দুই কালী মন্দির থেকে চুরি হয়ে গেল প্রায় ১০০ ভরি সোনার গয়না ও টাকা, পথ অবরোধ করলো স্থানীয়রা!

Spread the love
কালীপুজোর পরের রাতেই গ্রামের জাগ্রত দুই কালী মন্দির থেকে চুরি হয়ে গেল প্রায় ১০০ ভরি সোনার গয়না ও টাকা সহ প্রণামী বাক্স। এই ঘটনার প্রতিবাদে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ ও জাতীয় সড়ক অবরোধ করলেন গ্রামবাসীরা।
ঘটনাটি বীরভূমের সদাইপুর থানার চিনপাই গ্রামের। স্থানীয় সূত্রে খবর, চিনপাই গ্রামে ‘বড় মা’ এবং ‘ছোট মা’ নামে দুটি সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির আছে। গ্রামবাসীদের কাছে এই দুই কালী মন্দির খুব জাগ্রত। কালীপুজো উপলক্ষ্যে সেজে উঠেছিল এই দুই মন্দির। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোরবেলা গ্রামের কিছু লোক প্রথমে বড় কালীর মন্দিরে প্রণাম করতে গিয়ে দেখেন মন্দিরের তালা ভাঙা। ভেতরে ঢুকে চমকে ওঠেন তাঁরা। মায়ের গায়ের সোনার গয়না উধাও। নেই প্রণামী বাক্সও। তারপর ছোট কালি মন্দিরে গিয়েও একই ঘটনার সম্মুখীন হন তাঁরা।
মুহূর্তের মধ্যে এই চুরির খবর ছড়িয়ে যায় গ্রামে। খবর চাউর হতেই এলাকায় উত্তেজনা শুরু হয়। সকাল থেকেই রানীগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীদের অভিযোগ পুলিশি গাফিলতির ফলেই এত বড় ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের তরফে রাতে মন্দির পাহারার জন্য দু’জন সিভিক ভলেন্টিয়ার নিয়োগ করা হয়েছিল। তারপরেও কীভাবে এই চুরির ঘটনা ঘটল, সেই নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন গ্রামবাসীরা। মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের তরফে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে সদাইপুর থানায়।
সিদ্ধেশ্বরী মা কালী মন্দির বোর্ডের সেবাইত দেবীদাস আচার্য্য অভিযোগ করে বলেছেন, কালীপুজো উপলক্ষ্যে দুই বিগ্রহকে বিপুল পরিমাণ সোনার গয়না দিয়ে সাজানো হয়। কালীপুজোর দিন থেকে প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় পর্যন্ত সেই গয়না থাকে। নিরঞ্জনের আগে তা খুলে নেওয়া হয়। কালীপুজো উপলক্ষ্যে মন্দিরের সামনে মেলা বসে। বুধবার সেখানে বাউল গানের আসরও ছিল। অনেক রাত পর্যন্তই চলছিল সেই অনুষ্ঠান। রাত ১ টা নাগাদ সদাইপুর থানার ওসি এসে অনুষ্ঠান বন্ধ করতে চাপ দেন। সেইসঙ্গে মেলার স্টলগুলোকেও বন্ধ করে দিতে বলেন। এই নিয়ে মেলা কমিটির লোকেদের সঙ্গে ওসি’র সামান্য বচসাও হয়।
অনুষ্ঠান ও দোকান পাঠ বন্ধ করে বাড়ি চলে যাওয়ার পরেই রাত ২ টো থেকে ৪ টের মধ্যে এই দুই মন্দিরে চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দেবীদাস আচার্য্য। কারণ ভোরবেলাতেই মন্দিরে প্রণাম করতে এসে গ্রামবাসীরা এই চুরির ঘটনা লক্ষ্য করেছেন। দুষ্কৃতীদের সুবিধা করে দেওয়ার জন্যেই কী ওসি অনুষ্ঠান বন্ধ করার চাপ দিচ্ছিলেন? অভিযোগ গ্রামবাসীদের। গ্রামবাসীরা দাবি জানান, অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করে চুরি যাওয়া গয়না ফেরত আনতে হবে।
চুরির প্রতিবাদে গ্রামের মহিলারা ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর বসে পড়েন। ফলে রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে সিউড়ি থেকে যায় বিশাল পুলিশ বাহিনী। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। রাস্তার মধ্যে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। সেইসঙ্গে ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়িতেও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের তরফে মাইকিং করে জানানো হয়, এই ঘটনার কিনারা করা জন্য একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। শিগগির চুরির কিনারা করে নেবেন তাঁরা। পুলিশ সূত্রে খবর, সদাইপুর থানার ওসি রব খানকে তাঁর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাসপেন্ড করা হয়েছে দুই সিভিক ভলেন্টিয়ারকেও।
পুলিশের প্রতিশ্রুতি পেয়ে প্রায় ৫ ঘণ্টা পর উঠল অবরোধ। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের বিশেষ দল।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*