বিচারপতি মান্থার জন্যই বেপরোয়া শুভেন্দু, আসানসোল পদপিষ্ট কাণ্ডে বিস্ফোরক কুণাল ঘোষ

Spread the love

আসানসোলে জিতেন্দ্র তিওয়ারির উদ্যোগ্যে শুভেন্দু অধিকারীর কম্বলদান অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা এবং হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক শিশু-সহ ৩ জনের। আহত কমপক্ষে৭! এমন মর্মান্তিক ঘটনার পর জনরোষের ভয়ে লেজ গুটিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়েছেন শুভেন্দু-জিতেনরা। পুলিশের পাশাপাশি উদ্ধার কাজ চালিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা।

এই গোটা বিষয়টি নিয়ে বিস্ফোরক তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর চাঞ্চল্যকর দাবি, এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন ঘটনার নৈতিক দায় নিতে হবে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থাকেও। বিচারপতি মান্থাকে কাঠগড়ায় তুলে তৃণমূলের মুখপাত্র বলেন, ”এর জন্য দায়ী বিচারপতি রাজাশেখর মান্থাও।” তাঁর প্রশ্ন, কোন আইনে শুভেন্দুকে বারবার রক্ষাকবচ দেওয়া হচ্ছে? বলা হচ্ছে ভবিষ্যতেও অফ এফআইআর করা যাবে না। কুণালের দাবি, এতেই অবচেতন মনে বেপরোয়া হয়ে উঠছেন বিরোধী দলনেতা। তিনি আইন মানছেন না। আইনকে পৈতৃক সম্পত্তি ভাবছেন। যেখানে মানুষের প্রাণহানির মতো ঘটনা পর্যন্ত ঘটছে। বিচারপতি মন্থার জানা উচিত, সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ আছে, আদালত তদন্তের উপর হস্তক্ষেপ করতে পেতে না। আদালত তদন্তের উপর নজরদারি করতে পারে। এক্ষেত্রে বিচারপতি মান্থা তদন্তের উপর সরাসরি হস্তক্ষেপ করছেন।

আজ, বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বিরুদ্ধে কার্যত পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেছেন কুণাল। তাঁর কথায়,”বিচার ব্যবস্থা ও বিচারপতিকে আমরা সম্মান করি। সাধারণ মানুষ বলেন হাইকোর্টে যাব। আমিও আমার আইনজীবীকে বলি, হাইকোর্টে পিটিশন দাও বা চলো সুপ্রিম কোর্টে যাই। একমাত্র শুভেন্দুর মুখে শোনা যায়, আমি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চে যাব। কেন, কীসের জন্য? কোন কারণে বিচারপতির নাম গুরুত্ব পায়?”

রাজাশেখর মান্থার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে কুণালের ব্যাখ্যা, বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা শুভেন্দুর উপর সমস্ত এফআইআর-কে সুরক্ষাকবচ দিয়ে দিচ্ছেন। শুধু তাই নয় যে অপরাধ শুভেন্দু করেনি, পরের দিন তিনি কী করবেন জানেন না। তা অনুমান করে বলছেন, এফআইআর করা যাবে না। এটা কোন দেশের আইন? আগামিকাল কী করবে জানেন না, কীভাবে সুরক্ষাকবচ দিচ্ছেন? কোর্টের অনুমতি নেওয়ার কথা বলছেন। কোনও একটা জায়গায় তাৎক্ষণিক বিপদ ঘটিয়েছেন তখন কি কোর্টের অপেক্ষায় থাকতে হবে? এটা কোনও আইন? শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে বেপরোয়া মানসিকতার জন্ম দিচ্ছেন- আইন মানব না, আমার বিরুদ্ধে কিছু করতে পারবে না। সাংবিধানিক পদে থেকেও ধারাবাহিকভাবে আইপিএসদের নাম ধরে ধরে ব্যাগ গুছিয়ে রাখার কথা বলছে। পুলিশকে অপমান করছেন। অবিলম্বে শুভেন্দু অধিকারী ও আসানসোল ঘটনার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত তাদের গ্রেফতার করতে হবে।”

এদিন সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতেই কুণাল ঘোষ শুভেন্দুর সাম্প্রতিকতম একটি ভিডিও দেখান। যেখানে শুভেন্দুকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “১২, ১৪, ২১ তারিখ, তিনটি দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওয়েট এন্ড ওয়াচ।” এরপরই কুণালের প্রশ্ন, “যেখানে ১২ তারিখে সিবিআই হেফাজতে বগটুই কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্তি লালন শেখের মৃত্যু। ১৪ তারিখ আসানসোলে শুভেন্দুর কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু। বেপরোয়া হয়ে উঠেছে শুভেন্দু। ২১ তারিখ নিয়ে আতঙ্ক রয়েছে আমরা। আবার খারাপ কিছু না ঘটে। কারণ, ও কথায় কথায় সিবিআই কবে কার বাড়ি সেই তারিখ বলে দিতে পারছে, তাহলে লালন শেখ মৃত্যুও ওর নির্দেশে হতেই পারে। তাই এই মামলার তদন্তে শুভেন্দুকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে হবে।”

কুণালের আরও সংযোজন, “আসানসালে বিরোধী দলনেতা গেলে প্রোটোকলে পুলিশ ছিল। দিলীপ ঘোষও বলে দিচ্ছেন ব্যর্থতা উদ্যোক্তাদের। তাই দায় এড়াতে পারে না শুভেন্দু। পুলিশের অনুমতি ছাড়া এই অনুষ্ঠান হয়েছে। দিলীপবাবু বলেছেন আরও বেশি প্রস্তুতি থাকা উচিত ছিল।”

অন্যদিকে, যাদবপুর নিবাসী জনৈক অভিজিৎ সেন একটি মারাত্মক অভিযোগ করেছেন লেক থানায়। অভিযুক্তের নাম রাজাশেখর মান্থা। যিনি ক্ষমতার দম্ভে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাড়ি জবরদখল করে আছে। নিজেদের বৈধ পাওনা চাইলেই হুমকি দিচ্ছেন ফোনে। অভিজিৎ সেনের স্ত্রীকে হুমকি দিয়েছেন অভিযুক্ত রাজাশেখর মান্থা। ওই মহিলা ট্রমায় আছেন তাঁর হুমকিতে। আরও একাধিক অভিযোগ রয়েছে রাজাশেখর মান্থার নামে। তোলাবাজির অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? লেক থানা কী ব্যবস্থা নিয়েছে, সেটা দেখা দরকার। আমরা নিশ্চয় সে ব্যাপারে খোঁজখবর নেবো। এক্ষেত্রে অভিযুক্ত যে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা-ই, সেকথা সরাসরি না বললেওআকার-ইঙ্গিতে কুণাল বুঝিয়ে দিয়েছেন আসলে তিনি কার কথা বলতে চাইছেন।

অন্যদিকে, আজ ১৫ ডিসেম্বর শুভেন্দু অধিকারীর জন্মদিন। সাংবাদিকরা কুণাল ঘোষের সামনে বিষয়টি উত্থাপন করলে তৃণমূল নেতা বিরোধী দলনেতাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। একইসঙ্গে কুণাল বলেন,”ওর অধঃপতন হয়েছে। আমি চাইবো ওর চৈতন্য হোক।”

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*