ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’। তার আগেই বিশেষ প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসন। রাজ্যপুলিশের পক্ষ থেকে উপকূলের জেলাগুলিতে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। সুন্দরবনে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। চলছে মাইকিং।
বরাবরই বঙ্গে কোনও নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ের আগমন ঘটলে দেখা গিয়েছে, সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপকূলের এলাকাগুলি। সেই তালিকায় রয়েছে বিস্তীর্ণ সুন্দরবন অঞ্চল, অন্যদিকে, দামোদরের নিম্ন উপত্যকা। ঘাটাল, দাসপুর-সহ একাধিক এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। এদিকে, বঙ্গে এখন শীতের মরসুম। চাষের সময়। নিম্নচাপের প্রভাবে চাষেও ক্ষতি বিস্তর। তাই আগেভাগেই বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন। এদিকে বৃহস্পতিবারই মুম্বই থেকে কলকাতা ফিরে সোজা নবান্নে পৌঁছে যান মুখ্যম্নত্রি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিস্থিতি সরজমিনে খতিয়ে দেখেন তিনি। তারপরই মুখ্যসচিবকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন।
অন্যদিকে আজই ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য প্রভাব ও তা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে একটি জরুরি বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কোথায় এবং কখন এই ঘূর্ণিঝড় ভারতীয় ভূখণ্ডে আছড়ে পড়বে, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বিস্তারিত তথ্য পেশ করেন আবহাওয়া দফতরের আধিকারিকরা ৷ তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, আগামী শুক্রবার অর্থাৎ ৩ ডিসেম্বর (আগামিকাল) কেন্দ্রীয় বঙ্গোপসাগরের উপর তৈরি হবে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ ৷ তারপর অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ওড়িশা উপকূল দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করবে এই ঘূর্ণিঝড় ৷ ভারতীয় জলবায়ু বিভাগের টুইটার হ্যান্ডেলেও এদিন এই তথ্য পেশ করা হয়েছে ৷
তবে হিসাব বলছে, ওড়িশা উপকূলের মাটি ছুঁতে ছুঁতে জাওয়াদের ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে ৷ এই পূর্বাভাসের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করেছে ওড়িশা সরকার ৷ রাজ্যের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ১৩টি জেলার জেলাশাসককে আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে ৷ বিপদ বুঝলে আগেভাগেই এই এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে ৷ তৈরি থাকতে বলা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকেও ৷ যাতে দরকার পড়লে সময় মতো উপদ্রুত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে ৷
সূত্রের খবর, সতর্কবার্তা পাওয়ার পর আজ, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মৎস্য দফতরের পক্ষ থেকে কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ-সহ সাগর ও পাথরপ্রতিমার উপকূল এলাকায় মাইক দিয়ে সতর্কতা প্রচার শুরু করা হয়েছে। শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমস্ত দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে আগাম বিপর্যয় মোকাবিলা সংক্রান্ত বৈঠক করবে।
আগামিকাল শুক্রবার সন্ধের মধ্যে জেলার সুন্দরবন উপকূল এলাকায় সিভিল ডিফেন্স ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর বিশেষ দল পৌঁছে যাবে। ইয়াসের পর সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ নদী ও সমুদ্রের বাঁধ ধাপে ধাপে মেরামত করা হলেও টানা বর্ষার মধ্যে একের পর এক কোটাল ও একের পর এক নিম্নচাপের জেরে প্রবল বৃষ্টিতে বাঁধের মাটি ক্ষয় হয়েছে। ফলে সাগরদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, নামখানা, মৌসুনি ও ঘোড়ামারা দ্বীপের বেহাল নদী ও সমুদ্র বাঁধগুলোতে এবারের দুর্যোগে ভাঙন দেখা দিতে পারে।
দুর্যোগের আগেই উপকূল এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করার পাশাপাশি তাঁদেরকে আগেভাগে উঁচু এলাকায় সরিয়ে নিয়ে আসা হবে। ইতিমধ্যে কাকদ্বীপ মহকুমার চারটি ব্লকের সাইক্লোন সেন্টারগুলি খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এখন নিম্নচাপ আন্দামান সাগরে রয়েছে। সেটি খানিকটা শক্তি বাড়িয়ে সুস্পষ্ট নিম্নচাপে পরিণত হবে। এটি আজই আন্দামান থেকে বঙ্গোপসাগরের দিকে চলে যাবে। এবং এটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। শুক্রবারের মধ্যে একটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি বঙ্গোপসাগরের মধ্য অঞ্চলে থাকবে। শনি-রবিরার এটি উপকূলের দিকে এগোতে থাকবে।
শুক্রবার থেকেই বেশ কয়েকটি জেলা, দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়ায় হালকা বৃষ্টি হতে পারে। ৬ জেলায় শনিবার ভারী বৃষ্টি। রবিবার মূল দুর্যোগের আশঙ্কা। এই ঘূর্ণিঝড় অন্ধ্র-ওড়িশা উপকূলের দিকে এগোবে। কিন্তু সেখান থেকে এটি স্থলভাগে ঢুকে যাবে কিনা, তা সুস্পষ্ট নয়। এক হতে পারে, স্থলভাগে ঢুকে খানিকটা শক্তি হারিয়ে বাংলার দিকে এল। অথবা স্থলভাগে না ঢুকেই সমুদ্র পথ ধরে বাংলায় আছড়ে পড়তে পারে। ওড়িশার কাছাকাছি আসার পর ঘূর্ণিঝড় একটা ‘টার্ন’ নিতেই পারে। সেখানেই বাংলার জন্য দুঃসংবাদ। কলকাতা-সহ ৭ জেলায় অতি ভারী বর্ষণের আশঙ্কা করা হয়েছে। ওই দিন সর্বোচ্চ ৮০ কিমি বেগেও ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে উপকূলবর্তী এলাকায়।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এবছর আন্দামান ও বঙ্গোপসাগরে বারবার নিম্নচাপ তৈরি হচ্ছে। যদি নিম্নচাপ একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে,তাহলে শক্তি বৃদ্ধি করবেই। এক্ষেত্রেও সেটি হবে। এবছর একটানা শীতের মরসুমও নেই। তার একটাই কারণ জলীয় বাষ্প। শীতের আমেজও এবার কম থাকবে। এক টানা কনকনে শীতের সম্ভাবনা কম।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত কলকাতা পুরসভাও। আপাতত ৭৬ টি পাম্পিং স্টেশনকে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। পোর্টেবল পাম্পিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। কলকাতা পুরসভার কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে।
Be the first to comment