থেকে পুলিশবাহিনীকে নিষ্ক্রিয় করতে উঠেপড়ে লেগেছে জঙ্গিরা। নিরাপত্তারক্ষীরাই এখন ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ১৩ জনের ছবি প্রকাশ করেছে জঙ্গিরা তাতে রয়েছে পুলিশকর্মীদের নাম। এবং তাঁরা কোন পদের অধিকারী সেটাও। এখানেই শেষ নয়। রয়েছে ওই পুলিশকর্মীদের বাড়ির ঠিকানাও। চাকরি ছাড়ার ভিডিও অনলাইনে দিতে হবে ওই পুলিশকর্মীদের। নয়তো গুলি খেতে হবে। এমনটাই হুমকি দিয়েছে জঙ্গিরা। সেনাবাহিনীর জওয়ানকেও বলা হয়েছে বাহিনী ছাড়ার ভিডিও সোশ্যাল সাইটে আপলোড করতে। জঙ্গিদের নিশানায় রয়েছেন, ত্রাল এলাকায় কর্মরত এক পুলিশ অফিসারও। এমনকী চাকরি থেকে ইস্তফা না দিলে পুলিশকর্মীদের পরিবারের লোকেদেরও ক্ষতি করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে জঙ্গিরা। ২ থেকে ৩ দিন সময় দেওয়া হয়েছে পুলিশকর্মীদের। এর মধ্যে চাকরি না ছাড়লে মারাত্মক ভাবে ক্ষতি করা হবে ওই পুলিশকর্মীদের পরিবারের সদস্যদেরও। এমনটাই হুমকি দিয়েছে জঙ্গিরা।
বৃহস্পতিবার ২০ সেপ্টেম্বর রাতে সোপিয়ান জেলায় কাপরেন ও বাটাগান্ড গ্রামে চার পুলিশ কর্মীর বাড়িতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। তিন পুলিশকর্মীকে অপহরণ করা হয়। আরও এক পুলিশকর্মী গ্রামবাসীদের সাহায্যে জঙ্গিদের কবল থেকে মুক্ত হন। ২১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার কাশ্মীরের ওয়াঙ্গাম এলাকা থেকে উদ্ধার হয় অপহৃত তিন পুলিশকর্মীর দেহ। জঙ্গিদের বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলেন নিসার আহমেদ ধোবি, ফিরদৌস আহমেদ ও কুলওয়ান্ত সিং-এই তিন স্পেশাল পুলিশ অফিসার। এই ঘটনার পরেই প্রাণের ভয়ে পুলিশের চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন অন্তত ছয় পুলিশকর্মী। এবং জঙ্গিদের কথামতো তাঁদের মধ্যে পদত্যাগের কথা ভিডিও করে অনলাইনে পোস্ট করে দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু আতঙ্ক এখনও পিছু ছাড়েনি কাশ্মীরে কর্মরত পুলিশকর্মীদের। কারণ নতুন করে হুমকি দিয়েছে জঙ্গি সংগঠন। নিশানায় এ বার ১০ জন পুলিশকর্মী, ২ জন অফিসার এবং এক সেনা জওয়ান।
পরিসংখ্যান বলছে, গত ২৮ বছরে এই প্রথম পুলিশকর্মীদের পরিবারকেও নিশানা বানিয়েছে জঙ্গিরা। কিছুদিন আগে দক্ষিণ কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাঁচ পুলিশকর্মীর ১১জন আত্মীয়কে অপহরণ করেছিল জঙ্গিরা। গত ২৯ অগস্ট দক্ষিণ কাশ্মীরের সোপিয়ান জেলার আরহামাতে জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে নিহত হন চার পুলিশকর্মী। এরপরেই সোপিয়ানের বেশ কয়েকটি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে দিয়েছিল পুলিশ। এমনকী জঙ্গিদের ডেরায় হানা দিয়ে তুলে আনা হয় তাঁদের বেশ কিছু আত্মীয়কেও। তাদের মধ্যে ছিলেন হিজবুল কম্যান্ডার রিয়াজ় নায়কুর বাবা আসাদুল্লা নায়কু। এরপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই পুলিশকর্মীদের পরিবারের উপর চলে পাল্টা হানা। অপহৃত হন ১১ জন। এমনকী পুলিশি হেফাজতে থাকা বেশ কিছু জঙ্গিকে ছেড়ে দেওয়ার দাবিও তোলে জঙ্গি সংগঠন। সূত্রের খবর, আত্মীয়দের বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত জঙ্গিদের দাবি মানতে বাধ্য হয়েছে কাশ্মীর পুলিশ। মুক্তি দেওয়া হয়েছে হিজবুল কম্যান্ডার রিয়াজের বাবাকেও। এরপরেই পুলিশকর্মীদের অপহৃত আত্মীয়দের মুক্তি দেয় জঙ্গিরা।
পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, এই জঙ্গিরা সকলেই পাকিস্তানের মদতপুষ্ট। ইচ্ছে করেই এরা উপত্যকায় অশান্তি তৈরি করতে চায়। আর সেইজন্যেই এসব হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ওই আধিকারিক আরও জানিয়েছেন, কাশ্মীরের পুলিশকর্মীদের বিশেষত দক্ষিণ কাশ্মীরে কর্মরত পুলিশকর্মীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হচ্ছে।
Be the first to comment