এবার সরাসরি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে আক্রমণ করলেন বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার। রাজ্যপালের উদ্দেশে টুইটে তিনি লেখেন, রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে আপনার সংঘাতে রাজ্যের কি কোনও লাভ হচ্ছে? মিডিয়ার সামনে মুখ খুলে, টুইট করে কি সমস্যার সমাধান সম্ভব? আপনার অবস্থানে শাসকদল কি সহানুভূতি পাচ্ছে না? রাজ্যবাসী রাজ্যপালের থেকে রাষ্ট্রনেতাসুলভ আচরণ প্রত্যাশা করেন।
দলীয় অবস্থানের বিরোধিতা করে এবার উল্টো সুর বিজেপির বর্যীয়ান নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারের গলায়। সরাসরি রাজ্যপালকেই আক্রমণ করলেন বিক্ষুব্ধ নেতা। রাজ্য থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত- গোটা বিজেপি নেতৃত্ব যখন রাজ্যপালের পাশে, এই পরিস্থিতি দাঁড়িয়ে একটা টুইটে রাজ্যপালের সমালোচনা করে জয়প্রকাশ তুলে দিয়েছেন একাধিক প্রশ্ন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এতে বিজেপির অস্বস্তি বাড়ল দ্বিগুণ আর নিঃসন্দেহে এটা তৃণমূলের একটা বাড়তি পাওনা।
রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম স্বাভাবিকভাবেই জয়প্রকাশ মজুমদারের টুইটের স্বপক্ষে বলেছেন। তাঁর বক্তব্য, “জয়প্রকাশ মজুমদার যাই বলেছেন, সেটাই তৃণমূলের বক্তব্য। তিনি ঠিক বলেছেন।” এরই মধ্যে আরও বড় প্রশ্ন উঠে গেছে। জয়প্রকাশ মজুমদার কি তবে তৃণমূলে যাচ্ছেন? বিজেপি নেতৃত্ব এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে কোনও কথা বলতে চাইছেন না।
তবে টুইট প্রসঙ্গে জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “প্রথমত বলে রাখি আমি বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা নই। আগে বিজেপি নেতা ছিলাম। এখন রাজনৈতিক নেতা। আমি রাজ্যপালের উদ্দেশেই টুইটটা করেছি। পশ্চিমবঙ্গে এমনিতেই অনেক সমস্যা রয়েছে। তার আরেক অ্যাডেড সমস্যা হল রাজ্য রাজ্যপাল মতবিরোধ। রাজ্যপাল এই লড়াইটা এমন একটা জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন, সেটা রাস্তার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। রাজ্যপাল পদের একটা মর্যাদা থাকে। আমি দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ছোটোবেলা থেকে বিভিন্ন রাজ্যপালের সংসর্গে আসার সৌভাগ্য রয়েছে। কিন্তু এই মিডিয়া কিংবা সোশ্যাল মিডিয়াকে অবলম্বন করে যে ছায়াযুদ্ধ, তা একটা জায়গায় বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। রাজ্যের মানুষ তাতে কী পাচ্ছেন? যদি রাজ্যপাল কোনও সমস্যা দেখেন, সেটাকে কীভাবে মেটানো যায়, সেটা ভাবুন।”
জয়প্রকাশ মজুমদারকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, তবে কি বিজেপি নেতা হিসাবে এই কথাটা আগে বলতে পারেননি? উত্তরে তিনি বলেন, “দেখুন আমি বরাবরই বলে এসেছি, রাজ্য রাজ্যপালের ঝগড়ায় রাজ্যের মানুষের কোনও লাভ হয় না। এই কথাটা বিজেপির সহ সভাপতি থাকাকালীনও বলেছি। এখনও বলছি। এই যে মতবিরোধে রাজ্যের জনগণের কোনও লাভ নেই। এতে তিনি সংবাদ শিরোনামে আসছেন কেবল। রাজ্যপালকে নজরদারি করতে পাঠানো হয়, খবরদারি করতে পাঠানো হয় না।”
আরও একটি উল্লেখ্যযোগ্য প্রশ্ন রাখা হয় তাঁর কাছে। তিনি কি তবে তৃণমূলের কাছাকাছি আসছেন? জয়প্রকাশ মজুমদার সরাসরি বলেন, “এটা তৃণমূলের কাছাকাছি আসার প্রশ্ন নয়। রাজ্যের স্বার্থে বিজেপিরও তো একই মত হওয়া উচিত। বিজেপিও তো বলে, মানুষের উর্ধ্বে দল, দলের উর্ধ্বে রাষ্ট্র। তারই তো অঙ্গ পশ্চিমবঙ্গ। এই কনফ্লিক্ট তো বিজেপিও দেখছে।”
প্রসঙ্গত, রাজ্যের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ যা, তাতে একের পর এক ইস্যুতে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত চরমে উঠেছে। রাজ্যপালকে টুইটারে ব্ল্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই অধ্যায়ের নবতম সংযোজন শুক্রবার সকালে রাজ্যপালের টুইট। যেখানে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের কথোপকথন ভিডিয়ো টুইট করে রাজ্যপাল প্রশ্ন তুলেছেন, ‘পুলিশের শিরদাঁড়ায় আঘাত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।’ রাজ্যপাল লিখেছেন, “যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মিডিয়ার সামনেই পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকে জিজ্ঞেস করেন “রাজ্যপাল কি আপনাকে ফোন করেন?’ বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত প্রয়োজন।”
Be the first to comment