দীঘা যাত্রীদের কাছে আরও এক সমুদ্র সৈকত জুনপুটের আকর্ষণও অনস্বীকার্য। দীঘার নবজন্মের আগে পশ্চিমবঙ্গের সৈকতনগরী খুঁজে পেতে যখন জল্পনা কল্পনা চলছে, তখন থেকেই দীঘার পাশে প্রতিদ্বন্দ্বী জুনপুটের প্রতি রায় ছিল বহুজনের। তবে ভাটার কালে জল সরে যাওয়ায় ভেটো পড়ে জুনপুটে। দিনে দিনে সামুদ্রিক মাছের উপনিবেশ গড়ে উঠেছে জুনপুটে। মিষ্টি জলের পুকুর ও মাছ নিয়ে এখানে গবেষনা চলছে। সুমুদ্রের চরে ইতস্তত ছড়িয়ে থাকে শুঁটকি মাছ। এখানে মৎস্য দফতরের মিউজিয়ামও আছে। সামুদ্রিক মাছের সঙ্গে নানান সামুদ্রিক প্রানীর সংগ্রহ বাড়তি আনন্দ দেয়।
ঝাউ গাছের সবুজ ছাওয়ায় ঘেরা সমুদ্রের নীল জল আর মাথার উপর নীল আকাশ। সমুদ্রপ্রেমী মানুষদের কাছে সত্যিই এ এক অসাধারন জায়গা। সমুদ্রের বিশাল বেলাভূমিটি বৈচিত্রের স্বাদ আনে। ভাটায় জল নেমে যাওয়ার পর সমুদ্রের ব্যাপ্তি মাইলখানেক বেড়ে যায়। জুনপুটের বেলাভূমি কাদায় মাখা। আর সেই কাদায় দাপাদাপি করে লাল কাঁকড়ার দল। জোয়ারের জল মাঝে মাঝে জমে ঘন কাদার সৃষ্টি করে। এইসময় বীচে হাঁটাচলা প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। আর ভাটার সময়ে দীর্ঘ বেলাভূমি পেরিয়ে সমুদ্রতটে পৌঁছতে হয়। তবে অমাবস্যা, পূর্ণিমার ভরা কোটালে সমুদ্রের জল ছাপিয়ে পড়ে। তবে স্নান করার ইচ্ছে থাকলে জুনপুট থেকে ২ কিলোমিটার ডানদিকে গোপালপুর বা বাঁদিকে ২ কিলোমিটার গিয়ে ঝাউবনের ছাওয়া ঘেরা হরিপুর সমুদ্র সৈকতে পৌঁছে যেতে হবে।
এবার জুনপুট থেকে সাড়ে ৩ কিলোমিটার দূরে সমুদ্র আর ঝাউয়ের জঙ্গলে ঘেরা বাঁকিপুট। পশ্চিমবঙ্গের নতুন পর্যটক কেন্দ্র হিসেবে দ্রুত আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে বাঁকিপুট। এখানকার নৈসর্গিক সৌন্দর্য আর সমুদ্রের নির্জনতা সমুদ্রপ্রেমীদের কাছে অনেকটা স্বর্গের মতো। এছাড়াও সমুদ্রের পাশাপাশি দেখে নিতে পারেন দরিয়াপুরের লাইট হাউজের কাছে ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের কপালকুন্ডলার মন্দিরটিও। কন্টাই অথবা জুনপুট থেকে রসুলপুরের বাসে চেপে পেটুয়াতে নেমে মাত্র ৩ কিলোমিটারের পথ। কন্টাই থেকে মন্দিরের দূরত্ব মাত্র ১৫ কিলোমিটার। ট্রেকারও পাওয়া যায় কন্টাই থেকে দরিয়াপুর পর্যন্ত।
বঙ্কিমচন্দ্রের বাংলো আজ বিলীন হতে বসলেও ২৬ চৈত্র বঙ্কিমমেলা বসে দরিয়াপুরে। দেবীহীন মন্দিরটিরও আজ ভগ্নদশা। তবে মন্দিরের অবস্থান নিয়ে আজও দ্বিমত আছে। দেবী নাকি পূজিত হচ্ছেন ৩ কিলোমিটার দূরে কন্টাইয়ের মন্দিরেও। চাইলে দীঘা থেকে ৮০০ টাকার মতো খরচ করে গাড়িতে ঘন্টা সাতেকের মধ্যে বেড়িয়ে নিতে পারেন দরিয়াপুর, জুনপুট ও শঙ্করপুর। আবার কন্টাই থেকে বাস বা ট্রেকারে চেপে খেজুরির সমুদ্রসৈকতে বেড়িয়ে রিক্সায় চেপে প্রাচীন কালের বন্দর নগরী হিজলিও ঘুরে দেখে নিতে পারেন। রসুলপুর নদী ও গঙ্গার সঙ্গমের দক্ষিন দিকে দরিয়াপুর আর উত্তরদিকে হিজলি। অতীতের বন্দরনগরী হিজলির অন্যতম আকর্ষণ তাজখাঁর তৈরী মসনদ- ই- আলা- মসজিদ। আর এই হিজলিতেই ১৬৮৭ খ্রীষ্টাব্দে জব চার্ণক ছল চাতুরীতে যুদ্ধ জিতে ভারতে ব্রিটিশরাজের বীজ বপন করেন। হিজলির গঙ্গাও যথেষ্ট প্রশস্ত। থাকার ব্যবস্থাও আছে পূর্ত দফতরের বাংলোয়। নির্জন হলেও মনোরম হিজলির সমুদ্রসৈকত। আবার কন্টাইয়ে একরাত কাটিয়ে কিয়াগেড়িয়ার বাসে মারিশদায় পৌঁছে ৩ কিলোমিটার মেঠো পথে ৪০০ বছরের প্রাচীন জগন্নাথদেবের জোড়া মন্দির , এগরার বাসপথে আলমগিরি নেমে অদূরেই পায়ে হাঁটা পথে রাধাবিনোদ ও ষড়ভুজ মন্দির, এগরার বাসস্ট্যান্ডের পথে কৃষ্ণসাগর দিঘির অদূরে তৈরি অলঙ্কৃত হটনাগর শিবমন্দিরটিও দেখে নিতে পারেন অত্যুৎসাহীরা। জীর্ণ হলেও ওড়িশা ও বাংলার শিল্পের মিশেলে তৈরী নানান মন্দির আছে এখানে।
কীভাবে যাবেন?
জুনপুট বা বাঁকিপুট যেতে হলে আপনাকে দীঘা হয়েই যেতে হবে। দীঘা থেকে বাসে চেপে কন্টাই বা কাঁথি পৌঁছে যান। দীঘা- কলকাতা, দীঘা- মেচেদা, দীঘা- খড়গপুর, দীঘা- কন্টাই বাসও যাচ্ছে কন্টাই হয়ে। কন্টাই থেকে নতুন করে রসুলপুর- কন্টাই- জুনপুট বাসে ৯ কিলোমিটার গেলেই পৌঁছে যাবেন জুনপুট। আবার দীঘা থেকে ট্যাক্সিতেও পৌঁছে যাওয়া যায় এই সমুদ্র সৈকতে।
কোথায় থাকবেন?
থাকার জন্য জুনপুটে আছে জুনপুট রিসর্ট, আর অসময়ের যাত্রীদের জন্য কন্টাই-এ পূর্ত দফতরের বাংলো ছাড়াও পৌরভবনের কাছে শ্রীনিকেতন ও হাসপাতালের কাছে ক্লাসিক নামের একটি লজও আছে।
Be the first to comment