বদলার ম্যাচে কিউয়ি ‘বধ’ রোহিতদের! ১২ বছর পর চ্যাম্পিয়ন ভারত

Spread the love

রোজদিন ডেস্ক, কলকাতা:- ফাইনালে জাত চেনালেন হিটম্যান। জবাব দিলেন নিন্দুকদের। রোহিতের ব্যাট থেকে এদিন ঝড় উঠল দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। কিউই বোলারদের একের পর এক বল আছড়ে পড়ল বাউন্ডারির বাইরে। এদিন প্রথমে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ড ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে করে ২৫১ রান। ভারতীয় স্পিনার বরুণ, কুলদীপের ভেলকিতে হাঁসফাঁস অবস্থা হয়ে যায় কিউই ব্যাটারদের। জয়ের জন্য প্রয়োজন ২৫২ রান। ব্যাট করতে নেমে ৪৯ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় টিম ইন্ডিয়া। ২৫ বছর আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হারতে হয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভারতকে। সেই হারের বদলা নিলেন রোহিতেরা।

টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় নিউজিল্যান্ড। প্রথমে ব্যাট করতে নামেন দুই ওপেনার উইল ইয়ং, রাচিন রবীন্দ্র। নিউজিল্যান্ডের ৪৭ রানের মাথায় ইয়ং এর ক্যাচ মিস করেন শামি। যদিও ইয়ং-এর উইকেট তুলে নিতে বেশি সময় নেয়নি ভারত। ৫৭ রানের মাথায় নিউজিল্যান্ডের প্রথম উইকেট তুলে নেন বরুণ চক্রবর্তী। ২৩ বলে ১৫ রান করে এলবিডব্লিউ হন ইয়ং। ৬৯ রানের মাথায় দ্বিতীয় ধাক্কা নিউজিল্যান্ড ব্রিগেডে। কুলদীপ ভেঙে দিলেন রাচিনের অফ স্ট্যাম্প। ফের উইকেট তুলে নেন কুলদীপ। কুলদীপের বলে ফ্লিক করতে গিয়েছিলেন উইলিয়ামসন। বল সোজা গেল কুলদীপের হাতে। নিউজিল্যান্ডের সেরা ব্যাটারকে ফিরিয়ে দিলেন এই ভারতীয় স্পিনার। ১১ রান করে কট অ্যান্ড বোল্ড কেন উইলিয়ামস। ২০ ওভারে নিউজিল্যান্ডের রান ১০১/৩। ২৩ ওভারের মাথায় জাদেজার বলে এলবিডব্লিউ হন লাথাম। ৩০ বলে ১৪ রান করে আউট হলেন তিনি। ৩৩ রানের জুটি ভেঙে দিলেন রবীন্দ্র জাদেজা।
এদিন বেশ কয়েকটি ক্যাচ মিস করে ভারত। অক্ষর পটেলের বলে বড় শট খেলার চেষ্টা করেছিলেন ড্যারিল মিচেল। কিন্তু বল যায় মিড উইকেটে থাকা ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মার হাতে। অনেকটা লাফিয়ে উঠে বলে হাত লাগালেও ক্যাচটি নিতে পারেননি রোহিত। ব্যক্তিগত ৩৮ রানে ‘জীবন’ ফিরে পান মিচেল। পরের ওভারেই জীবন পেয়েছেন গ্লেন ফিলিপসও। রবীন্দ্র জাদেজার বলে ডিপ স্কোয়ার লেগে ক্যাচ ফেলেছেন শুবমান গিল। যদিও ক্যাচটি খুব একটা সহজ ছিল না।
জুটি ভাঙতে ফের বরুণের হাতে বল তুলে দেন রোহিত। বরুণের বলে উইকেট ছেড়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন ফিলিপস। এরপরেই বড় রানের জুটি গড়েন মিচেল ও ব্রেসওয়েল। শামির বলে রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ দিয়ে ৬৩ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান মিচেল। ৫০ ওভার ব্যাট করে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৫১ রানে শেষ হয়ে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস। নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে সর্বোচ্চ ৬৩ রান করেন ড্যারিল মিচেল। এছাড়া ৪০ বলে ৫৩ রান করে অপরাজিত ছিলেন মাইকেল ব্রেসওয়েল। ভারতের দুই স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী ও কুলদীপ যাদব নিয়েছেন ২টি করে উইকেট। মহম্মদ শামি ও রবীন্দ্র জাদেজার ঝুলিতে গিয়েছে একটি করে উইকেট।
জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন ২৫২ রান। সেই লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে চার ছয়ের বন্যা বইয়ে দিলেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ২৫২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ভালোভাবে শুরু করেন ভারতের দুই ডান হাতি ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল। তবে গিলের চেয়ে রোহিতই বেশি আক্রমণাত্মক। এদিন ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই জেমিসনকে ছয় মারেন রোহিত। ভারত শুরু করেছে আগ্রাসী ভঙ্গিতেই। ৭ ওভারেই ৫০ রানের গণ্ডি পেরিয়ে যায় ভারত। মাত্র ৪১ বলে অর্ধ শতরান করেন রোহিত শর্মা। ১৭ ওভারে ভারতের রান একশো পেরিয়ে যায়। দলের ১০৫ রানের মাথায় প্রথম উইকেটের পতন হয় ভারতের। ব্যক্তিগত ৩১ রান করে মিচেল স্যান্টনারের একটি বল এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে মারতে গিয়ে ফিলিপ্সের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান শুভমান গিল। অসাধারণ এক উড়ন্ত ক্যাচে ভারতীয় ওপেনারকে ফিরিয়েছেন ফিলিপ্স। গিল আউট হতেই আরও একটি উইকেটের পতন হয় ভারতের। নিজের প্রথম বলেই ভারতকে বড় ধাক্কা দিলেন মাইকেল ব্রেসওয়েল। কিউই স্পিনারের দারুণ এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরলেন কোহলি। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ১ রান। দ্রুত ২ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় ভারত। কোহলির উইকেট পড়তে ব্যাট হাতে রোহিতের সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেন শ্রেয়স আইয়ার। রাচিন রবীন্দ্রর বলে সামনে বেরিয়ে বড় শট খেলতে গিয়েছিলেন রোহিত। কিন্তু বলের লাইন মিস করে হয়ে যান স্টাম্পিং। দারুণ ব্যাট করতে থাকা রোহিত ফিরলেন ৮২ বলে ৭৬ রান করে।
গিল, কোহলি, রোহিতের দ্রুত উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়েছিল ভারত। সেই চাপ সামলে দলকে ফের এগিয়ে নিচ্ছিলেন শ্রেয়স–অক্ষর জুটি। সেই জুটি ভাঙার দারুণ সুযোগ এসেছিল নিউজিল্যান্ডের সামনে। কিন্তু, গ্লেন ফিলিপসের বলে লং অনে শ্রেয়সের সহজ ক্যাচ ফেলে দেন জেমিসন। জীবন ফিরে পেয়েও বেশিক্ষণ উইকেটে টিকলেন না শ্রেয়স। স্যান্টনারের বলে দারুণ ক্যাচ নিয়ে তাঁকে ফেরান রাচিন রবীন্দ্র। ফেরার আগে ৬২ বলে ৪৮ রান করেছেন আইয়ার। আইয়ারের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না অক্ষরও। ৪০ বলে ২৯ রান করে ব্রেসওয়েলের বলে উইল ও’রুর্ককে ক্যাচ দিয়েছেন এই ব্যাটসম্যান। অক্ষরের বিদায়ের পর ভারতকে জয়ের পথে আরও এগিয়ে নিয়ে যান লোকেশ রাহুল ও হার্দিক পান্ডিয়া। ভারতকে জয়ের কাছে রেখে ফিরলেন হার্দিক পান্ডিয়া। ১৮ রান করা পান্ডিয়াকে ফেরালেন জেমিসন।
হার্দিক আউট হলেও জিততে সমস্যা হয়নি ভারতের। জাদেজার বাউন্ডারিতে রোহিতরা তুলে নেন জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান। ৬ বল বাকি থাকতেই ভারত ম্যাচ জিতে যায় ৪ উইকেটে। প্রথম ম্যাচ থেকেই অপরাজিত হয়ে ১২ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ঘরে তুললেন রোহিত কোহলিরা।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*