মুড়ি ভেজে চলে সংসার। সেই সংসারেই লক্ষ্মীলাভের আশায় দেবীর সাড়ম্বর আরাধনা। সাজসজ্জা আর চমকে প্রতি বছরই নজর টানে বাজেপ্রতাপপুরের লক্ষ্মীপুজো।
বর্ধমান শহরের চার নম্বর ওয়ার্ডের বাজেপ্রতাপপুর পোষ্ট অফিসের ঠিক উল্টো দিকে রয়েছে ‘মুড়ি তালুক’। এখানেই বাস ২৮টি পরিবারের। প্রায় ৫০ বছর আগে মুড়ি ভেজে সংসার চালাতেন মুড়ি তালুকের দশটি পরিবার। এখন সন্তান সন্ততিতে ভেঙে ভেঙে পরিবারের সংখ্যা ২৮। দরিদ্র সংসারে লক্ষ্মীর কৃপা লাভের আশায় ৪৫ বছর ধরে পুজো করে আসছেন মুড়ি তালুকের বাসিন্দারা। সংসারে শ্রীবৃদ্ধির ছাপ এখন পুজোতেও।
তালুকের বাসিন্দা পুজোর উদ্যোক্তা শ্যামল নাইয়া জানান, এ বারের পুজোর বাজেট প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। প্রতি পরিবার পিছু ২৮০০ টাকা চাঁদা ধার্য করা হয়েছে। ২৮টি পরিবারই এই টাকা দেবে। যাঁদের অবস্থা বেশি সম্পন্ন বাকিটুকু পূরণ করে দেবেন তাঁরাই। এমনই এক পরিবারের বধূ মেনকা হালদার বলেন, ‘‘আমরা ১০টা পরিবার সম্পূর্ণ মুড়ি ভাজার উপরে নির্ভর করেই বেঁচে আছি। বাকি পরিবারের কয়েকজন ছোটখাটো অন্য কিছু ব্যবসাও করেন। ৪৫ বছর ধরে একই নিয়মকানুন মেনে লক্ষ্মীপুজো করে আসছি আমরা।’’
প্রথা মেনে মুড়ি তালুকে পুরোহিত আসেন উত্তর ২৪ পরগণা থেকে। এখানে লক্ষ্মীর সঙ্গে নারায়ণও অবস্থান করেন। কোনওবার পুজোর থিম অনন্তশয্যা, কখনও তিলফুলের পালা। এ বার পুজো মণ্ডপে তুলে আনা হচ্ছে আস্ত দার্জিলিং। বাঁশ, কাপড়, তুলোর মোড়কে পাহাড়, ঝরনা, টয়ট্রেন। নবীন প্রজন্মের সদস্য তন্ময় হালদার, জ্যোতি হাজরারা জানান, পুজোর পরদিন প্রায় ১০০ জনকে নিয়ে আয়োজন করা হয় অন্নকূটের। সেখানে থাকছে খিচুড়ি, তরকারি, চাটনি, মিষ্টির আয়োজন। তাঁদের কথায়, ‘‘আমাদের কাছে এটাই বছরের সেরা উৎসব। প্রায় মাসখানেক আগে থেকেই চলে লক্ষ্মীপুজোর প্রস্তুতি।’’
শারদীয়া উৎসব শেষের দুঃখকে ভুলিয়ে এলাকার মানুষকে ফের নতুন উৎসবে মাতিয়ে দেয় মুড়ি তালুকের লক্ষ্মীপুজো।
Be the first to comment