মাঝেরহাটের বিপর্যয়ের পর তখনও ঘণ্টা খানেকও কাটেনি, অকুস্থলে গিয়ে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। প্রথমে তিনি এবং পরবর্তী কালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিত করেছিলেন, মেট্রো রেলের কাজের জন্যই নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল মাঝেরহাট ব্রিজ।
নবান্ন ও বাংলার শাসক দলের বক্তব্য, মাঝেরহাট ব্রিজের পাশেই জোকা-ধর্মতলা মেট্রো লাইনের পাইলিংয়ের কাজ হচ্ছিল। তাতেই চার দশকের পুরনো এই ব্রিজের ক্ষতি হয়েছে।
কোনওরকম তদন্ত না করেই রাজ্য সরকারের তরফে যখন এমন অভিযোগ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে, তখন পাল্টা বিবৃতি প্রকাশ করল রেলমন্ত্রকও। জোকা-ধর্মতলা মেট্রো রেল পথের নির্মাণ করছে রেলমন্ত্রকের অধীনস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড (আরভিএনএল)। মঙ্গলবার রাতেই আরভিএনএলের তরফে চিফ প্রোজেক্ট ম্যানেজার এ কে রায় বিবৃতি দিয়ে বলেন, “মেট্রোর কাজের সঙ্গে এই দুর্ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই। মাঝেরহাট ব্রিজের সাড়ে চার মিটার দূরে মেট্রো রেল ওভার ব্রিজের ভিত রয়েছে। কিন্তু সেই কাজ এক বছর আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে।”
আরভিএনএল কর্তার কথায়, মাঝেরহাট ব্রিজ মাঝখান থেকে ভেঙেছে। ব্রিজের আরসিসি গার্ডার ছিল অনেক পুরনো এবং চল্লিশ মিটারেরও বেশি লম্বা। দেখা যাবে ব্রিজের দু’দিকের ভিত ঠিকই রয়েছে। গার্ডার দুর্বল ছিল বলেই ভেঙে পড়েছে ব্রিজটি।
যার অর্থ রেল কর্তৃপক্ষ বুঝিয়ে দিয়েছে, রাজ্য সরকার ব্রিজের মেরামতি করেনি বলেই তা বেহাল হয়ে পড়েছিল। অনেকের মতে, ব্রিজ ভাঙার ঘটনা নিয়ে রাজ্য সরকার কেন্দ্রের উপর দায় ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করায়, রেল মন্ত্রক তথা কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আরভিএনএল-কে দিয়ে এই বিবৃতি প্রকাশ করেছে।
পূর্ব রেলের তরফেও একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে শিয়ালদহ-বজবজ শাখায় অনির্দিষ্টকাল ট্রেন বন্ধ থাকার কথা ঘোষণা করার পাশাপাশি জানিয়ে দেওয়া হয়, এই দুর্ঘটনার সঙ্গে রেল প্রকল্পের কোনও কাজের সম্পর্ক নেই।
দু পক্ষের এই চাপানউতোরের মধ্যেই এমন একটি নতুন তথ্য উঠে এসেছে যা তৃণমূল সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। আড়াই বছর আগে পোস্তায় বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভেঙে পড়েছিল। সেই সময় সরকার জানিয়েছিল, রাজ্যের সমস্ত উড়ালপুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে জরুরি ভিত্তিতে রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। ওই স্বাস্থ্য পরীক্ষায় মাঝেরহাট ব্রিজকে ‘ফিট সার্টিফিকেট’ দিয়েছিল পূর্ত দফতর। সেই রিপোর্টের কথা মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর জানাজানি হয়ে যায়। পূর্ত দফতরের কাজে ঘরোয়া মহলে মুখ্যমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করেন বলে খবর। এ ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এই সক্রিয়তা সত্ত্বেও প্রশ্ন ওঠা বন্ধ হচ্ছে না। এ প্রশ্নও উঠছে যে, মেট্রোর কাজের জন্য উড়ালপুলের ক্ষতি হচ্ছে, এটা কি মঙ্গলবারই জানতে পারল রাজ্য সরকার? এ কথা আগে কেন বোঝেনি এবং রেলমন্ত্রককে জানায়নি নবান্ন?
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, তৃণমূলের কপাল ভাল মাঝেরহাট কাণ্ডে হতাহতের সংখ্যা কম। নইলে আরও বড় বিপদে পড়তে হত তৃণমূলকে। এখনও যে গোটা ব্যাপারটার মীমাংসা হয়ে গিয়েছে তা নয়। আদতে দায় কার, তা নিয়ে আপাতত চাপানউতোর চলবে।
Be the first to comment