ভোটের আগে নবান্ন অভিযানে পথে নেমে বামপন্থী ছাত্র-যুবরা যে সাহস দেখালো তাতে ভোটের মুখে বাড়তি অক্সিজেন পেল বামেরা। রাজ্যে বিজেপি-তৃণমূলের খবর ছাড়া বাম-কংগ্রেস এক প্রকার খবরের বাইরেই ছিল। গ্রামেগঞ্জে মিছিল, মিটিং হলেও শহরে বামেদের কোনও কর্মসূচির দেখা মিলছিল না। তবে মেরুকরণের এই রাজনীতির ফাঁকে পড়েও নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়ে বামপন্থী ছাত্র-যুবরা এক ধাক্কায় খবরের শিরোনামে উঠে এলো। বৃহস্পতিবারের নবান্ন অভিযানের পর শুক্রবারের ১২ ঘন্টার ধর্মঘট রাজ্যে ভোটের মুখে বামেদের আরও প্রাসঙ্গিক করে তুললো। তবে সিপিএম এবার আগেই ঠিক করেছিল ঠিক করেছিল বিধানসভা নির্বাচনে তরুণ প্রজন্মকে প্রার্থীর তালিকায় গুরুত্ব দেওয়া হবে।
সিপিএম দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বামেদের নবান্ন অভিযান সম্পর্কে বলেছেন, “চাকরি ও শিক্ষার দাবিতে বামপন্থী ছাত্র-যুবরা রাজ্য সরকারের সমস্ত আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করেছে।বাংলার তরুণ প্রজন্ম বুঝিয়ে দিয়েছে দমনপীড়নের নীতিতে তারা ভয় করে না। তারা এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
নির্বাচনের মুখে রাজ্যে যখন একদিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গে সভা করছেন, অন্য দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কলকাতায় সভা করছেন ঠিক সেই একই দিনে নবান্ন অভিযান করে বামপন্থী ছাত্র-যুবরা বুঝিয়ে দিলেন রাজ্য রাজনীতিতে তারাও প্রাসঙ্গিক। কেননা সংবাদ মাধ্যমের নজর তারা বৃহস্পতিবার কাড়তে পেরেছেন। ডোরিনা ক্রসিংয়ে পুলিশের বাধা পেয়ে আন্দোলনকারীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে একই বন্ধনীতে রেখে তীব্র সমালোচনা করেছেন।পুলিশের মারে রক্তাত্ক্ত হয়েও তারা লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে যান নি।পাল্টা পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছেন। আর এই ঘটনাই রাজ্যের বামপন্থীদের বহুলাংশে উৎসাহিত করেছে।
সম্প্রতি সিপিএম-এর ছাত্র-যুব সংগঠনের সদস্য সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছিল যুব নেতৃত্ব। এই যুবশক্তিই বৃহস্পতিবার হাওড়া ও শিয়ালদা থেকে মিছিল করে ডোরিনা ক্রসিংয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে, বেধড়ক মার খায়। পাল্টা পুলিশের ওপর আঘাত হানে আক্রান্ত আন্দোলনকারীরা। তবে শুক্রবার এই যুবরাই ১২ ঘন্টার ধর্মঘট সফল করতে পথে নেমে পুলিশের হাতে গোলাপ ফুল তুলে দিয়েছেন।
বিধানসভা নির্বাচন এবং ২৮ ফেব্রুয়ারী ব্রিগেডের আগে যুবদের এই সাফল্য কী আপনাদের বাড়তি উৎসাহ যোগাবে? এই প্রশ্নে উত্তরে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবীন দেব বলেন, “আমাদের শক্তি ছিলই । সেটাকে মিথ্যা প্রচার দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টা চলছিল। তৃণমূল ও বিজেপি পরিকল্পনা করে এই কাজ করছিল। আমরা রাস্তায় ছিলাম। সেটা সংবাদ মাধ্যমের নজরে আসছিল না। সেই দিক থেকে বামপন্থী ছাত্র-যুবদের নবান্ন অভিযান ভোটের মুখে আমাদের দলের কর্মীদের বাড়তি উৎসাহ দেবে তাতে সন্দেহ নেই।কেননা মানুষ দেখেছেন চাকরির দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র-যুবদের কী ভাবে পুলিশ মেরেছে। যাদের দূরবীন দিয়ে দেখতে হয় বলে মমতা ব্যানার্জী মন্তব্য করেন সেই দলের ছাত্র-যুব সংগঠনকে আটকাতে এতো পুলিশ লাগলো?”
তবে উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূল নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছেন, “এসব নবান্ন অভিযান আর ধর্মঘট করে সিপিএম আরও হারিয়ে যাবে। মানুষ এসব পছন্দ করে না।কোনও ধর্মঘট হয় নি। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের ফলেই সেটা প্রমাণ হয়ে যাবে।”
Be the first to comment