ছুটির দিন সাতসকালেই কেঁপে ওঠে নাগেরবাজার। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে ফাটল ধরেছে আশেপাশের বাড়িতেও। মর্মান্তিক ভাবে মৃত্যু হয়েছে এক আট বছরের বালকের। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। কিন্তু এই গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে গোটা পশ্চিম বাংলায়। কে দোষী তা ঠিক করতে ময়দানে নেমে পড়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
দুপুরের দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সরাসরি তোপ দাগেন বিজেপি এবং আরএসএসের দিকে। বলেন, “এলাকার ছেলেদের থেকে যা খবর পেয়েছি তাতে এটা স্পষ্ট যে এর পিছনে বিজেপি এবং আরএসএসের হাত রয়েছে। গোটা রাজ্য জুড়ে হিংসা ছড়াচ্ছে এরা। আমাদের ছেলেরাও আর চুপ করে থাকবে না। রাজনৈতিক ভাবে এর প্রতিবাদ করবে। সিআইডি তদন্ত করছে। সব বেড়িয়ে আসবে।” বালুবাবুর মন্তব্যে সমর্থন জানান মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। তিনি বলেন, “এই এলাকায় প্রতিদিনই আসেন দক্ষিণ দমদম পুরসভার পুরপ্রধান পাচু রায়। সঙ্গে থাকেন আরও বেশ কিছু দলীয় কর্মী।” মন্ত্রীর অনুমান সম্ভবত পাচু রায়কেই টার্গেট করেছিল দুষ্কৃতীরা।
প্রসঙ্গত, যে বহুতলের নীচে ফলের দোকানে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে সেই বহুতলেই রয়েছে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়। এই কার্যালয়েই বসেন দক্ষিণ দমদম পুরসভার পুরপ্রধান পাচু রায়। প্রতিদিন সকাল ১০টা নাগাদ অফিসে বসেন তিনি। এ দিন ঘটনার সময় তিনি কার্যালয়ে ছিলেন না। পুরপ্রধানের দাবি, ওই বিস্ফোরণের লক্ষ্য ছিলেন তিনিই। তাঁর কথায়, ‘‘পরিকল্পিত ভাবে বোমা রাখা হয়েছিল। টার্গেট ছিলাম আমিই।’’ তবে দলীয় গোষ্ঠী কোন্দলের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করায় কোনও মন্তব্য করেননি পাচু রায়। কেবল বলেছেন, ‘এর পিছনে অনেক বড় ষড়যন্ত্র রয়েছে।” তবে পাচু রায়ের এই মন্তব্যে রহস্যের আঁচ পাচ্ছেন অনেকেই। রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছে তাহলে কি গোষ্ঠী কোন্দলেরই শিকার হতে যাচ্ছিলেন দক্ষিণ দমদম পুরসভার পুরপ্রধান? এই প্রশ্নই এখন ঘুরছে বিভিন্ন মহলে।
এদিকে বিজেপি এবং আরএসএসের বিরুদ্ধে তোপ দাগায় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক থুড়ি শাসক দলকে একহাত নিয়েছেন বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, “মন্ত্রীই বলে দিচ্ছেন কারা এর পিছনে রয়েছে, কী বোমা ব্যবহার করা হয়েছে। উনি কি জ্যোতিষী? রাজনৈতিক ভাবে বিজেপি বা আরএসএসকে আটকাতে পারছে না। তাই এসব বলছে। সব ঘটনা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিয়ে পিঠ বাঁচানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল। কিন্তু আর তা হবে না।”
এ দিনের বিস্ফোরণ কাণ্ডে বিজেপির পক্ষ থেকে এনআইএ তদন্তের দাবি করা হয়। এই প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সেই দাবি উড়িয়ে দিয়ে জানান সিআইডি অফিসারদের উপরেই আস্থা রাখছেন তিনি।
Be the first to comment