ধর্ষণ করে খুন নয় বরং পরকীয়ার জেরেই খুন করা হয়েছিল যুবতিকে। মালদার ধানতলা থেকে যুবতির দগ্ধ দেহ উদ্ধারের পর পুলিশের তদন্তে এই তথ্য সামনে এসেছে। বুধবার মৃত যুবতির দেহ শনাক্ত করে পরিবার। তিনি শিলিগুড়ির বাসিন্দা ছিলেন। ঘটনায় এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর নাম বাপন ঘোষ। তাঁকে জেরা করেই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের বিষয়টি সামনে আসে। ১৪ দিনের পুলিশ হেপাজতের আবেদনের জানিয়ে ধৃতকে আগামীকাল মালদা জেলা আদালতে পেশ করা হবে। আটক করা হয়েছে অভিযুক্ত যুবকের স্ত্রীকেও।
প্রসঙ্গত, ৫ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) ইংরেজবাজার ব্লকের কোতয়ালি পঞ্চায়েতের ধানতলা গ্রামে আমবাগান থেকে উদ্ধার হয় এক যুবতির অগ্নিদগ্ধ দেহ ৷ যুবতির মুখ বিকৃত থাকায় তাঁর পরিচয় জানতে পারছিল না পুলিশ। যুবতির পরিচয় জানতে সোশাল মিডিয়ার সাহায্য নেয় পুলিশ। সংবাদপত্রেও বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় ৷ দেশের প্রতিটি থানাতেও পাঠানো হয় সেই তথ্য ৷ তারই ভিত্তিতে মঙ্গলবার ওই যুবতির পরিবারের খোঁজ পায় মালদা পুলিশ ৷ গতকাল নিউ জলপাইগুড়ি থানায় ওই যুবতির মিসিং ডায়েরি করতে গিয়েছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা ৷ তখনই মালদা থানা থেকে পাঠানো ওই যুবতির দেহের বিভিন্ন অংশ ও অলঙ্কারের ছবি দেখে তা শনাক্ত করেন পরিবারের সদস্যরা ৷ তাঁদের মালদায় নিয়ে আসা হয় ৷ পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে গত রাতে আটক করা হয় বাপনকে ৷ পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার মালদা মেডিকেলের মর্গে যুবতির দেহ শনাক্ত করে পরিবার ৷
জানা গিয়েছে মৃত যুবতির নাম ঝুমা দে (২৫) ৷ শিলিগুড়ির অম্বিকানগর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন ৷ কয়েক বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়েছিল অম্বিকানগরের শান্তিপাড়ার বাসিন্দা মুন্নার সঙ্গে ৷ তাঁদের দুই সন্তানও রয়েছে ৷ যদিও পরে ঝুমা ও মুন্নার মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ঝুমার বাবা মুকুল দে বর্তমানে কোচবিহারে থাকেন ৷
পরিবার সূত্রে খবর, ২ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ঝুমা ৷ সেইসময় তিনি এক বন্ধুকে জানান, মালদায় ছোটনের সঙ্গে দেখা করতে আসছেন তিনি ৷ ছোটনেরই ভালো নাম বাপন ৷ আগে সে ইংরেজবাজারের মিলকি এলাকায় থাকত। তবে পরবর্তীতে সে কোতয়ালি পঞ্চায়েতের শাহজালালপুর গ্রামে তারা কালী মোড়ে থাকত ৷ ৪ বছর আগে ভূতনির চরের বাসিন্দা টুম্পা ঘোষের সঙ্গে ছোটনের বিয়ে হয় ৷ তাদেরও দুই সন্তান রয়েছে। বছর তিনেক আগে সে শিলিগুড়িতে একটি পপকর্ন কারখানায় কাজে যোগ দেন। সেখানে কাজ করতেন ঝুমাও ৷ তখন থেকেই তাদের মধ্যে পরিচয় ৷ সেই পরিচয় থেকেই শুরু হয় প্রেম। দু’জনের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও ছিল বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
যদিও বর্তমানে ছোটন সেই কারখানায় কাজ করে না ৷ ইদানিং সে দুধের ব্যবসা করত ৷ মাঝেমধ্যেই তার সঙ্গে দেখা করতে মালদায় আসতেন ঝুমা ৷ হোটেলে দু-একদিন কাটিয়ে বাড়ি ফিরে যেতেন ৷ কিন্তু এবার ১০ দিন হয়ে গেলেও শিলিগুড়ি ফেরেননি ঝুমা ৷
পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, আজ পরিবারের লোকজন মৃতের দেহ শনাক্ত করেছে ৷ ঝুমার সঙ্গে ছোটনের ২ বছর ধরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল ৷ আমরা সেই যুবককে গ্রেপ্তার করেছি ৷ ছোটনের সঙ্গে দেখা করতে ঝুমা এর আগেও মালদায় এসেছেন ৷ ২ ডিসেম্বর ঝুমা ট্রেনে মালদায় আসেন ৷ স্টেশন থেকে ছোটনই তাঁকে নিয়ে যায় ৷ এরপরেই খুনের ঘটনা ঘটে ৷ এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷
প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, ঝুমা সম্প্রতি ছোটনকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন ৷ এ নিয়ে ছোটনের পরিবারে অশান্তি শুরু হয়েছিল ৷ দুই নারীর মধ্যে পড়েই ছোটন এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আপাতত আমাদের ধারণা ৷ খুনের আগে ঝুমাকে ধর্ষণের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ যে জায়গা থেকে মৃতদেহটি উদ্ধার হয়েছিল সেখান থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যেই ছোটনের বাড়ি ৷ বাগানের ভিতর দিয়ে দুই জায়গায় যাতায়াতের রাস্তা রয়েছে ৷ পরিচয় লোপাট করতে মৃতার চেহারা বিকৃত করার জন্যই শ্বাসরোধ করে খুনের পর দেহটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ৷ এ নিয়ে আরও তদন্তের প্রয়োজন৷ ছোটনের স্ত্রীকেও আপাতত আটক করা হয়েছে ৷ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে । ওই এলাকার CCTV ফুটেজ থেকেও কিছু তথ্য পাওয়া গেছে ৷
Be the first to comment