কানপুর আইআইটির ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ফিরিয়ে দিল এক রোগীর প্রাণ

Spread the love
জেনিভা থেকে মস্কো ছুঁয়ে দিল্লী আসছিল ফ্লাইটটা। ইকোনমি ক্লাসে বসেছিল বছর ২৪-এর একটা ছেলে, কানপুর আইআইটির ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র মঙ্গলম কার্তিকেয়। জানা গিয়েছে, কলেজের তরফ থেকেই একটা এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে পাঠানো হয়েছিল তাকে। ঘটনাচক্রে একই ফ্লাইটে দিল্লী আসছিল বছর ৩০ এর থমাস। এক ক্রনিক ডায়বিটিসের রোগী সে। মস্কো থেকে টেক অফের পরই ঘুমিয়ে পড়েছিল কার্তিকেয়। মাঝ আকাশে আচমকা হই-হট্টগোলের শব্দে ঘুম ভেঙে পিছন ফিরে দেখে এক কেবিন ক্রু মহিলা আর্তস্বরে চেঁচাচ্ছেন – ডক্টর আছো কেউ এই ফ্লাইটে? থমাস নামের সেই যুবক ততক্ষণে নেতিয়ে পড়েছে। জানা গেল তার ইনসুলিন ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জখানা সে ভুলে ফেলে এসেছে মস্কো এয়ারপোর্টের সিকিউরিটি চেকিংয়ে। তাই গত পাঁচ ঘন্টা ধরে তার শরীরে ইনসুলিন পড়েনি।
ডাক্তার পাওয়া গেল একজন এবং আশ্চর্যজনকভাবে তিনিও ডায়াবেটিসের পেশেন্ট। সঙ্গে তাঁরও আছে সিরিঞ্জ এবং ইনসুলিনের অ্যাম্পুল। তিনি পরীক্ষা করে দেখলেন থমাসের ব্লাডসুগার বেড়ে যাচ্ছে হুহু করে। যে বিশেষ ডোজের ইনসুলিন থমাসের কাছে ছিল তার জন্য চাই স্পেশ্যাল সিরিঞ্জ বা ইনসুলিন পেন। অগত্যা উপায় না দেখে ডাক্তার নিজের সিরিঞ্জ দিয়ে নিজের ইনসুলিন অ্যাম্পুল থেকেই দিলেন ইনজেক্ট করে। বিমানসেবিকাকে জানিয়ে দিলেন, কাজ না হলে কাজাকিস্তানে জরুরী ল্যান্ডিং করতে হতে পারে। নইলে বাঁচানো যাবে না থমাসকে।
এটুকু দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েছিল কার্তিকেয়। ঘুম ভাঙতে পিছনে ফিরে দেখে থমাসের অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে, চোখ উল্টে গেছে, গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে মুখ থেকে। সংজ্ঞা নেই প্রায়। ওদিকে ডাক্তার নিরুপায়, বিমানসেবিকা জানালেন ইমারজেন্সী ল্যান্ডিং একঘন্টার আগে অসম্ভব। এরপরই নড়েচড়ে বসল আমাদের হবু ইঞ্জিনীয়ার কার্তিকেয়। ডাক্তার নয় সে, তবু মগজ খাটাতে বাধা কোথায়? জানালো তার একটা wi-fi কানেকশন চাই কেবল। বিজনেস ক্লাসের প্রাপ্য wi-fi দেওয়া হল তাকে। পটাপট নেট ঘেঁটে বের করে ফেললো থমাসের স্পেশাল ইনসুলিন পেনের ড্রয়িং। ঐ ড্রয়িং দেখতে দেখতে খুলে ফেলল ডাক্তারের সিরিঞ্জটা। তার ইঞ্জিনীয়ারিং বুদ্ধিতে বুঝে ফেলল ড্রয়িংয়ে তেরোটা পার্ট দেখাচ্ছে অথচ ডাক্তারের সিরিঞ্জে পাওয়া যাচ্ছে বারোটা! মিলিয়ে দেখে বোঝা গেল একটা স্প্রিং নেই।
কার্তিকেয় বলে উঠলো আমার কয়েকটা বলপেন চাই। এক্ষুণি! আর হ্যাঁ, এমার্জেন্সী ল্যান্ডিংংয়ের দরকার নেই।
বিমানসেবিকারা দৌড়ঝাঁপ করে যাত্রীদের কাছে পেলেন চারপাঁচটা বলপেন। তার একটাতেই কার্তিকেয় পেয়ে গেল তার স্প্রিং। সেই স্প্রিং লাগিয়ে ড্রয়িং দেখে দেখে জুড়ে ফেলল সিরিঞ্জ। এবার কিন্তু ঐ সিরিঞ্জ লেগে গেল থমাসের সঙ্গে থাকা স্পেশাল ডোজের ইনসুলিন অ্যাম্পুলে। ডাক্তার বিষ্ময়ের ঘোর কাটিয়ে দিয়ে ফেললেন ইঞ্জেকশন। হু হু করে নামতে থাকলো থমাসের সুগার লেভেল। তারপর? তারপর আর কী! দিল্লীতে নেমে আপাতঃ সুস্থ থমাসকে গুরগাঁওয়ের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া অবধি সঙ্গেই ছিল কার্তিকেয়, নিজের ইঞ্জিনীয়ারিং বুদ্ধি ডাক্তারিতে খাটিয়ে কিছুক্ষণ আগেই যে বাঁচিয়েছে একটা তরতাজা প্রাণ।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*