কামদুনি গণধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের ফাঁসির সাজাই কি বহাল থাকবে? নাকি অন্য কোনও রায় দেবে উচ্চ আদালত? এই প্রশ্ন নিয়েই আজ গোটা বাংলার নজর ছিল কলকাতা হাইকোর্টে। অবশেষে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি এবং বিচারপতি অজয় কুমার গুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চ কামদুনির রায় শোনালেন। নিম্ন আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ৬ অভিযুক্তের মধ্যে ৪জন ছাড়া পেয়ে গেলেন। যাদের মধ্যে একজনকে বেকসুর মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তার ফাঁসির সাজা হয়েছিল নিম্ন আদালতে। বাকি দুই ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কামদুনিকাণ্ড নিয়ে একটা সময় গোটা রাজ্যে ঝড় উঠেছিল। রাজনৈতিক তরজাও কম হয়নি। সেই অধ্যায়ের একদশক পার। অভিযুক্তদের ফাঁসি আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজাই কি বহাল থাকবে? উচ্চ আদালতে গতকাল, বৃহস্পতিবার শুনানি শেষ হয়েছিল।আজ, শুক্রবার ছিল রায়দান।
২০১৩ সালের ৭ জুন। উত্তর ২৪ পরগনার কামদুনিতে কলেজ থেকে ফেরার পথে প্রথমে গণধর্ষণ, তারপর নৃশংস ভাবে খুন করা হয় এক ছাত্রীকে। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা রাজ্য। দোষীদের চরম সাজার দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। এই ঘটনায় অভিযুক্তের তালিকায় নাম ছিল মোট ৯ জনের। কিন্তু নিম্ম আদালতে মামলা চলাকালীনই মৃত্যু এক অভিযুক্তের। বেকসুর খালাস পেয়ে যায় আরও ২ জন। কলকাতায় নগর দায়রা আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয় বাকি ৬ জন। ৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড, আর ৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারক।
অভিযুক্তরা নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করলে মামলা গড়ায় হাইকোর্টে। যে ৬ জন দোষী সাব্যস্ত হয়, হাইকোর্টে সাজা কমানোর আবেদন জানায় তারা। সেই মামলার শুনানি আজ রায়দানের পর যা নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট–
(১) আনসার আলী মোল্লা – ফাঁসির পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ।
(২) সইফুল আলী মোল্লা – ফাঁসির পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ।
(৩) আমিন আলী – ফাঁসির সাজা হয়েছিল, আজ বেকসুর ছাড়া পেল।
(৪) ইমানুল হক- যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পরিবর্তে ছাড়া পেল।
(৫) ভোলানাথ নস্কর- যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পরিবর্তে ছাড়া।
(৬)আমিনুর ইসলাম- যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পরিবর্তে ছাড়া পেল।
নিম্ন আদালতে আমৃত্যু জেলের সাজাপ্রাপ্ত ইমানুল হক, আমিনুল ইসলাম এবং ভোলানাথ নস্কর ইতিমধ্যে ১০ বছর জেল খাটার কারণে খালাস পেল হাইকোর্ট থেকে। তবে
হাইকোর্টের এমন রায়ের পর এদিন আদাল চত্বরে দাঁড়িয়েই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন নির্যাতিতার বাবা এবং দাদা। কামদুনির এমন রায় নিয়ে আইনজীবী মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলেছে। যদিও এখনও সবপক্ষের সামনে সুপ্রিম কোর্টের দরজা খোলা রয়েছে।
Be the first to comment