সোপিয়ানের গ্রাম থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে পুলিশকর্মীদের। চাকরি থেকে ইস্তফা না দিলে ফের হত্যা করা হবে বলে আগাম হুমকিও ঠুকে রাখা হয়েছে। উপত্যকার উত্তাপ বাড়িয়ে এর পরেও রাজ্যের নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধ অব্যাহত রেখেছে জঙ্গিরা। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) সূত্রে খবর, আইএসআই-এর পরের নিশানা কাশ্মীরের আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে বানচাল করা। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এ বার শহরের মাটিকেও রক্তাক্ত করতে মরিয়া পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিবাহিনী।
আগামী অক্টোবর ও নভেম্বর কাশ্মীরে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে বড়সড় ধামাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে পাক গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই), এমনটাই জানিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। আইএসআই-এর মদতে সন্ত্রাসের আসরে নামবে লস্কর গোষ্ঠী এবং হিজবুল মুজাহিদিন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন কাশ্মীরে গিয়ে রাজ্যপাল এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় বজ্র আঁটুনি আনার কথা ঘোষণা করলেও, বাস্তব পরিস্থিতি বিচার করে রাতের ঘুম উড়ে গেছে উপত্যকার।
গত মঙ্গলবার হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গিরা একটি ভিডিয়ো ছড়িয়ে জম্মু কাশ্মীরে নিযুক্ত পুলিশ কর্মী-অফিসারদের উদ্দেশে হুমকি দেয়, চাকরি থেকে ইস্তফা দিন, ‘নয়তো মৃত্যুর জন্য তৈরি থাকুন’ (রিজাইন অর ডাই)। এরপর শুক্রবার ভোরে সোপিয়ানের বাতাগুন্দ গ্রামের বাড়ি থেকে জম্মু কাশ্মীর পুলিশের তিন স্পেশাল অফিসার ও এক সাধারণ নাগরিককে তুলে নিয়ে যায় জঙ্গিরা। তার ঘণ্টা খানেক পরেই গুলিতে ঝাঁঝরা তিন জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাকে ছেড়ে দেয় জঙ্গিরা।
এই ঘটনার পরেই উপত্যকায় পুলিশ কর্তাদের মধ্যে ইস্তফা দেওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। বিদেশমন্ত্রকের একটি সূত্রের দাবি, অপহৃত তিন স্পেশাল পুলিশ অফিসারকে খুনে নির্দেশ আসে পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর কাছ থেকে। ইসলামাবাদের নির্দেশেই অপহরণের ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই পুলিশ অফিসারদের খুন করে জঙ্গিরা। এই সংক্রান্ত আইএসআই-এর একটি বার্তা ভারতীয় গোয়েন্দাদের হাতে আসার পরই নিউইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সম্মেলনের ফাঁকে ভারত-পাক বিদেশমন্ত্রীর বৈঠক বাতিলের ঘোষণা করে দেয় নয়াদিল্লি।
এর আগে, দক্ষিণ কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে কয়েক জন পুলিশ অফিসারের পরিবারের ১১ সদস্যকে অপহরণ করে জঙ্গিরা। কয়েক জন জঙ্গিকে মুক্তি দেওয়ার পর তাঁদের ছেড়েও দেওয়া হয়। গোয়েন্দাদের মতে, সোপিয়ানে রেয়াত করা হয়নি পুলিশ কর্তাদের। এর পিছনে জঙ্গিদের কোনও ভয়ানক দুরভিসন্ধি কাজ করছে।
রাজনৈতিক সূত্রের মতে, উপত্যকার বর্তমান পরিস্থিতিতে ভোট করা কার্যত অসম্ভব। যাঁরা গ্রাম পঞ্চায়েতে লড়বেন ভেবেছিলেন, তাঁরাও এক এক করে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তিন পুলিশ কর্মীর মৃত্যু ও হিজবুলের হুমকির পর প্রবল ভাবে ধাক্কা খেয়ে গিয়েছে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন। প্রাণ বাঁচাতে পদত্যাগ করার কথা ভাবছেন দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ, সোপিয়ান অঞ্চলের বহু পুলিশ কর্মী।
২০১৭ সালে কাশ্মীরে ৩২ জন পুলিশকর্মীকে খুন করেছিল জঙ্গিরা। এ বছর ইতিমধ্যেই সংখ্যাটা ৩৭।
Be the first to comment