একহাতে ক্রাচ, অন্য হাতে ভাইকে ধরে মঞ্চে

Spread the love
একহাতে ক্রাচ, অন্য হাতে ভাইকে ধরে মঞ্চে উঠলেন তিনি। শিক্ষক যখন তাঁর হাতে সার্টিফিকেট তুলে দিলেন, করতালিতে ফেটে পড়ছে মঞ্চ। তিনি ‘আফগানিস্তানের মালালা’। নাম ব্রেসনা মুজাজাই। পোলিওতে ছোটবেলা থেকেই এক পা অচল। আরেকটা পা তালিবানদের গুলিতে ক্ষতবিক্ষত। তবে এসবের কিছুই দমাতে পারেনি তাঁকে। কাবুলের আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব আফগানিস্তান থেকে তিনি আইনে স্নাতকের ডিগ্রি পেয়েছেন।
চলতি মাসে ইউনিসেফের এক হিসেবে বলা হয়, আফগানিস্তানে ৭ থেকে ১৭ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের অর্ধেক স্কুলে যায় না। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই মেয়ে। এমনকি সরকার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতেও স্কুল শেষ করে মেয়েদের কলেজে যাওয়ার হার খুব কম। অনেক রক্ষণশীল পরিবারই বয়ঃসন্ধির পর মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার চেয়ে বিয়ে দেওয়াকে উপযুক্ত মনে করে।
তালিবান হুমকির মুখে সম্প্রতি দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় নানগাহার প্রদেশে মেয়েদের প্রায় ৮০টি স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমন সমাজে ব্রেসনার লড়াই এখন সবার মুখে মুখে। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম ব্রেসনার। বাবা সালেহ মোহাম্মদ মালাংয়ের স্বপ্ন ছিল মেয়ে শিক্ষিত হবে। অস্থিরতার হাত থেকে বাঁচতে ব্রেসনার জন্মের আগেই তাঁর পরিবার পাকিস্তানে চলে যায়। ব্রেসনা সেখানেই তাঁর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন। পাশাপাশি ইংরেজি ভাষা ও কম্পিউটারেও দক্ষ হয়ে ওঠেন। ২০১১ সালে আফগানিস্তানে ফিরে আসেন ব্রেসনারা। ভর্তি হন আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে আইন বিষয়ে।
পোলিওর জন্য অচল পা নিয়ে হাঁটতে খুব কষ্ট হয় ব্রেসনার। তাঁদের বাড়িটি ছয়তলায়। লিফট নেই। প্রতিদিন তিনি সিঁড়ি ভাঙেন। শরীর টেনে তুলতে তুলতে কখনও কখনও বমি হয়ে যায় তাঁর। পিঠ, পা ও মাথায় তীব্র ব্যথা হয়। ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট ক্যাম্পাসের মসজিদে বিকেলে নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তালেবানেরা হামলা চালায়। কাছের একটি বাড়িতে আশ্রয় নিতে আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু অন্যদের মতো ছুটতে পারছিলেন না। মাঝপথে পুলিশের পোশাকে থাকা এক জঙ্গি তাঁর পায়ে গুলি করে। খাড়া অবস্থা থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। এরপর ওই দুর্বৃত্ত আবারও গুলি করে ব্রেসনাকে। তীব্র ব্যথা নিয়ে মড়ার মতো প্রায় ছয় ঘণ্টা পড়ে ছিলেন তিনি, যাতে কোনোভাবেই সন্ত্রাসীরা টের না পায় তিনি বেঁচে আছেন।
মধ্যরাতে পুলিশ যখন তাঁকে উদ্ধার করে তখন তাঁর এক পা ভাঙা আর দুই হাঁটু গুলিবিদ্ধ। প্রায় এক বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারেননি ব্রেসনা। হাঁটতে পারতেন না। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করতে হতো। সিঁড়ি ভাঙতে হলে ভাইয়ের কোলে চেপে। শরীর যতটা না জখম হয়েছে, তার চেয়ে বেশি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন ব্রেসনা।
ব্রেসনা বলেন, ‘প্রতিটি দিন আমার ভয়ে কাটত। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে আমি খুব ভয়ে থাকতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরটা বেশ নিরাপদ হলেও মনে হতো, আবারও যদি এমন হয়, কীভাবে বাঁচব, কী করব।’

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*