রোজদিন ডেস্ক:-
জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে এমনটাই দাবি করলেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা এ-ও জানালেন, তাঁদের আন্দোলনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চাইলে আগের মতোই প্রতিক্রিয়া জানাবেন।
আন্দোলন থেকে পিছিয়ে আসার কোনও রাস্তা নেই। শুক্রবার সন্ধেয় সাংবাদিক সম্মেলন করে নিজেদের অবস্থানেই অনড় জুনিয়র ডাক্তাররা। তবে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, আমরা শান্তিপূর্ণ আলোচনা করলেও রাজ্য প্রশাসনের পদক্ষেপে তাঁরা হতাশ। আমরা বৃহস্পতিবারই আন্তরিকভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দিনশেষে মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি শুনে মনে হল আমাদের প্রধান দাবিদাওয়া সরিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা দ্রুত সচল করতে চাইছেন। আমরাও চাই যাতে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। কিন্তু আমাদের দাবিদাওয়া সরিয়ে শুধুমাত্র কর্মবিরতি নিয়ে আলোচনার চেষ্টা হচ্ছে। পাশাপাশি, তাঁরা এ-ও জানালেন যে, ‘চেয়ার’কে সম্মান করেন। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ তাঁরা চাননি। সেই সঙ্গেই আরও এক বার মনে করিয়ে দিলেন তাঁদের পাঁচ দফা দাবি। তবে এদিন জুনিয়র ডাক্তাররা সাফ জানিয়েছেন, এই আন্দোলন পুরোপুরি অরাজনৈতিক। আমরা কোনওভাবেই চাই না এই আন্দোলনকে কেউ রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করুন।
প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্যভবনের কাছে মঙ্গলবার থেকে অবস্থান বিক্ষোভ করছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। অভিযোগ, সেখানে বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল উপস্থিত হলে তাঁকে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেওয়া হয়। অগ্নিমিত্রা যদিও দাবি করেছিলেন, তিনি ওই পথ ধরে বিজেপির দফতরে যাচ্ছিলেন। এর আগে ফিয়ার্স লেনে চিকিৎসকদের আন্দোলনে বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় গেলে তাঁকে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেওয়া হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে শুভেন্দু দাবি করেন, জুনিয়র ডাক্তারেরা এই স্লোগান দেননি। কিছু ‘বহিরাগত’ এই স্লোগান দিয়েছেন, যাঁরা মদ, গাঁজা খান। এ বার এই নিয়ে শুভেন্দুকে কটাক্ষ করলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। শুক্রবার তাঁরা জানান, ওই ‘গো ব্যাক’ স্লোগান তাঁদের তরফেই তোলা হয়েছিল। আন্দোলনকারীদের কথায়, ‘‘যাঁরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমাদের আন্দোলনকে ব্যবহার করতে চেয়েছেন, প্রথম থেকেই আমরা তাঁদের বিরোধিতা করেছি। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বা অগ্নিমিত্রা পালের মতো নেতা-নেত্রীকেও আন্দোলনের মঞ্চ থেকে গো ব্যাক স্লোগান শুনতে হয়েছে।’’ এর পরেই আন্দোলনকারীরা সরাসরি আঙুল তোলেন শুভেন্দুর দিকে। তাঁদের কথায়, ‘‘বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আমাদের আন্দোলনকেই কালিমালিপ্ত করতে নেমেছেন। এই গো ব্যাক স্লোগান দেওয়ার ঘটনা নাকি দুশ্চরিত্র বহিরাগতের ষড়যন্ত্রের ফলে ঘটেছে। আমরা সুস্পষ্ট ভাবে তাঁকে এবং অন্য যাঁরা আমাদের আমাদের আন্দোলনকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে ব্যবহার করতে চান, তাঁদের বলতে চাই, এই নিয়ে আগেও যা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলাম, আবার একই জানাব।’’
বৃহস্পতিবার নবান্নে বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে জানিয়েছিলেন, তিনি ইস্তফা দিতে রাজি। কিন্তু বিচার নয়, আসলে চেয়ার চাওয়া হচ্ছে। এই প্রসঙ্গেই আন্দোলনকারীরা বললেন, ‘‘আমরা চেয়ারকে সম্মান করি। পদত্যাগ আমরা চাইনি। আমাদের একটাই চেয়ার, হাসপাতালের ওপিডির চেয়ার।’’ তাঁরা এ-ও স্পষ্ট করে দেন যে, বৈঠক ভেস্তে যাওয়ায় তাঁরা হতাশ হলেও তার পরে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেননি। বৃহস্পতিবার সকালে, নবান্নে যাওয়ার অনেক আগেই তাঁরা আরজি কর-কাণ্ডে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়েছিলেন। যে ভাবে এর আগে সুপ্রিম কোর্টে চিঠি দিয়েছিলেন তাঁরা। হতাশ হয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেওয়ার দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
Be the first to comment