কার্গিল যুদ্ধের প্রায় ২০ বছর কেটে গেছে। অনেকের মন থেকেই হয়তো মুছে গেছে দেশের জন্য শহিদ হওয়া জওয়ানদের স্মৃতি। ভোলেননি জীতেন্দ্র সিং গুর্জর। ২০ বছর থেকে নিয়মিত প্রত্যেক শহিদ জওয়ানের পরিবারে চিঠি পাঠান তিনি।
পোস্টকার্ডে লেখা সেই চিঠিতে নিজের হাতে ভারতের জাতীয় পতাকা এঁকে তার নীচে ‘সত্যমেব জয়তে’ লেখেন জীতেন্দ্র। রাজস্থানের ভরতপুর জেলার বাসিন্দা ৩৭ বছরের জীতেন্দ্র গুজরাটের একটি বেসরকারি ফার্মে সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করেন।
এক সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থাকে জীতেন্দ্র জানিয়েছেন, ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধের ঘটনা তাঁকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। তিনি বিভিন্ন সংবাদপত্রে ও টিভিতে জওয়ানদের আত্মত্যাগের ব্যাপারে পড়েছেন। তাছাড়া তাঁর নিজের গ্রামেও অনেক যুবক শহিদ হয়েছেন এই যুদ্ধে। দেশের জন্য এই জওয়ানদের এই আত্মবলিদানই তাঁকে এই চিঠি লেখার অনুপ্রেরণা যোগায়।
এই চিঠির উত্তরও পান জীতেন্দ্র। তাঁর কথায়, ” আমার চিঠি পড়ে কেউ কাঁদেন, কেউ হাসেন। কেউ আবার স্মৃতিচারণ করেন। তাঁরা আমাকে চিঠির উত্তরও দেন। এটাই আমার সবথেকে বড় প্রাপ্তি।” ৪০ থেকে ৫০ জন শহিদের বাড়িতেও গেছেন জীতেন্দ্র। বাড়ির লোকেরা তাঁকে নিজেদের ছেলের মতো ভালেবেসেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এমনকী সেই সব শহিদদের বাড়ি থেকে মাটি নিয়ে এসে একটা ‘শহিদ স্মারক’ও বানিয়েছেন জীতেন্দ্র।
২০ বছর ধরে সেই সব জওয়ানদের ব্যাপারে পাওয়া সব খবর যত্ন করে সামলে রেখেছেন জীতেন্দ্র। সেইসব কাহিনী তাঁকে সবসময় উদ্বুদ্ধ করে বলে জানিয়েছেন তিনি। একটা রেজিস্ট্রার আছে তাঁর। সেখানেই সব কিছু লিখে রাখেন জীতেন্দ্র। হিসেব রাখতে রাখতে সেই রেজিস্ট্রারের ওজন এখন প্রায় ৯ কুইন্টাল।
অবশ্য এই কাজের জন্য কম হ্যাপা পোহাতে হয়নি তাঁকে। ২০০৪ সালে পোস্টকার্ডের দাম ৬৬ শতাংশ বেড়ে যায়। তখন একটা বেসরকারি স্কুলের সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করতেন তিনি। বাধ্য হয়েই ওই ফার্মে ঢোকেন। এমনকী তারপর থেকে প্রত্যেক মাসে প্রধানমন্ত্রীকে পোস্টকার্ডের দাম কমানোর ব্যাপারে আবেদন জানান তিনি। কিন্তু এখনও অবদি কিছু হয়নি।
কিন্তু তারপরেও হাল ছাড়েননি জীতেন্দ্র। জওয়ানরা দেশের জন্য যে আত্মত্যাগ করেছেন তার কাছে তাঁর এই কষ্ট কিছুই না বলে জানিয়েছেন তিনি। চিঠি পাওয়ার পর জওয়ানদের পরিবারের হাসিই তাঁর প্রেরণা বলে জানিয়েছেন জীতেন্দ্র।
Be the first to comment