দুর্গাপুজো কমিটি পিছু ১০ হাজার টাকা করে অনুদানের যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শুক্রবার তার উপর স্থগিতাদেশ জারি করল কলকাতা হাইকোর্ট। এ ব্যাপারে একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানির পর এ দিন বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত ও বিচারপতি শম্পা সরকারের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিল, আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে।
সেপ্টেম্বর মাসে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে নেতাজি ইনডোরে সমন্বয় বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই বৈঠকেই তিনি ঘোষণা করেছিলেন কলকাতার তিন হাজার ও জেলার ২৫ হাজার পুজো কমিটিকে ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা তথা অনুদান দেবে রাজ্য সরকার।
মুখ্যমন্ত্রীর সেই ঘোষণার পরেই প্রশ্ন উঠেছিল, জনগণের থেকে আদায় করা করের টাকা দিয়ে কি এহেন খয়রাতি করা যায়? একই প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন আরএসপি-র শ্রমিক সংগঠন ইউটিইউসি-র অশোক ঘোষ। সেই সঙ্গে আর্জি জানিয়েছিলেন, ওই চিঠিকেই যেন পিটিশন ধরে নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয় আদালতে।
শুক্রবার সংশ্লিষ্ট মামলা শুনানির সময় বিচারপতিরা প্রশ্ন তোলেন, কীসের ভিত্তিতে জনগণের টাকা এ ভাবে খরচ করছে সরকার? এ ব্যাপারে কি কোনও গাইডলাইন মানা হয়েছে? অনুদানের টাকা সবটা খরচ না হলে কি পুজো কমিটিগুলি তা ফেরত দেবে? তা ছাড়া সব সম্প্রদায়ের জন্যই কি সরকার এ রকম অনুদান দেবে? রাজ্য সরকারের কাছ থেকে মঙ্গলবারের মধ্যে এই সব প্রশ্নের জবাব চেয়েছেন বিচারপতিরা।
মামলাকারীদের পক্ষে আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, বেশ কয়েকটি পুজো কমিটিকে অনুদান দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। ফলে আদালত দ্রুত কোনও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে ভাল।
অন্যদিকে ইউটিইউসি-র নেতাদের বক্তব্য, রাষ্ট্র কখনও কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য এ ভাবে খয়রাতি করতে পারে না। তা দেশের ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোর পরিপন্থী। তা ছাড়া জনগণের টাকা এ ভাবে তছনছ করার অধিকার কে দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে?
তবে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ এ ঘটনায় বিচলিত নন। তাঁদের বক্তব্য, এই সিদ্ধান্ত আদালতে ধাক্কা খেতে পারে সেই আশঙ্কা ছিলই। কিন্তু আদালত সরকারের সিদ্ধান্তের উপর স্থগিতাদেশ জারি করলে তৃণমূলের কোনও রাজনৈতিক ক্ষতি নেই। সংখ্যাগুরুর কাছে তৃণমূল এটাই বলবে, আমাদের সদিচ্ছার অভাব ছিল না। আদালত আটকে দিলে কী করব!
Be the first to comment