রাজকুমার ঘোষ –
বিশু প্রতিবাদ করেছিল শুধু, পরিণামে তার পরিণতি যে পর্যায়ে পৌছল তাতে ওর নিজের প্রতি ঘেন্না ধরে গেছে। অস্ফুট স্বরে নিজেকেই গালমন্দ করে – ‘ঘাট হয়েছে, প্রতিবাদ করে পিছনে আছোলা বাঁশ নিতে হচ্ছে।’
আসলে হয়েছে কি, বিশু ওর পাড়ার রকে আড্ডা দিচ্ছিল। ঐ সময় রমা সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎই দেখে একটা ষন্ডামার্কা লোক রমার হাতটা ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। বিশু এটা দেখে কোনোকিছু না ভেবে লোকটাকে উদুম পিটিয়েছে। পিটুনি খেয়ে লোকটা হতভম্ব, যাওয়ার আগে বিশুকে – ‘খুব ভুল করলি, নেড়াতলার কেলোপাঁচু আমি। লোকে আমায় যম ভাবে, আর তুই কিনা_____’।
এই রমা বিশুর পেছনে ঘুরঘুর করে। বিশু পাত্তা দেয়না। কিন্তু রমাও নাছোড়বান্দা। রমা জানায় লোকটা ওর দাদা, ঝামেলা হয়েছিল ওর দাদার সাথে, তাই ওকে নিতে এসেছিল। এটা শুনে বিশুর চক্ষু চড়কগাছ। একটা উটকো ঝামেলায় নিজেকে জড়ালো। রমার ওপর সে চটে গিয়ে যাতা বলে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিল।
সামনেই দেওয়ালী, বিশু পাড়ার পুজো নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। এদিক কেলোপাঁচুর হুমকি দেওয়ালীর কালো রাতেই সে বিশুকে জবাই করবে। দেওয়ালীর দিন রাতের আকাশ আলোর রোশনাই, অসংখ্য বাজি পটকায় আকাশ বাতাস মুখরিত কিন্তু বিশুর মনে কালো রাতের হাতছানি। সে যথেষ্ট টেনশনে,কেলোপাঁচুর হুমকিতে বেশ বিচলিত। যথারীতি সেই সন্ধিক্ষণে অপারেশন বিশু, কেলোপাঁচু সদলবলে হাজির। বিশু পাড়ার পুজো মণ্ডপেই ছিল। কেলোপাঁচু ওর কলার ধরে বড় রাস্তার পাশে মাঠে নিয়ে এলো। দু-তিনজন সঙ্গী বিশুর ওপর চড়াও হলো। কেলোপাঁচু ওর চাকু নিয়ে বিশুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্যত হবে কি, কোত্থেকে রমা এসে বিশুকে জড়িয়ে ধরে ‘দাদা প্লীজ, আমি ওকে ভালোবাসি রে, সেদিন ভুল করে তোকে মারধর করেছে। ও জানেনা তুই আমার দাদা’ । কেলোপাঁচু ওর বোনকে ভীষণ ভালোবাসে। শুধু বললো ‘ছি ছি একি করছি আমি’ এরপর দলের লোকেদের উদ্দেশ্যে ‘এ পল্টন লোক পালিয়ে চল এখান থেকে’ । কেলোপাঁচু তার দলবল নিয়ে চলে গেল।
যার প্রতি বিশুর এতো অনীহা সেই রমাকে ও আরো জড়িয়ে ধরলো। রমার গালে ঠোঁটে অনেক চুমুতে ভরিয়ে দিলো। বিশু রমাকে বললো, ‘এই কালো রাত শুধু তোমার আর আমার’।
Be the first to comment