মর্মান্তিক খবরটা এসে পৌঁছেছিল শনিবার সকালেই। দীর্ঘ আটদিনের লড়াইয়ের পর হার মেনেছে ছোট্ট ঋষভ। খবর পেয়েই এসএসকেএম হাসপাতালে এসে পৌঁছন তৃণমূল সাংসদ কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়। এতদিন নিয়মিত খোঁজ রাখছিলেন তিনি। কিন্তু মৃত্যুর খবরে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি।
শনিবার হাসপাতালে তাঁকে দেখেই জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন ঋষভের বাবা সন্তোষ সিং। তাঁকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে চোখের জল আটকাতে পারলেন না কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও। বললেন, তাঁর বাবার মৃত্যুর চেয়েও ঋষভের মৃত্যু তাঁর কাছে বেশি কষ্টকর।
ঋষভকে গ্রিণ করিডর করে এসএসকেএম হাসপাতালে আনার পিছনে ছিলেন কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও। ১৪ ফেব্রুয়ারি হুগলীর শ্রীরামপুর পৌরসভার কাউন্সিলর সন্তোষ সিং ছেলের দুর্ঘটনার খবর জানতে পেরে তাঁকে তড়িঘড়ি করে নিয়ে পৌঁছায় চুঁচুড়ার ইমামবাড়া সদর হাসপাতালে। কিন্তু সেখান থেকে চিকিৎসকেরা জানান শারীরিক পরিস্থিতি ভালো নেই ঋষভের। তাই তাঁকে যেন কলকাতার এসএসকেএম- নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু মুখে বললেও কার্যক্ষেত্রে ব্যাপারতা অতটা সোজা ছিল না। কারণ, হুগলি থেকে কলকাতার দূরত্ব ।
কাউন্সিলর হওয়ার সুবাদে ঋষভের বাবা যোগাযোগ করেন হুগলি জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদবের সঙ্গে। তিনি যোগাযোগ করিয়ে দেন কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। এরপরেই তড়িঘড়ি রাজ্য সরকারের ততপরতায় মাত্র ৪৮ মিনিটে এসএসকেএম-এ আনা হয়েছিল ঋষভকে।
কিন্তু শনিবার সে সব লড়াই ব্যর্থ হল। এসএসকেএমে পৌঁছে কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায় আক্ষেপ করে জানান, সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ কাদের শেখাব? কেউ শিক্ষা নিতে চায় না। সকলে খুব সহজেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার রাত থেকেই ধীরে ধীরে অবনতি হচ্ছিল ঋষভের শারীরিক পরিস্থিতির। রাতেই চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে মারাত্মক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় ক্রমেই অবস্থার অবনতি হচ্ছে ঋষভের ৷ তারপর থেকেই বাড়ছিল আশঙ্কা। রাতেই তার পরিবারের লোকেদের ডেকে পাঠানো হয়।
খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে আসে ঋষভের আত্মীয়-পরিজনরা ৷ ঋষভকে বাঁচাতে শেষ চেষ্টা করেন চিকিৎসকরা ৷ ডায়ালিসিস করার ভাবনা শুরু করেন তাঁরা ৷ ঋষভকে দেওয়া হয় ৩৬ ইউনিট রক্ত ও প্লাজমা ৷ কিন্তু শেষরক্ষা হল না ৷ ভোরবেলায় চিকিৎসকদের আশঙ্কাই সত্যি হয় ৷ বাঁচানো গেলো না খুদে এই স্কুল পড়ুয়াকে ৷
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পোলবার কামদেবপুরে চুঁচুড়ার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে উল্টে যায় রাস্তার পাশের নয়ানজুলিতে ৷ খুদে পড়ুয়ারা গুরুতর আহত হয় ৷ সবথেকে দেরিতে উদ্ধার করা হয় দুই পড়ুয়া ঋষভ ও দিব্যাংশুকে ৷
Be the first to comment