নাটকীয় মোড় কর্ণাটকের রাজনীতিতে। বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার পরীক্ষা দেওয়ার আগেই পদত্যাগ করলেন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদুরাপ্পা। তবে তার মানে এই নয় কংগ্রেস কিংবা জেডিএস খুব সহজেই সরকার গঠন করতে পারবে। কুমারস্বামীকে দেওয়া সময়ে সময়ের মধ্যে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে পারেন কিনা এখন সেটাই দেখার। কারণ কুমারস্বামীকে দেওয়া সময়ের মধ্যেই বিজেপি নিজেদের দল ভারী করার সময় পেয়ে যাবে।
একজনরে দেখে নেওয়া যাক ১৫ মে মঙ্গলবার কর্ণাটকের ভোটের ফল বেরনোর পর থেকে কর্ণাটকে রাজনৈতিক কার্যকলাপ
১৫ মে, ২০১৮
একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে বিজেপির ইয়েদুরাপ্পা কর্ণাটকের সরকার গঠনের দাবি জানান। অন্যদিকে, সনিয়া গান্ধীর নির্দেশে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবেগৌড়ার সঙ্গে কর্ণাটকে সরকার গঠন নিয়ে কথা বলেন গুলাম নবি আজাদ। কংগ্রেস নেতৃত্বকে সঙ্গে নিয়ে কুমারস্বামীও কর্ণাটকের রাজ্যপালের কাছে সরকার গঠনের দাবি জানায়।
ওই দিন প্রাথমিক ফলাফলের নিরিখে বিজেপির অনেক এগিয়ে থাকার খবরে শেয়ার বাজার বেশ খানিকটা চাঙ্গা হয়েছিল। কিন্তু পরে কংগ্রেস ও বিজেপির সরকার গঠনের দাবিতে দিনের শেষে শেয়ার বাজার খানিকটা ধাক্কা খায়।
ফোনে দেবেগৌড়াকে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বজায় রাখতে আহ্বান জানান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অন্যদিকে, বিজেপিকে একক গরিষ্ঠ দল হিসেবে নির্বাচিত করার কর্ণাটকের জনগণকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।
১৬ মে, ২০১৮
ভোটের ফলের পরের দিনেও তৎপরতা চলে সারাদিন। সূত্রের খবর অনুযাযী, এইচডি দেবগৌড়ার অপর পুত্র রেভান্নাকে বিজেপি-র তরফে উপমুখ্যমন্ত্রীত্বের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কংগ্রেস ও জেডিএস-এর মধ্যে থাকা লিঙ্গায়েত বিধায়কদের টার্গেট করে বিজেপি। কেননা ১০৪ টি আসন জেতার পর সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে আরও নয় বিধায়কের সমর্থন জরুরি ছিল।
ইয়েদুরাপ্পা বলেন, দল তাঁকে পছন্দ করে। রাজ্যপালকে চিঠি দেওয়ার পর থেকে তিনি আশাবাদী যে রাজ্যপাল তাঁকে ডেকে পাঠাবেন।
এরই মধ্যে এক এক সূত্র থেকে এক এক ধরনের খবর আসতে থাকে। কংগ্রেসের সূত্র থেকে জানা যায়, ৬ জন বিজেপি বিধায়ক তাদের দিকে ঝুঁকে রয়েছেন। অন্যদিকে, কংগ্রেস ও জেডিএস-এর একাধিক বিধায়কের নিখোঁজ হওয়ার খবরে চাঞ্চল্য দেখা দেয়।
কুমারস্বামী অভিযোগ করেন জেডিএস বিধায়কদের মন্ত্রীত্ব ছাড়াও ১০০ কোটি টাকার লোভ দেখাচ্ছে বিজেপি।
১৮ মে, ২০১৮
সুপ্রিম কোর্টে বিরোধী কংগ্রেস-জেডিএসের করা আপিল মামলার প্রেক্ষিতে শনিবার কর্ণাটক বিধানসভায় ফ্লোর টেস্টের নির্দেশ দেন বিচারপতি কেকে বেনুগোপাল। বিজেপির হয়ে আইনজীবী মুকুল রোহতগি আদালতে সময় চেয়ে নিতে গিয়েছিলেন। তবে সর্বোচ্চ আদালত রাজি হয়নি।
ঠিক হয় শনিবার বিকেল ৪টের সময় কর্ণাটক বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে বিজেপিকে।
সুপ্রিম কোর্টের রায়, তাঁর দলের দাবি কেই ‘যথার্থতা’ দিয়েছে বলে দাবি করেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধি।
প্রোটেম স্পিকার হিসেবে কেজি বোপাইয়াকে বেছে নেন রাজ্যপাল বাজুভাই বালা। কংগ্রেসের তরফে বোপাইয়াকে প্রোটেম স্পিকার হিসেবে নির্বাচনের বিরোধিতা করা হয়। কেননা বোপাইয়া কোনও ভাবেই সিনিয়র বিধায়ক নন। ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ফের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে কংগ্রেস।
এদিন বিকেল থেকেই কর্ণাটকের কংগ্রেস বিধায়ককে ঘুষের টোপ বলে দাবি করে বিজেপি নেতার ফোনের রেকর্ডিং ভাইরাল হয়ে যায়।
১৯ মে, ২০১৮
শনিবার সকালে সুপ্রিম কোর্ট কংগ্রেসের আপত্তি খারিজ করে দেয়। একইসঙ্গে এই ফ্লোর টেস্টের সরাসরি সম্প্রচারের নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
সকালেই কর্ণাটক বিধানসভার বিধায়করা একে একে শপথ গ্রহণ করেন।
এদিন বিরোধী বিধায়কদের প্রভাবিত করতে ইয়েদুরাপ্পার অডিও টেপ বলে দাবি করা একটি কথোপকথন ভাইরাল হয়ে যায়।
বিকেল চারটের আনেক আগেই বিধানসভায় নিজের ভাষণ শুরু করেন। সেখানে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তিনি। চারটের সামান্য কিছু আগে তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দেন।
সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েও দক্ষিণের রাজ্যে সরকার গঠন করতে ব্যর্থ হয় বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের দখলে ছিল ১০৪টি ভোট। প্রয়োজন ছিল ১১১টি ভোটের।
কংগ্রেস-জেডিএস জোট নিজেদের সমর্থনের ১১৭ জন বিধায়কের সমর্থন দাবি করেছে। যদিও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কুমারস্বামী আদৌ নিজের গরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারেন কিনা এখন সেটাই দেখার। কেননা সময় পেয়ে গেল বিজেপিও।
Be the first to comment