মাঝেরহাটে ব্রিজ ভেঙে পড়ার প্রহরমাত্র পরেই পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের দিকে। তাঁদের বক্তব্য, মেট্রো রেলের পাইলিংয়ের কাজের জন্যই দুর্বল হয়ে পড়েছিল মাঝেরহাট ব্রিজ।
কিন্তু তেরাত্তির পার হওয়ার খুঁড়তে খুঁড়তে এখন বেরিয়ে এল অন্য কিছু। মেট্রো রেল নয়, গাফিলতির অভিযোগ উঠল খোদ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। এবং তার সপক্ষে প্রমাণ হিসাবে পুর দফতরের অধীনস্থ সংস্থা কেএমডিএ-কে লেখা একটি চিঠি শুক্রবার ফাঁস করে দিল পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ।
পূর্ব রেলের শিয়ালদহ শাখার ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার সুজিত কুমার। চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, ২১ জুলাই তাঁরা শিয়ালদহ-বজবজ শাখায় মাঝেরহাট স্টেশনের কাছে রেল ওভার ব্রিজ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। ওই ওভারব্রিজের দু’দিকে রিইনফোর্সড সিমেন্ট কংক্রিট (আরসিসি) বিম রয়েছে। যেগুলি জলের পাইপ, বিদ্যুতের তার ও যোগাযোগের তার বহন করে। একটি আরসিসি বিম জর্জর হয়ে পড়ায় সেটিকে ইতিমধ্যে বদলে ইস্পাতের বিম লাগানো হয়েছে। কিন্তু অন্য আরসিসি বিমগুলি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বদলানো দরকার। এ ব্যাপারে কেএমডিএ কী প্রস্তুতি নিচ্ছে তা জানান। সেই সঙ্গে রেলকে ট্রাফিক এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
শুধু তাই নয়, ওই চিঠিতে বলা হয়েছে মোমিনপুরের দিকে ব্রিজটি দৃশ্যত দুর্বল হয়ে পড়েছে, এবং বিচ্যুতি পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। ফলে কেএমডিএ-র তরফে দ্রুত ইনস্পেকশন এবং ব্যবস্থা জরুরি।
পূর্ব রেলের এই চিঠি নিয়ে পুর দফতরের তরফে এ দিন কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। কেএমডিএ-র অফিসার বলেন, মাঝেরহাটের ব্রিজ ভেঙে পড়ার ঘটনায় হাইপাওয়ার কমিটি তদন্ত করছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় মুখ্যসচিব মলয় দে এ ব্যাপারে বৈঠকও ডেকেছিলেন। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কোনও মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
প্রসঙ্গত, মাঝেরহাটে ব্রিজ ভেঙে পড়ার দিনই মেট্রো রেলের নির্মাণকারী সংস্থা রেল বিকাশ নিগম লিমিটেডের তরফেও একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছিল। ওই বিবৃতিতে রেল মন্ত্রকের অধীনস্থ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা আরভিএনএলের চিফ প্রজেক্ট ম্যানেজার দাবি করেছিলেন, জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রো রেলের সম্প্রসারণের কাজের জন্য মাঝেরহাট ব্রিজের ক্ষতি হয়নি। মেট্রো রেলের পাইলিংয়ের কাজ এক বছর আগে শেষ হয়ে গেছে। বরং তিনিও প্রকারান্তরে রাজ্যের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, মাঝেরহাট ব্রিজের মাঝে ৪০ মিটার আরসিসি গার্ডার রয়েছে। যা অনেক পুরনো। সেটি দুর্বল হয়ে পড়ার কারণেই সম্ভবত ব্রিজটি ভেঙে পড়েছিল।
পর্যবেক্ষকদের মতে, ব্রিজ ভাঙার মধ্যে এখন পুরোদস্তুর কেন্দ্র-রাজ্য রাজনীতি ঢুকে পড়েছে। ফলে এ ওর ঘাড়ে দোষ দিচ্ছে, ও এর মাথায় অভিযোগ চাপাচ্ছে। বরং আসল যেটা জরুরি তা হল কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়। মাঝেরহাট ব্রিজটি শিয়ালদহ-বজবজ রেল লাইনের উপর দিয়ে গিয়েছে। ফলে কেন্দ্র রাজ্য হাতে হাত মিলিয়ে ব্রিজটির ভেঙে পড়া অংশ দ্রুত গড়ে তোলা সাধারণ মানুষের স্বার্থে জরুরি। চাপানউতোর করে আখেরে আম জনতার কোনও উপকার হচ্ছে না।
Be the first to comment