দক্ষিণ কাশ্মীরের কুলগাম থেকে দুই হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গিসহ আটক করা হয়েছে পুলিশ আধিকারিক দভিন্দার সিংকে। শ্রীনগরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। গতকাল জম্মু- শ্রীনগর জাতীয় সড়কের ওয়ানপো এলাকার একটি চেক পোস্টে তাদের গাড়ি আটকানো হয়। গাড়িটি সোপিয়ান থেকে জম্মুর দিকে যাচ্ছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গিদের পাকিস্তানে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল।
২৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় নিহত হন পাঁচ শ্রমিক৷ দক্ষিণ কাশ্মীরের কুলগামে জঙ্গিদের গুলিতে তাঁদের মৃত্যু হয়। হামলায় নাম জড়ায় হিজবুল মুজাহিদিনের । এই ঘটনায় অভিযুক্তকেও গতকাল দভিন্দরের সঙ্গে ওই গাড়ি থেকে আটক করা হয় । এই তিন জন ছাড়াও, গাড়িতে থাকা চতুর্থ ব্যক্তি ইরফান শাফি জঙ্গিদের মদত দিত অর্থাৎ তাদের সঙ্গে পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিল । দভিন্দরের দাবি, এই দুই জঙ্গিকে তিনি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করাতে নিয়ে যাচ্ছিলেন ।
তবে কে এই দভিন্দর? গতকাল জঙ্গিদের সঙ্গে গাড়িতে তাঁকে দেখে কেন হকচকিয়ে গেলেন পুলিশ আধিকারিকরা?শ্রীনগরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে DSP পদে কর্মরত ছিলেন দভিন্দর। কিছুদিন আগে কাশ্মীরে আগত বিদেশিপ্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা যায় তাঁকে। সেই দলের সঙ্গে তাঁর একটি ছবিও পাওয়া যায়। বিমান বন্দরের অ্যান্টি-হাইজ্যাকিং স্কয়্যাডে নিযুক্ত ছিলেন তিনি।
এর আগেও শিরোনামে এসেছেন দভিন্দর। ২০০১ সালে সংসদ হামলার আসামী আফজ়ল গুরু তিহার জেলে বসে তাঁর আইনজীবীকে একটি চিঠি লেখেন যাতে তিনি দভিন্দরের নাম উল্লেখ করেছিলেন । গুরু অভিযোগ তোলে, পার্লামেন্ট হামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে একজনকে দিল্লিতে আনা ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থার জন্য দভিন্দর গুরুকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ।
কীভাবে গতকাল ধরা পড়লেন দভিন্দর? দক্ষিণ কাশ্মীরের একজন পুলিশ কর্মীর কাছে খবর ছিল গতকাল কুখ্যাত কয়েকজন জঙ্গি একটি গাড়িতে ওয়ানপো এলাকা দিয়ে যাবে। সেইমতোই গতকাল ওয়ানপো চেকপোস্টে পুলিশ মোতায়েন করে তল্লাশি শুরু হয়। তবে, জঙ্গিদের সঙ্গে ওই গাড়িতে পুলিশ কর্মী থাকার কোনও খবর তাঁদের কাছে ছিল না। পুলিশ সূত্রে জানা যায় যে, দক্ষিণ কাশ্মীরের DIG অতুল গোয়েল গতকাল নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে নিজে ওই চেক পোস্টে উপস্থিত ছিলেন । তিনি নিজেই তল্লাশি চালাচ্ছিলেন । প্রথমে দভিন্দরদের গাড়িটি দ্রুত গতিতে চেকপোস্ট পেরিয়ে যাচ্ছিল । অতুল গোয়েল নিজে তদারকি করায় গাড়িটি দাঁড়ায় । এই পুলিশ কর্মীর কথা, গতকাল যে গতিতে গাড়িটি যাচ্ছিল, তাতে কোনওমতে এটি যদি জওহর টানেল হয়ে বানিহাল পেরিয়ে যেত তাহলে কোনওভাবেই আর এদের পাকরাও করা যেত না ।
জঙ্গিদের সঙ্গে দভিন্দরকে দেখে প্রথমেই অতুল গোয়েল তাঁকে বেশ কয়েকবার চড় মারেন। তারপর আটক করেন। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, দভিন্দর সিং জঙ্গিদের মধ্যে সেতুর কাজ করতেন। গতকালের ঘটনায় তাঁদের পর্যবেক্ষণ, গাড়িতে একজন DSP-র উপস্থিতি চেকিং থেকে ওই জঙ্গিদের ছাড় দিত এই ভেবে পরিকল্পনার ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করা হয় । আর এসব দভিন্দর টাকার জন্য করেছে বলে অনুমান তাঁদের ।
এই ঘটনার পর গতকাল পুলিশের তরফে একটি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে পুরো বিষয়টি জানানো হয় । তাঁরা জানান, দভিন্দর একাধিক জঙ্গিদমন কর্মসূচিতে যুক্ত ছিল । তারপর কালকের এই ঘটনা । এটা একটা জঘন্যতম অপরাধ । দভিন্দরকে জঙ্গি হিসেবেই দেখা হবে । ঘটনাটি সংবেদনশীল হওয়ায় তদন্তে যাতে কোনও ফাঁক না থাকে তাই IB, RAW, CID-র মতো সকল গোয়েন্দাবিভাগকে কাজে লাগানো হচ্ছে। সিংকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
গতকালের ঘটনায় জড়িত চারজনের মধ্যে চতুর্থ জন নম্বর জন ইরফান শাফি। দক্ষিণ কাশ্মীরের সোপিয়ান জেলার দিয়ারোর বাসিন্দা। পেশায় প্রাক্তন আইনজীবী। গাড়িতে গতকাল এই ইরফানের পাশেই দভিন্দার বসেছিলেন। ইরফান গাড়ি চালাচ্ছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, এই শাফিকে এর আগে অনেকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তার নামে অভিযোগ ছিল, সে কাশ্মীরের লোকজনকে বুঝিয়ে টাকার বিনিময়ে তাদের সন্তানদের পাকিস্তানে পড়তে পাঠাত।
গাড়ির পিছনের আসনে ছিল নভিদ মুস্তাক ও নভিদ বাবু । এই নভিদ বাবুও আগে পুলিশকর্মী ছিলেন । বর্তমানে হিজবুল মুজাহিদিনের সেকেন্ড ইন অপারেশন চিফ। এদিকে, মুস্তাক সোপিয়ানের নাজ়নিনপোরার বাসিন্দা। ২৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় কাশ্মীরে জঙ্গি হামলাতেও অভিযুক্ত।
Be the first to comment