খুব বড় অঙ্কের টাকা নয়। তবে একজন মধ্যবিত্ত ছাপোষা সরকারি কর্মীর কাছে এই টাকার মূল্য অনেক। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিজেকে নিঙড়ে মানুষ তিল তিল করে যে সঞ্চয় গড়ে তোলে, সেটা দান করে দেওয়া নিছকই কোনও সাধারণ ঘটনা নয়। বিশেষত মধ্যবিত্ত বাঙালির কাছে তো নয়ই। এর পিছনে রয়েছে খুব বড় একটা মন। আর সেই উদার মনেরই পরিচয় দিলেন একজন ট্রাফিক অফিসার।
ঝাড়গ্রাম জেলা ট্রাফিক পুলিশের ওসি স্বপন গড়াই তাঁর বেতনের সঞ্চিত টাকা থেকে ৫১ হাজার ১ টাকা দান করেছেন কেরলের বন্যাদুর্গতদের জন্য। অনলাইনে কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ওই টাকা পাঠিয়েছেন তিনি। এই প্রাপ্তি স্বীকার করে স্বপনবাবুকে ধন্যবাদ জানিয়ে শংসাপত্র পাঠিয়েছেন রাজ্য সরকার।
স্বপনবাবুকে নিয়ে এখন রীতিমতো আলোচনা চলছে ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিস-প্রশাসন মহলে। তবে, সব শুনেও নির্বিকার তিনি। বাঁকুড়ার বাসিন্দা স্বপনবাবু বিয়ে করেননি। জানালেন, দিনের বেশিরভাগ সময়টা রাস্তার মোড়ে যানবাহন সামলাতেই কেটে যায়। বাড়ি ফিরে অবসর সময়টুকু টিভিতে খবর দেখে বা গান শুনে কাটে। নিতান্তই ছাপোষা জীবন। তবে, কেরলের বন্যাবিধ্বস্ত মানুষের হাহাকার তাঁর এই সাধারণ জীবনযাপনে একটা আলোড়ন তোলে।
স্বপনবাবুর কথায়, কেরলে মানুষ বিপর্যস্ত। চারদিকে শুধু জল আর স্বজন হারানোর যন্ত্রণা। তাঁর নিজের পরিবার নেই। তাই পরিবার হারানো মানুষগুলোকে দেখে তিনি মানসিক ভাবে বিচলিত হয়ে পড়েন। তখনই ঠিক করেন, হাত কলমে সেখানে গিয়ে তো মানুষের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব নয়, তবে নিজের জমানো থেকে একটা বড় অঙ্কের টাকা যদি সর্বহারাদের কাজে লাগে তাহলে ক্ষতি কি! স্বপনবাবু বলেছেন, তাঁর তো পরিবার নেই তাই বেতনের অনেকটাই তাঁর জমে যায়। সেখান থেকেই একটা অংশ তিনি দান করেছেন কেরলের মানুষদের জন্য।
সহকর্মীদের কাছে স্বপনবাবু খুব ভাল মনের মানুষ, তিনি উদার। তবে, শুধু এইটুকুই কিন্তু তাঁর পরিচয় নয়। তিনি একজন দায়িত্বশীল ট্রাফিক অফিসার। এলাকার মানুষজনের কাছে তিনি ‘হেলমেট বাবু’। বেয়াড়া বাইকআরোহী হোক বা গণ্যমান্য ব্যক্তি— শহরের সবাইকে হেলমেট পরে থাকার পরামর্শ দেন তিনি। পথ নিরাপত্তার খাতিরে হেলমেট পরার গুরুত্ব বোঝাতে নিজেও ডিউটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হেলমেট পরে থাকেন। তাই তিনি ‘হেলমেট বাবু’। বিনা হেলমেটে বাইক চালানোর অভিযোগে শাসক দলের নেতা-কর্মী থেকে প্রশাসনিক আধিকারিকদের জরিমানা করে বির্তকে জড়িয়েছেন বারবার। তাও নিজের কর্তব্যে থেকেছেন অবিচল।
গোটা দেশেই পুলিশ ও প্রশাসন নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগ বিস্তর। তবে, ব্যতিক্রমও তো থাকে। ঝাড়গ্রামের স্বপনবাবু তেমনি একজন।
Be the first to comment